Main Menu

চীনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ আনলো যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্কঃ  করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও এর প্রতিরোধে কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে অন্য দেশগুলোর মতোই বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে দেশটির গবেষকদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও রয়েছে। এই অবস্থায় ভ্যাকসিন সম্পর্কিত তথ্য চীন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আজ সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) জানিয়েছে, চীনা হ্যাকার ও গুপ্তচরেরা ভ্যাকসিন সম্পর্কিত মার্কিন গবেষণার তথ্য চুরির চেষ্টা করছে। ডিএইচএস ও এফবিআই এ বিষয়ে একটি সতর্কতা জারির বিষয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি সাইবার হামলা ও চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে জানিয়ে তারা বলে, এই কাজ তারাই করছে, যারা এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে লাভবান হতে চাইছে।

সম্প্রতি ইসরায়েল অভিযোগ তুলেছিল যে, ইরান গত মাসের শেষ দিকে ইসরায়েলের কিছু অঞ্চলের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল করে দিয়েছিল। এতে ঘরবন্দী ইসরায়েলিরা ভীষণ বিপদে পড়ে। ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এমন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। এই অভিযোগ উত্থাপনের পরপরই চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগটি সামনে এল।

এদিকে একই সময়ে কিছু বেসরকারি সংস্থা জানাচ্ছে যে, এক ডজনেরও বেশি দেশ এই সময়ে এসে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছে। বিশেষত হ্যাকারদের সক্রিয় করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য অন্য দেশের মহামারি মোকাবিলা সম্পর্কিত তথ্য ও এ সম্পর্কিত গবেষণা সংগ্রহ। মার্কিন মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশও হঠাৎ করে ভাইরাস-সংশ্লিষ্ট তথ্য জোগাড় করার কাজে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা হ্যাকারদের নিযুক্ত করেছে।

চীনের বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ এনে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করতে এরই মধ্যে একটি খসড়াও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন, চিকিৎসা ও এর পরীক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে চীন। এমনকি মেধাস্বত্ব আইনের আওতায় পড়ে এমন গবেষণালব্ধ জ্ঞানকেও লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। এ জন্য চীন অপ্রথাগত পন্থায় গবেষক, শিক্ষার্থীসহ নানা ধরনের ব্যক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে সাইবার হামলার মাধ্যমে কিংবা অপ্রচলিত এসব পন্থায় বিশ্ববিদ্যালয় বা বেসরকারি সংস্থার গবেষণাগার থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার।

ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে হ্যাকিং দল পরিচালনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তোলার সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে দেশটির কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার কৌশলও। এ ধরনের কৌশলের সঙ্গে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার কমান্ডের পাশাপাশি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিও যুক্ত থাকে। দু বছর আগেই দেওয়া এ সম্পর্কিত এক নির্দেশে ট্রাম্প এ সংস্থাগুলোকে চীনের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের গভীরে অনুপ্রবেশসহ অন্য সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কেও হানা দেওয়ার অনুমতি দিয়ে রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর পাল্টা কোনো সাইবার হামলা করছে কিনা, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। নাকি এটি মহামারির কারণ হিসেবে বিশ্বের সামনে চীনকে হাজির করার লক্ষ্যে গত কিছুদিন ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের যে চেষ্টা, তারই ধারাবাহিকতা, তাও এখনো নিশ্চিত নয় বলে উল্লেখ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।

এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠান সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক ক্রিস্টোফার ক্রেবস বলেন, ‘সাইবার জগতে চীনের নেতিবাচক আচরণের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তাই এটা হতেই পারে। আর তেমনটি হলে তার প্রতিরোধও সবাইকে নিয়ে করতে হবে।’

অবশ্য এবার চীনের নাম বলা হলেও গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এক যৌথ সতর্ক বার্তায় স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। ওই সতর্ক বার্তায় কোনো দেশের নাম অবশ্য উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইঙ্গিতটি সুস্পষ্টভাবেই ছিল চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার দিকে।

এদিকে ইরানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে যে, তাদের হ্যাকাররা রেমডেসিভিরের আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠান গিলিয়েডে হানা দিয়েছিল। তবে এই হামলা সফল হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে কোম্পানি ও মার্কিন সরকার দু পক্ষই চুপ রয়েছে।

এই গুপ্তচরবৃত্তির প্রসঙ্গটি নতুন করে আলোচনায় আসছে। এমনকি শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলাপ হচ্ছে। বিশেষত গত কয়েক মাস ধরে এফবিআইয়ের এজেন্টরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যেভাবে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, তাতে এ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা বেশ জাঁকিয়ে বসছে। বিষয়টি আরও জোরালো হয়েছে গত মাসে যখন আরাকানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা ও ডিগ্রি নেওয়া চীনা নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই চীনে পাঠাচ্ছে, সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে থেকে কাজ করবার জন্য; তখন এ ধরনের আলাপের পালে জোর হাওয়া লাগে।

এদিকে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্যি সত্যি চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে থাকা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য হাতিয়ে নিতে গত কয়েক সপ্তাহে ভিয়েতনামের হ্যাকাররা চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যাকাররা টার্গেট করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও উত্তর কোরিয়াকে। এসব অভিযোগ সত্য হলে এত দিন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে শত্রু-মিত্রের সমীকরণ ছিল, তা আর এখন নেই বলতে হবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *