Main Menu

ট্রাকচাপায় গর্ভবতী মায়ের প্রাণ গেলেও যেভাবে জন্ম হলো গর্ভের শিশুর

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনার সময় জন্ম নিয়েছে এক শিশু। শনিবার বিকেলে একটি ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তাদের এক মেয়ে। কিন্তু দুর্ঘটনায় নিহতের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারী জন্ম দিয়ে গেছেন একটি কন্যা শিশুর।

ঘটনার মর্মান্তিকতা সাড়া ফেলেছে সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কোর্ট ভবন এলাকার ঘটনা। স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ও ছয় বছরের মেয়ের সাথে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ত্রিশালের রায়মনি গ্রামের রত্না বেগম।

অনাগত সন্তানের শারীরিক অবস্থা কেমন আছে তা জানতে কাছেই একটি ক্লিনিকে আলট্রাসাউন্ড করাতে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন পরিবারের সবাই। ঘটনাস্থলেই সকলের মৃত্যু হলেও এই দুর্ঘটনায় বেঁচে গেছে কয়েক মুহূর্ত আগ পর্যন্ত মাতৃগর্ভে থাকা শিশুটি।

ঘটনার পরপরই সেখানে উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ত্রিশাল ফায়ার স্টেশনের সাব অফিসার মো: রিয়াজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি রাস্তায় দু’টা লাশ পড়ে আছে। একজন নারী ও একজন পুরুষ। যাদের মুখ একদম বিকৃত হয়ে গেছে। ট্রাকের সামনের দিকের চাকার নিচে পড়েছেন ভদ্রলোক। গর্ভবতী নারীর শরীরের বাম দিকের একপাশ দিয়ে ট্রাকের পেছনের চাকাটা চলে গেছে। চাকার চাপে পেট ফেটে নাড়িভুঁড়িসহ বাচ্চাটা বের হয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, ত্রিশালে রোজই দু-একটা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে কিন্তু এরকম ভয়াবহ ঘটনা আমার চাকুরি-জীবনে দেখিনি। এটা যেন একটা অলৌকিক ঘটনা। আমরা পরে লাশ দু’টি বডিব্যাগে ভরে পুলিশের হাতে তুলে দেই।

উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই ঘটনাস্থলের কাছে থাকা মানুষজন নবজাতক ও ছয় বছর-বয়সী মেয়ে শিশুটিকে কাছেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

সেখানে চিকিৎসকেরা ছয় বছর-বয়সী শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ এসে রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ দু’টি নিয়ে যায় থানায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনার পর আশপাশের লোকজন যখন কাছে গেল তারা দেখতে পেল ৩টা বডি পড়ে রয়েছে। তারা একদম নতুন জন্ম নেয়া বাচ্চার কান্নাও শুনতে পাচ্ছিল। কিন্তু হট্টগোলের মধ্যে কোথা থেকে কান্নাটা আসছে সেটা বুঝতে পারেনি। পরে তারা দেখে যে মহিলার বোরখার নিচে একটা বাচ্চা। সাথে সাথে কেউ বোঝেনি যে বাচ্চাটা পেট ফেটে বের হয়েছে।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় এবং অনেক প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনেই দুর্ঘটনাটি ঘটার কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহত জাহাঙ্গীর আলমের চাচাত ভাই শরীফ উদ্দিন জানন, শনিবার রাতেই লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক নারী শিশুটিকে কাপড়ে মুড়ে প্রাথমিক যত্ন দিতে সহায়তা করেন। তাকে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর বোঝা যায় যে নবজাতক শিশুটিও আহত হয়েছে।

মাঈন উদ্দিন জানান, পরে শিশুটিকে ময়মনসিংহ সদরের বেসরকারি লাবীব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

হাসপাতালটির শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামান জানান, ‘নবজাতক শিশুটির হাতের কনুই-এর উপরে যে মোটা হাড্ডি থাকে সেখানে ফ্র্যাকচার হয়েছে। তার কলার বোন ভেঙে গেছে। ভাঙা জায়গায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। তবে কোনো ধরনের ইন্টারনাল ইনজুরি আমরা পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘শিশুটির ওজন তিন কেজির চেয়ে সামান্য বেশি। সে মাশাল্লাহ সুস্থ আছে। কিন্তু যেভাবে সাংবাদিকসহ মানুষজন ভিড় করছে, তাতে নবজাতক তো, কোনো ইনফেকশন হয়ে যায় কিনা সেটা নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত।’

নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও রত্না বেগমের ১০ বছরের কম বয়সী আরো দু’টা সন্তান রয়েছেন। পুরো ঘটনায় বিহ্বল শিশু দু’টি তাদের ছোট্ট বোনকে হাসপাতালে দেখতে এসেছে।

ডা. কামরুজ্জামান বলেন, এখন শিশুটির দেখভাল করছেন হাসপাতালটির মালিকের স্ত্রী ও সেখানে কর্মরত কয়েকজন নার্স। তাছাড়া হাসপাতালটিতে সন্তান জন্ম দেয়া কয়েকজন প্রসূতি শিশুটিকে ভাগ করে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর কারণে শিশুটির নাম রাখা হয়নি এখনো। শরীফ উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আমরা ওই পর্যন্ত ভাবতেও পারিনি। আমার ভাই নিজে এক সময় পেশায় গাড়ির চালক ছিলেন। ত্রিশাল এলাকায় খুব নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটতে দেখে বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার পর তিনি গাড়ি চালানোর কাজ ছেড়ে দেন। ওদের এইভাবে মৃত্যু আমরা ভাবতেও পারছি না।’

এখন শিশুটির দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে রোববার উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *