Main Menu

সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের ৮৮তম জন্মদিন আজ

ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ৮৮ তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় পুত্র তিনি। তাঁর মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকুরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) এ যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব্ পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। তিনি পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চীফ ও উপ-সচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিক, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

অর্থনৈতিক কূটনীতিতে মুহিত সবিশেষ পারদর্শী। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি পরিচিত ব্যক্তি। ১৯৭২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন মুহিত। আসার আগেই তাঁর অ্যাপয়ন্টমেন্ট হয়েছিল পরিকল্পনা সচিব হিসেবে। মুহিত পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ডেজিগনেট হিসেবে কাজ করেন তিনমাস। এই সময় বঙ্গবন্ধু তাঁকে দুটি কাজ দেন। একটি ছিল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার জন্য পরিকল্পনা এবং অন্যটি ছিল জেলা প্রশাসনের গণতন্ত্রায়ন। বলা হলো যে, মার্চ মাসের মাঝামাঝি মুহিতকে প্রতিবেদন ও সুপারিশ দিতে হবে। তিনি যথাসময়ে দুটি প্রতিবেদনই পেশ করেন। ১৯৭২ সালের স্বাধীনতা দিবসের বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু এই দুটি কার্যক্রম ঘোষণা করেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া এই সময়ে যেসব বিদেশী মিশন ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনায় আসতো তাদের সঙ্গে আলোচনায় মুহিতকে দায়িত্ব দেওয়া হতো।
১৯৭২ সালে এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনে চলে যান মুহিত। আমেরিকা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশ মিশন হয়ে গেল বাংলাদেশ দূতাবাস। মুহিত সেখানে অর্থনৈতিক মিনিস্টার থাকেন প্রায় দুই বছর। এ সময়ে ১৯৭২ সালে বেশ কিছুদিন তিনি ছিলেন চার্জ দ্য এফেয়ার। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হলেন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, যেখানে ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন নির্বাহী পরিচালক। ১৯৭৩ সালে ডিসেম্বরে সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন। এটি ছিল স্বাধীন বালাদেশে তাঁর প্রথম পদার্পণ। ঢাকায় থাকেন জুন পর্যন্ত।

১৯৭৪ সালে মে মাসে ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়েই হুকুম পেলেন যে, তাঁকে ইসলামী মন্ত্রী সম্মেলনে যেতে হবে কুয়ালালামপুর এবং তারপর ঢাকায় যেতে হবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঢাকা ভ্রমণকালে। ভুট্টোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তাঁকে বাংলাদেশ ডেলিগেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৪-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের মে পর্যন্ত মুহিত ছিলেন ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর। ১৯৭৭ থেকে ৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮২ সালে মার্চ মাসে জেনারেল এরশাদের স্বল্পমেয়াদি নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে মুহিত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৩ মে থেকে হন সবেতন মন্ত্রী। মন্ত্রী থাকাকালীন দুটি বাজেট পেশ করেছিলেন। মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার সময় অনেক দ্বিধাবোধ ছিল তার। সামরিক সরকারের একজন হতে আপত্তি ছিল তাঁর।

১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২-১৯৮৩ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।
লেখক হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত সমান পারদর্শী। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ৩৫ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে (বাপা) তিনি একজন পথিকৃত এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার। স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত ডিজাইনার। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন-যাপন করলেও সরকারের নানা কর্মকান্ডে নীরবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বই পড়ে এবং লেখালেখি করে সময় কাটাচ্ছেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বর্মানে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।






Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *