Main Menu

সবার উপরে মানুষের জীবন: প্রধানমন্ত্রী

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘মনে রাখবেন, সবার উপরে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

ঈদ উদযাপন কোনোভাবেই যেনো নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না উঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বাস দেন, সবাইকে এই রোগের টিকার আওতায় আনা হবে। কারণ, তার সরকার ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহে একাধিক উৎসের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি এটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছে।

তিনি বলেন, এ কারণে কষ্ট হবে জেনেও আমরা বাধ্য হয়েছি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে। দোকান-পাট, শপিংমলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখতে হচ্ছে। একই কারণে, গণপরিবহন চলাচলের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এমনি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে যাবেন না। অনেকের কোন বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় আপনি বুঝতে পারবেন না আপনার পাশের ব্যক্তিটিই করোনাভাইরাস বহন করছে। এরফলে আপনি যেমন করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়বেন, তেমনি আপনার নিকটাত্মীয় বা পাড়াপ্রতিবেশীকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত বছরের মত এ বছরও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। বিত্তবান যারা আছেন বা যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের প্রতি অনুরোধ, এই দুঃসময়ে আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ান। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার সাহায্য হয়তো একটি পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাবে। দেখবেন, তাদের হাসিমুখ আপনার হৃদয়মনকেও পরিপূর্ণ করে তুলবে ঈদের আনন্দে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় কর্তব্য। আমরা যেন এই কর্তব্যকর্ম ভুলে না যাই।

তিনি এ সময় পরার্থে নিজ স্বার্থ বিসর্জনে বিখ্যাত কবি কামিনী রায়ের সুখ কবিতার চারটি পংক্তিও উচ্চারণ করেন-‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসেনি কেউ অবনী ’পরে,/ সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।/’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ কয়েকটি পেশার কর্মীগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে থেকে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যগণ এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ লকডাউন বা চলাচলের বিধিনিষেধ বলবৎ করতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। সংবাদকর্মীগণ সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে সংবাদ পরিবেশনের কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত এক বছরে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে তাঁর সরকার যেমন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে, তেমনি আক্রান্তদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ উদ্যোগও নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে তার সরকার চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছে।

তিনি বলেন, গত মাসে মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটে ২ হাজার শয্যার কোভিড-১৯ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১৬৬ জন ডাক্তার, ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স এবং প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোসহ দেশের ১৩০টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রিয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানের ওপর পুণরায় গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসু বলে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি, যথাসম্ভব ঘনঘন সাবানপানি দিয়ে হাত ধুইয়ে নিন অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানুমুক্ত করুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সেই সাথে সাথে আপনারা নিজেরা গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা টিকার প্রসঙ্গে বলেন, সবচেয়ে কার্যকর এবং পরীক্ষিত অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা’র টিকা দিয়েই গণটিকাকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রপ্তানির উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এমতাবস্থায়, বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাশিয়া এবং চিনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে টিকা ইতোমধ্যেই এসেছে। টিকা পাওয়ার জন্য আমেরিকার কাছেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশ্ব টিকাকরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের কাছ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবে। বিভিন্ন উৎস থেকে ১ কোটি টিকা ক্রয়ের ব্যবস্থা নেয় হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। তাছাড়া, দেশেই টিকা উৎপাদন করতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সকল নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসবো, ইনশাআল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, এই ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। সংক্রমণ এড়াতে লক-ডাউন বা সাধারণ ছুটি বলবৎ করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা গত বছর একটানা দুই মাসেরও বেশি সাধারণ ছুটি বলবৎ করেছিলাম। দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর গত মাসের ৫ তারিখ থেকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এরফলে অগণিত মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিল না। কারণ, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, প্রতিটি দেশেরই স্বাস্থ্য অবকাঠামোর একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে রোগী বাড়তে থাকলে তখন সেবা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনারা দেখেছেন, উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত করোনা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য আমাদের কোনোভাবেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেয়া যাবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

গত বছর করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ২৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার সহায়তা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২১টি খাতে সর্বমোট ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর অনুদান বাবদ ৮ হাজার ২৬০ কোটিরও বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর সাময়িক কর্মহীন ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ৯১২ কোটি ৫০ লাখ দেয়া হয়েছে। এ বছরও সমসংখ্যক মানুষকে একই হারে ৯১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬০৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক, নিম্নআয়ের মানুষ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সেবকগণ, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এসেছেন।

সরকার প্রধান বলেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ/’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী এই গান গেয়ে আমরা স্বাগত জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরকে। আমি বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *