Main Menu

হিজাব : যে পোশাক আল্লাহর জন্য!

হিজাব একটি ইবাদাত। এটি একটি আসমানি পোশাক। হিজাব শুধু একটা জামা না। একটি জীবন পদ্ধতি, সার্বক্ষণিক ফরজ ইবাদাত। যে নারী হিজাব পরবে, সে তার আদর্শিক পরিচয় মানুষের সামনে তুলে ধরবে। যদি সে হিজাবের পাশাপাশি অন্যান্য ভালো আমলগুলো করে, তাহলে সে জান্নাতে যাবে, ইন শা আল্লাহ। আর যদি হিজাব পালন না করে, তা হলে সে এর দ্বারা তার বাবা ও স্বামীকে দাইয়্যুস বানায়। যার ফলে সেই নারী নিজেকে-সহ তাদের সবাইকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।

১-

দ্বিতীয় হিজরির মদীনা। বদরের কিছুদিন পর এক মুসলিম নারী বনু কায়নুকার বাজারে গিয়েছিলেন। এক ইহুদি স্বর্ণকারের কাছে। দুষ্ট খবিস ইহুদি ব্যবসায়ীটি মুসলিম নারীকে তার মুখের পর্দা সরাতে বলল। মুসলিম নারীটি নিজের নিকাব সরাতে দৃঢ়ভাবে অস্বীকৃতি জানালেন। উপস্থিত ইহুদিরা মুসলিম নারীটিকে মুখের নিকাব সরানোর জন্য ক্রমাগত পীড়াপীড়ি করে যাচ্ছিল। বোনটি নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। তিনি দোকানে স্বর্ণ দেখছিলেন। এই ফাঁকে এক দুষ্টমতি ইহুদি চুপিসারে বোনটির লুটিয়ে পড়া আঁচলের এক কোণ মাটির সাথে গেঁথে রাখল। বোনটি কাজ শেষ করে বসা থেকে উঠে হাঁটা শুরু করতেই কাপড়ে টান লেগে পরিধেয় কাপড় খুলে গেল। লজ্জায় বোনটি গুঙিয়ে উঠলেন। কাপড় খুলে যাওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত ইহুদিরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
একজন মুসলিম নারীকে এভাবে হেনস্থা হতে দেখে সেখানে উপস্থিত এক মুসলিম ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। আঁচল আটকে দেয়া ইহুদিটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করলেন। এরপর উপস্থিত ইহুদিরা একজোট হয়ে মুসলমানটির ওপর হামলে পড়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে ফেলল।
আল্লাহর রাসূল সা. ঘটনা শোনামাত্রই সসৈন্যে এসে বনু কায়নুকাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ঘোষণা দিলেন, ‘আমরা বনু কায়নুকাকে ১৫ দিন অবরুদ্ধ করে রাখব।’ বনু কায়নুকা উপায়ন্তর না দেখে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো। আল্লাহর রাসূল বনু কায়নুকার সমস্ত পুরুষকে বেঁধে ফেলার আদেশ দিলেন। হুকুম তামিল করা হলো। সিদ্ধান্ত হলো, পুরুষদের হত্যা করে ফেলা হবে। পরে বিশেষ বিবেচনায় বনু কায়নুকাকে মদীনা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
একজন নারীর সম্মান রক্ষায় রাষ্ট্রপ্রধান দেশের পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে ছুটে এসেছেন। সেই মুসলিম বোনটিও বিন্দুমাত্র আপস করেননি। চারদিক থেকে ঘিরে থাকা হায়েনাদের ভয় পাননি।

২-

১৯৫৫ সাল। এক সিরিয়ান পরিবার আমেরিকায় পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিল। মা-বাবা আর তিন কন্যা। প্রথমে বাবা গিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় থিতু হলেন। তিন সপ্তাহ পর স্ত্রী আর তিন কন্যাকেও আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন। মা ও মেয়েরা নিউইয়র্ক হয়ে কানেক্টিং ফ্লাইটে ক্যালিফোর্নিয়া যাবেন। নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে কাস্টম কর্মকর্তা বললেন, ছবি তোলার জন্য হিজাব খুলতে হবে। অফিসারদের পীড়াপীড়িতে মা ও বড় দুই বোন অনিচ্ছা আর ভয়ে হিজাব খুলতে বাধ্য হলেন। বেঁকে বসলেন ছোট বোন ‘হালা আতীক’। কর্মকর্তা নানাভাবে বোঝালেন, মা আর দুই বোনও বোঝালেন। হুমকি দেয়া হলো হিজাব না খুললে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে। হিজাব না খুললে গ্রীন কার্ড পেতে সমস্যা হবে। কোনও হুমকি ধমকিতেই কাজ হলো না। হিজাব খোলার প্রস্তাব ১৩ বছরের কিশোরী হালা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘হিজাব আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ। সামান্য ছবির জন্য আমি ধর্মবিশ্বাসকে সরিয়ে রাখতে পারি না। আপনি আমাকে ফের সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। মা-বাবা আর বোনদের রেখেই আমি সিরিয়ায় ফেরত যেতে প্রস্তুত। আমার ধর্মপালনের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার অধিকার আপনার নেই।’
বিমানবন্দরের ছোট-বড় সব কর্মকর্তার ভিড় জমে গেল। যে যেভাবে পারল, বোঝানোর চেষ্টায় কোনও কমতি রাখল না। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বোঝানোর পরও হালাকে আপন অবস্থান থেকে একবিন্দু টলাতে না পেরে কর্মকর্তারা রণে ভঙ্গ দিল। হিজাবসহই ছবি তোলার অনুমতি দিল। ততক্ষণে ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্লাইট চলে গেছে। পরবর্তী ফ্লাইট ধরে তারা ক্যালিফোর্নিয়া পৌঁছলেন। বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ বাবা স্ত্রী ও কন্যাদের ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বারবার বলতে লাগলেন, আল্লাহই তোমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আগের ফ্লাইটটা বিধ্বস্ত হয়েছে। ২৯৫ জন যাত্রীর সবাই মারা গেছে।

৩-

কেরালার মেয়ে রবীহা আবদুর রহীম। গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল করায় স্বর্ণপদক পাওয়ার উপযুক্ত হন। পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। হিজাব পরিহিতা এই মেধাবী মুসলিম মেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মানের তোয়াক্কা না করে, পুরো দেশজুড়ে মুসলিমবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
ভারতীয় শহর গোয়া। এখানকার আরেক হিজাবী বোন সাফিনা খান সওদাগর। তিনি গুরুত্বপূর্ণ NET (National Eligibility Test) পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় তাকে হিজাব খুলতে বলা হয়েছিল। তিনি সম্মত হননি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, প্রয়োজনে পরীক্ষা ছাড়বেন; কোনও অবস্থাতেই হিজাবের প্রশ্নে আপস করবেন না।
কর্ণাটকেও বোন মুসকান খান অসম সাহসে হিজাবের পক্ষে তাকবীরধ্বনি দিয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। হিজাবের সম্মান রক্ষায় তার অকুতোভয় অমিততেজা শিহরণ জাগানিয়া অবস্থান মুসলিম বোনদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশেও এমন ঘটনা বিরল নয়। দেশসেরা এক প্রতিষ্ঠানে নিকাব পরিহিতা এক বোন ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন। পরীক্ষক তাকে নিকাব খুলতে বলল। বোনটি নিকার খুলতে দৃঢ়ভাবে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, প্রয়োজনে পরীক্ষা দেব না, তবুও নিকাব খুলতে পারব না। তাকে হলের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রায় পনেরো-বিশ মিনিট পর তাকে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছিল। শুধু ভর্তি পরীক্ষা কেন, যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতিটি সেকেন্ডই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও বোনটি আপসের পথে হাঁটেননি।
৪- বয়েস মাত্র আঠারো বছর ছিল বোনটির। হাদিল সালাহ হাশলামুন। অভিশপ্ত ইহুদি সেনা বোনটিকে নিকাব খুলতে বলেছিল। হাদিল নিকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানালেন। ইহুদি সেনাটি ক্রুদ্ধ হয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক র‍্যাঞ্জ থেকে পরপর আটটি গুলি করে। সেখানেই সাহসী বোনটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দূরের কথা, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত কাউকে তার ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেয়া হয়নি। হাদিল হাশলামুন নাবলুস ইউনিভার্সিটিতে শরীয়াহ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি কবিও ছিলেন। ফিলিস্তিনি শিশু নামে তার অসাধারণ এক কবিতা তার বন্ধুদের মুখে মুখে ফেরে।
৫-

হিজাব ও দ্বীন পালনের জন্য বলিউডের লোভনীয় জগৎ ছেড়ে আসা এক কাশ্মীরি বোন বলেছেন,
‘হিজাব কারও পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নয়। হিজাব আল্লাহর দেয়া অবশ্যপালনীয় বাধ্যতামূলক বিধান। যে নারী হিজাব পরছেন, তিনি মূলত তার স্রষ্টার দেয়া বাধ্যবাধকতার আদেশ পালন করছেন। তিনি আল্লাহকে ভালোবাসেন বলেই হিজাবকেও ভালোবাসেন। আল্লাহকে ভালোবেসেই একজন নারী আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বান্তকরণে সমর্পণ করে দেন। আমি কৃতজ্ঞ এবং বিনম্রচিত্তে হিজাব পরা একজন নারী। নিজ ধর্মপালনের জন্য নানাদিকে মুসলিম নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমি হিজাববিরোধী পুরো ব্যবস্থাকে ঘৃণা করি এবং প্রতিরোধ করি।’
এ যুগেও খানসা, সাফিয়্যা, নুসাইবাদের উত্তরসূরিগণ আছেন। এই উম্মাহ কখনও এমন অকুতোভয় নারীশূন্য ছিল না। আজও নেই। রব্বে কারীম এই উম্মাহর বোনদের কবুল করুন। দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
উপরের চিত্রগুলো আমাদের জানিয়ে দেয় হিজাব বিষয়টিকে আমাদের বোনেরা কীভাবে দেখতেন। কতটুকু গুরুত্ব বহন করে এই হিজাব। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহর বিধান পালনের জন্যই এই হিজাব। কারও ইচ্ছেস্বাধীনতা আর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করেনা রব্বে করিমের এই বিধান পালন।

সংগ্রহে: Wafilife.com






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *