Main Menu

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম আর নেই

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (৭৮) আর নেই।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সুজেয় শ্যাম মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে জানান তার মেয়ে রুপা মঞ্জুরী শ্যাম।

দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি তার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়। পরে প্রবীণ এই শিল্পীর শরীরের ভেতরে সংক্রমণ হয় এবং তা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ডায়াবেটিসও ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কিডনির সমস্যাও ছিল।

সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী এবং ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামে একটি চা বাগানের মালিক। তার শৈশব কেটেছে সিলেটের চা বাগান আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি এলাকায়। ১০ ভাইবোনের মধ্যে সুজেয় ষষ্ঠ। সঙ্গীতে আগ্রহ জন্মায় সকালে প্রার্থনা সঙ্গীত শুনে। তাছাড়া তার ছোট বোন ও ভাই বেতারে গান গাইতেন। তার মা-বাবাও ছিলেন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী।

সুজেয় শ্যাম একজন গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে যোগদান করেন। পরে বড়দের অনুষ্ঠান পরিচালনা শুর করলেও ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বেতারে চাকরি ছেড়ে ঢাকা বেতারে যোগ দেন।

১৯৬৯ সালে সঙ্গীত পরিচালক রাজা হোসেনের সাথে পরিচিত হন এবং একত্রে রাজা-শ্যাম নামে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। সত্তর-আশি দশকে তারা একত্রে সূর্য গ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম, ভুল যখন ভাঙ্গলসহ পঁচিশটি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সূর্য গ্রহণ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে অর্জন করেন বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার।

একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন এই খ্যাতিমান সুরকার। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ঘোষণার পর শহীদুল হক খান রচিত তার সুরকৃত ও তার কণ্ঠে ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারে বেজে উঠেছিল। অজিত রায় ছিলেন গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী।

তিনি ১৯৮৬ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত বলবান ও অবাঞ্ছিত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এককভাবে সঙ্গীত পরিচালন শুরু করেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি টুনাটুনি অডিও নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।

একবিংশ শতকের প্রথমে হাছন রাজাকে নিয়ে নির্মিত হাছন রাজা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে লাভ করেন প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের বিশেষ অনুরোধে এই চলচ্চিত্রের একটি গানেও কণ্ঠ দেন তিনি। পরবর্তীতে জয়যাত্রা ও অবুঝ বউ চলচ্চিত্রের গানের সঙ্গীত পরিচালনা করে যথাক্রমে ২০০৪ ও ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ সালে একাত্তরের ক্ষুদিরাম ও একাত্তরের মা জননী নামে দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন সুজেয় শ্যাম। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ একুশে পদক এবং ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ২০০৬ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান শিরোনামের একটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২ নামে আরেকটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন তিনি।

সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’ উল্লেখযোগ্য।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *