শুরু হলো দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা
ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিনই নানান আয়োজনে চলবে পূজা উৎসব। পঞ্জিকা মতে, বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের এ মহোৎসব।
শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টায় সায়ানকালে কল্পারম্ভ ও বোধন আমন্ত্রণসহ অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়। এদিন সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত ছিল দেশের ৩২ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপ। শঙ্খ ধ্বনি, ধূপের সুঘ্রাণ, আর ঢাক-ঢোলের বাদ্যের সঙ্গে ভক্তি-মন্ত্রে মেতে ওঠেন দেবী ভক্তরা।
এবার পঞ্জিকা মতে দেবীর গজে (হাতিতে) আগমন আর নৌকায় গমন। খড়গ-কৃপাণ, চক্র, গদা, তীর-ধনুক, ত্রিশূল আর কল্যাণ নিয়ে উপস্থিত হবেন এবং মহিষাসুর বধ করে হেসে উঠবেন দেবী।
বোধন মানে জাগ্রত করা বা জাগানো। বোধন হয় বেল গাছের তলায়। দেবতারাও বেল গাছের তলায় বোধন করেছিলেন, এ গাছের অন্য নাম শ্রীবৃক্ষ। শ্রী অর্থ সম্পদ বা সৌন্দর্য। তাই পুরোহিতরা সম্পদ বা সৌন্দর্য বা সংসারের উন্নতির জন্য, জ্ঞান ভক্তি লাভের জন্য বেল গাছের মূলে দুর্গাপূজার বোধন করেন। বোধনে ঘট স্থাপন করা হয়। ঘট হল হৃদয়ের প্রতীক। ঘটের জলে যেমন প্রতিবিম্ব পড়ে, সেরকম ভক্তের হৃদয়েও মায়ের ভাব বা স্বরূপের ধারণা হয়। সেই ধারণা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি হয়।
হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল; কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজা প্রচলন হয়ে যায়। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন ‘খের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা’। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এবার দেবী বিদায় নিবেন নৌকায়।
এদিন সকালে ষষ্ঠী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পুরোহিত প্রণব চ্যাটার্জি পূজা পরিচালনা করেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমেই পাঁচদিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে সারা ঢাকা শহরে ২৪২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনাকালে দুই বছর সীমিত আকারে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়েছে। দুই বছর পর আবারও অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে পালন করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি এদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেই মূল্যবোধ নিয়ে দেশকে মুক্ত করেছেন আমরা মায়ের কাছে সেই প্রার্থনাই করবো এদেশ থেকে যেন সব অপশক্তির বিলোপ ঘটে শুভ শক্তির উদয় হবে।
এদিন সকালে চণ্ডিপাঠে মুখরিত ছিল রমনা কালী মন্দিরের পূজামণ্ডপও। বাংলা ট্রিবিউনের ঢাবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ষষ্ঠী পূজার আনুষ্ঠানিকতা সাড়েন রমনা কালী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হরি চাঁদ চক্রবর্তী।
পূজা শেষে তিনি বলেন, ‘সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। আজ ষষ্ঠী পূজা, আজকে বিল্লু বৃক্ষের নিচে মাকে ষষ্ঠাধী কল্পারম্ভ, ষষ্ঠীবিহিত পূজা আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। আজকে আমাদের এই মন্দিরের আঙিনায় মাকে স্থাপন করা হয়েছে। আগামীকাল বিল্লু বৃক্ষের নিচে মাকে স্নান করে মন্দিরে স্থাপন করবো।’
ষষ্ঠী পূজা সম্পন্নের মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজ দিনরাত মা এখানে থাকবেন। আজ ষষ্ঠীধীকল্পে মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা, মা তুমি বিশ্বের সকল জীবের শান্তি দাও। সবাইকে তুমি ভালো রাখো, সুস্থ রাখো।’
সৃষ্টের পালন ও দুষ্টের দমন এই প্রার্থনা মায়ের কাছে- উল্লেখ করেন পুরোহিত হরি চাঁদ চক্রবর্তী।
Related News
বায়তুল মুকাররম মসজিদে নতুন খতিব নিয়োগ
দেশবরেণ্য ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ ও হাদিস বিশারদ আল্লামা মুফতি আবদুল মালেককে (হাফি.) বায়তুল মুকাররম জাতীয়Read More
মুখ খুললেন, যে কারণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন সারা
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী ও সঞ্চালক সারা আরফিন খান। অভিনেতা আরফিন খানকে বিয়েরRead More