Main Menu

সিলেট বিভাগের কৃষির উন্নয়নে সম্প্রতি ২২৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, কৃষিমন্ত্রী

 

সিলেট থেকে কৃষিপণ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে রপ্তানি করার লক্ষ্যে ঢাকার শ্যামপুরের মত সিলেটে প্যাকিং হাউজ এবং সার্টিফিকেশন ল্যাব দ্রুত চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি। তিনি বলেন, বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে হলে পণ্যকে নিরাপদ রাখতে হবে। ‘নিরাপদ খাদ্য’ এর জন্য প্যাকিং হাউজ ও সার্টিফিকেশন ল্যাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে সিলেট থেকে ‘কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি ও বিনিয়োগ’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের দাবীর প্রেক্ষিতে কৃষিমন্ত্রী এই প্রতিশ্রুতি দেন। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এমপি ও এফবিসিসিআই এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম. এ. মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ। আলোচনা সভায় উপস্থিত মন্ত্রীরা রপ্তানির জন্য সম্ভাবনাময় সিলেটে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও সহজীকরণে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সিলেটকে কৃষিপণ্য উৎপাদনের অপার সম্ভাবনাময় এলাকা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, সিলেটের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কৃষি উৎপাদন ও উন্নয়নে সিলেট বিভাগে  ২২৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় উচ্চফলনশীল ধান, খাদ্যপণ্য, ফল বিশেষ করে কমলালেবু, আনারস এবং কফি চাষ সম্প্রসারণ করা হবে। বিশেষ করে সিলেট আনারস উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফিলিপাইন থেকে উন্নতমানের আনারসের চারা আমদানি করে ব্যাপক হারে সিলেটে সরবরাহ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, খাদ্যপণ্য রপ্তানির জন্য সিলেটে প্যাকিং হাউজ খুবই প্রয়োজনীয়। দেশে এখন অনেক খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে, প্যাকিং হাউজ হলে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, সিলেটের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। তার নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট ৬ লেন, সিলেট-তামাবিল ৪ লেন ও বাদাঘাট বাইপাস সড়ক অনুমোদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কারণেই সিলেটে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে। তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আমাদের কাছ থেকে খাদ্যপণ্য নিতে খুবই আগ্রহী। ফুড সিকিউরিটির আওতায় তারা সবজি এবং বিশেষ করে আম সরাসরি কার্গো বিমানে নিতে চায়। তারা এগুলো তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে ২২টি দেশেও রপ্তানি করবে। এ ব্যাপারে সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন হওয়ায় এই কাজ সম্পন্ন হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু, আশাবাদী, দ্রুততার সাথেই এই কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলেই ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী পরিপূর্ণ প্যাকিং হাউজ ও ওয়্যার হাউজ চালু হবে। বিমান প্রতিমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বিমানের টিকেটের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলেন, কোন প্রবাসীকে হয়রানি আমি সহ্য করবো না। টিকেট নিয়ে কোন সিন্ডিকেটের প্রমাণ দিতে পারলে এর সাথে জড়িতদের তাৎক্ষণিকভাবে চাকুরিচ্যুত করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম. এ. মোমেন বলেন, বর্তমান সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে কোভিড-১৯ মহামারি মধ্যেও কৃষিপণ্যের সাপ্লাই চেইন সচল ছিল। এটি সরকারের একটি বিরাট অর্জন। তিনি প্রবাসীদের নতুন প্রজন্মকে দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে প্রবীণ ব্যবসায়ীদের আহবান জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার তাদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিচ্ছেন। তিনি সিলেটে ওয়্যার হাউজ ও প্যাকিং হাউজ প্রতিষ্ঠা সিলেটের ব্যবসায়ীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি উল্লেখ করে এ ব্যাপারে মন্ত্রীগণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

স্বাগত বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, এই মতবিনিময় সভা সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানি ও বিনিয়োগের জন্য মাইলফলক। তিনি সিলেটের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে কৃষিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিমান প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, যথাযথ সুযোগ সৃষ্টি করা হলে সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। তিনি সিলেট থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে প্যাকিং হাউজ, কুলিং সেন্টার, সার্টিফিকেশন ল্যাব স্থাপন, গোয়াইনঘাটে অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন, সিলেট-লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটের ভাড়া হ্রাস করার অনুরোধ জানান। তিনি সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় কৃষি উদ্যোক্তা তৈরীর লক্ষ্যে কৃষি বিষয়ক সেমিনার আয়োজনের জন্য সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি উদ্যোগে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের আহবান জানান।
সভায় বক্তাগণ সিলেট-চট্টগ্রাম ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে ২টি করে ফ্লাইট চালু, সিলেট থেকে সরাসরি ওমরাহ’র ফ্লাইট চালু, রেমিটেন্স এওয়ার্ড প্রদানের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে পণ্য ডিসপ্লে সেন্টার চালু, বিমানবন্দরের বাইরে যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ওয়েটিং রুম তৈরী, পর্যটকদের জন্য তথ্য কেন্দ্র খোলা, দেশে ফেরার ফ্লাইটে খাবারের মান উন্নয়ন, সিলেটে কার্গো বিমান অবতরণ সহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কৃষিপণ্য রপ্তানি, পর্যটন, ও বিনিয়োগ বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ উপস্থাপন করেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ এবং সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক আবু তাহের মোঃ শোয়েব। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামীমা আক্তার খানম, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট এর অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ সাঈম উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল হাসান নজরুল, সিলেট চেম্বারের পরিচালক ও রপ্তানিকারক মোঃ হিজকিল গুলজার, পরিচালক ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান, দেবাংশু দাস, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ জব্বার জলিল, নয়াসড়ক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, কৃষি গবেষক আব্দুল বাছিত সেলিম, জালালাবাদ ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স গ্রুপের সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারি মাওলানা শেখ সাদিকুর রহমান।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *