Main Menu

যেভাবে ৫১ দিন কাটে দিসা মনির

নারায়ণগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবে কাজ নেয় ডেমরা মাতুয়াইল মাঝপাড়া এলাকার ইকবাল পন্ডিত। চাকরির সুবাদে ইকবাল শহরের নন্দী পাড়া এলাকায় যেতো একাই এলাকায় কোচিং সেন্টারে যেতো দিসা মনি। যাওয়া আসার পথে তাদের পরিচয় থেকে প্রেম। তবে ইকবালের সাথে দিসা মনির সেই প্রেম বেশি দিন টিকেনি।

এরই মধ্যে দিসা মনি সম্পর্কে জোড়ায় বন্দর বুরন্ডি এলাকার অটো রিকশা চালক আবদুল্লাহর (বর্তমানে কারাগারে) সাথে প্রায়ই নদীতে নৌকা করে ঘুরতে যেতো দিসা মনি। নৌকার মাঝি খলিল (বর্তমানে কারাগারে) ছিল তাদের পূর্ব পরিচিত। তার নৌকা রিজার্ভ করে নদীতে ঘুরতো তারা।
একসময় দিসা মনি ও আবদুল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলো তারা পালিয়ে বিয়ে করবে। দিন তারিখ ঠিক হয় ৪ জুলাই সন্ধার পর। ওই দিন দিনের বেলায় আবদুল্লাহ তার বন্ধু রকিব (বর্তমানে কারাগারে) ও জিসামনি নদীতে ঘুরতে যায় সেই খলিল মাঝির নৌকায় করে। সিদ্ধান্ত হয় সন্ধ্যার পর দিসা মনি ও আবদুল্লাহ বিয়ে করবে। সেই অনুযায়ী, সন্ধ্যার দিকে ঘর ছাড়ে দিসা মনি। বড় বোনের মোবাইল থেকে আবদুল্লার বন্ধু রকিবের মোবাইলে যোগাযোগ করে কোথায় দেখা করবে ঠিক করে নেয়। শহরের ফ্রেন্ডস মার্কেটে তাদের দেখা হয়। দীর্ঘ সময় তাদের ঘুরাফেরা। এর মধ্যে কাজী অফিসে দিসা যাওয়া কথা বললে আবদুল্লাহ চিপস নিয়ে আসার কথা বলে চম্পট দেয়।

আবদুল্লাহকে না পেয়ে রাগে অভিমানে দিসা মনি ফোন দেয় তার সাবেক প্রেমিক ইকবালকে। দিসার ফোন পেয়ে তার সাবেক প্রেমিক ইকবাল এসে দেখা করে তার সাথে। দিসার মুখে সব কিছু শুনে তাকে নিয়ে রাত ১০টার দিকে মাতুয়াইল তার ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যায়। দিসা রাতে সেখানে থাকতে আপত্তি করলে রাতেই তাকে নিয়ে আসে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া খালাতো ভাইয়ের বাসায়। পরের দিন তারা দু’জন বিয়ে করে চলে যায় মুন্সিগঞ্জে তাদের এক আত্মীয়ের বাসায়। সেখানে কিছু দিন থাকার চলে আসে নারায়ণগঞ্জের বন্দর কুশিয়ারা। সেখানে বাসা ভাড়া নেয় তারা।

এরই মধ্যে চার হাজার টাকা বাসা ভাড়া জমে যায়। একদিকে টাকার জন্য, অপর দিকে মা-বাবার কথা মনে পড়ায় ফোন ফ্যাক্সের দোকানির মাধ্যমে মাকে ফোন করে দিসা মনি।

দোকানির ফোন পেয়ে জিসার মা রেখা প্রথমে বুঝতে পারেনি তার মেয়ে বেঁচে আছে। পরে দিসা মনির সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন তার মেয়েকে হত্যা করা হয়নি। তিন আসামির স্বীকারোক্তি ভুয়া। দিসার মা রেখা মামলার আইও দারোগা শামীমকে ফোন করে জানালে তারা বন্দর থেকে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সোমবার নয়াদিগন্তের কাছে বিস্তারিত এসব তথ্য জানান দিসা মনি।

এদিকে দিসা স্বামী ইকবালকে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানি হবে।

গত ৪ জুলাই নিখোঁজ হন দিসা মনি। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গিয়ে মেয়ের নিখোঁজ জিডি করেন দিসার মা রেখা আক্তার। এক মাস পর ৬ আগস্ট দিসা মনির বাবা জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ আগস্ট পুলিশ গ্রেফতার করেন তিনজনকে। তারা হলেন আব্দুল্লাহ, খলিল ও অটো চালক রকিব। এদের মধ্যে আব্দুল্লাহ জিসার প্রেমিক, খলিল নৌকার মাঝি এবং রকিব আব্দুল্লাহ এবং দিসার প্রেমের সম্পর্কের সংযোগ মাধ্যম। আটকের পর তিনজনই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাদের দেয়া জবানবন্দি মতে, আব্দুল্লাহকে নিয়ে দিসা মনি শীতলক্ষ্যা বেড়াতে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ দিসা মনিকে ধর্ষণ করে এবং পরবর্তীতে মাঝিও ধর্ষণ করে দিসা মনিকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। দিসা মনি খুনের স্বীকারোক্তির পর এলাকাবাসী পোস্টারিং করেছে।

দিসা মনির মা রেখা জানান, আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি তাই কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তিন আসামি কেন স্বীকারোক্তি দিলো তা আমরাও জানি না। আমরা চাই কারোর প্রতি যেন অবিচার না হয়।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রকৃত সত্যটা আমরা উদঘাটন করবো।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *