Main Menu

বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা, নদীর প্রতি মানবিক হতে হবে

বাংলাদেশের নদ-নদী প্রাচীন সভ্যতার অংশ। অনেক কিছুর সাক্ষী। নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন উচ্চ আদালত। তাই নদীর প্রতি মানবিক হতে হবে। এই মানবিকতায় শুধু পরিবেশবাদী বা নদীসংগ্রামী ব্যক্তির নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক দলগুলোকে জীবন্ত সত্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

বিশ্ব নদী দিবসকে সামনে রেখে সিলেটে সুরমাতীরে শনিবার আন্তর্জাতিক সংগঠন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘রিভার টকি’ (নদী কথকতা) অনুষ্ঠান থেকে এই আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সিলেট নগরীর কিনব্রিজের নিচে সুরমা নদীর ঐতিহ্যবাহী চাঁদনিঘাটের সিঁড়ির পাশে রিভার টকি অনুষ্ঠান চলে বিকেলে সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।

এবারের নদী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মানুষের জন্য নদী’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সহসভাপতি ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন, স্থপতি সাইকা তাবাসসুম চৌধুরী, গণমাধ্যমকর্মী উজ্জ্বল মেহেদী ও সংস্কৃতিকর্মী অরূপ দাশ।

ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোস্তাফা শাহজামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, সুরমা রিভারকিপার ও বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম। রিভার টকি সঞ্চালনা করেন তামান্না ইসলাম।

সূচনা বক্তৃতায় আবদুল করিম কিম বলেন, বাংলাদেশে নদী দিবস প্রচলন সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। এরপর ২০০৫ সাল থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে।

বিশ্ব নদী দিবসের প্রতিপাদ্য বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত হচ্ছে জানিয়ে আরও বলা হয়, এবারের প্রতিপাদ্য ‘মানুষের জন্য নদী’। সিলেটে ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) দিবসটি উদযাপন করে আসলেও ২০১৪ সাল থেকে নদী অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সভুক্ত সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার দিবসটি উদযাপন করে আসছে। নদ-নদীর প্রতি মানুষের সচেতন থাকা ও দখল-দূষণ থেকে নদীর সুরক্ষায় ‘নদী আমার মা’ স্লোগানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার ধারাবাহিকতায় এবারের দিবস প্রতিপাদ্যে নদীর প্রতি মানুষকে মানবিক হওয়ার আহবান জানানো হয়।

‘রিভার টকি’ আলোচনায় এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর সব সভ্যতা নদীকে কেন্দ্র করে হয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের অতীত ইতিহাস নদনদীতে ভরপুর। কিন্তু আমরা নদীকে সুরক্ষা করতে পারছি না। আমাদের উজানে নদনদীর পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এটা অন্যায়। কিন্তু এই অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না। যৌথ নদীকমিশন ভারতের শিলচরে একটি সভা করার কথা ছিল। সেটি হয়নি, এ জন্য উজান থেকে নেমে আসা নদীর মরুময়তার কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এ জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার।

নদ-নদী রক্ষায় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা।

আ.লীগ নেতা এটিএম হাসান জেবুল বলেন, বর্তমান সরকার পরিবেশকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষা চাই। নদ-নদীর দখল-দূষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সচেতনতায় আমরা কাজ করব। যে কোনো পদক্ষেপে সোচ্চার থাকব আমরা। বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষা শুধু পরিবেশবাদীদের কাজ নয়, সবার কাজ এটি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে। সমস্যা হচ্ছে মানুষের সচেতনতার অভাব। নদ-নদীর প্রতি গণমানুষকে সচেতনতা আগে প্রয়োজন। এ কাজটি রাজনৈতিক দল করতে পারে।

নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা উচ্চ আদালতের একটি যুগান্তকারী রায় উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন বলেন, নদী রক্ষা এখন জীবন রক্ষার নামান্তর। এ জন্য যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করতে হবে। স্থাপতি সাইকা তাবাসসুম চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা তাঁদের যে কোনো স্থাপত্যে নদী চান। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো স্থাপত্যে নদী চাওয়া হয় ন। স্থপতির ভাবনায় নদীকে রাখতে হবে।

গণমাধ্যম কর্মী উজ্জ্বল মেহেদী কোনো দিবসকে সামনে রেখে নয়, বছরজুড়ে নদীর দখল-দূষণ নিয়ে প্রতিবেদন করতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহবান জানান। নদ-নদী শিল্প ও সাহিত্যের একটি অংশ উল্লেখ করে সংস্কৃতিকর্মী অরূপ দাশ বলেন, নদীসচেতনতায় সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে হবে।

সভাপতির বক্তৃতায় ডা. মোস্তাফা শাহজামাল চৌধুরী বাহার বলেন, রিভারটকি থেকে নদীর কোনো বিকল্প নেই, এ বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। নদী রক্ষায় আইন আছে। তবে সবার মধ্যে সচেতনতা থাকতে হবে। এই সচেতনতা সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সবখানে থাকা চাই। ভালোবাসা আর মানবিকতা আমাদের নদ-নদীকে সুরক্ষা দেবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *