Main Menu

ঘাবড়ানোর কিছু নেই, প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পুরো সিলেট অঞ্চল পরপর তিনবার বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই বন্যাই শেষ নয়। কাজেই বন্যা মোকাবেলায় আমাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’ দেশের মাঝামাঝি অংশে বাংলা শ্রাবণ মাসে এবং দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসে বন্যা হতে পারে। এবার বড় বন্যা আসবে আগেই আন্দাজ করা গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সিলেট সার্কিট হাউসে মঙ্গলবার সিলেট বিভাগের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী যে কোন দুর্যোগে যাতায়াতের সুবিধার্থে হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের মতো হাওরবেষ্টিত এলাকায় রাস্তার মাটি ভরাটের পরিবর্তে উড়াল সড়ক নির্মিত হলে রাস্তা সহজে নষ্ট হবে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সহজে গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহন সহজতর হবে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কুশিয়ারা নদীর ড্রেজিং এবং নাব্যতা বৃদ্ধি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষায় তিনি একবারের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পক্ষে। কিন্তু নদীর নাব্যতা নিশ্চিত করতে বছর বছর সেখানে রক্ষণাবেক্ষন ড্রেজিং করতে হবে।

বন্যা এলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সব সময় এ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে বসবাস করতে হবে-এ ধরণের মানসিকতা থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বৃহত্তর সিলেট জেলার অধিকাংশ বাড়ি ঘরের সামনেই বড় বড় ড্রেন এবং বিল ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সে ধরনের কোন ড্রেন বা জলাশয় এখন আর নেই বরং জায়গাগুলো বিভিন্ন বাড়ি-ঘর ও স্থাপনায় দখল হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের অবস্থাও এই সিলেটের মতোই।

তিনি এই অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় যে কোনভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন এবং বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্যালাইন বিতরণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করে।

তিনি বলেন, ‘এটা মাথায় রেখেই আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাতে হবে।’

বন্যার সময় খাদ্যের গুদামে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে এবং খাদ্য ভান্ডার থেকে যাতে সহজে পরিবহন করা যায় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

বন্যার সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঝড় ও বন্যার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় মূলত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর মতো নতুন কোনো দুর্যোগ এড়াতে।

পানি নামতে শুরু করলে ডায়রিয়া ও জ্বরের মতো সংক্রামক রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সিলেট অঞ্চলের পুরো বন্যা কবলিত এলাকা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি বন্যার সময় নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে ল্যান্ড ফোন লাইনগুলো সক্রিয় রাখতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে।

তিনি বলেন, ‘সরকার বা বিরোধী দল যেখানেই আওয়ামী লীগ থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সর্বদা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনো দুর্যোগে আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি এবং মানুষকে আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব।’

তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ অন্যদের তুলনায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে যাবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ, তারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যান, যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেননি এবং ওই এলাকার ছবি তাঁকে পাঠিয়েছেন যা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করেছে।

‘সেই ছবি আমি সেনাপ্রধান, আমাদের অফিস, বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে,’ বলেন তিনি।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ লাখ ১৪ হাজারে বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

এছাড়া, বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩শ’ টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে ।
অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হেচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন।
১৯৯৮ সালের বন্যার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা সহজে এসব খাবার কয়েকদিন সংরক্ষণে রেখে খেতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সোমবার তিনি জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে তার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা হস্তান্তর করেন এবং পরে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী ও বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বন্যা দুর্গত এলাকায় সময় মতো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান।
তথ্য ও সম্পচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পনি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, সিনিয়র পানি সম্পদ সচিব কবীর বিন আনোয়ার এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্ম সংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সার্কিট হাউসে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ সার্কিট হাউসে উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ, সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি শামীম), সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ সভায় বক্তব্য রাখেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *