Main Menu

করোনাভাইরাসের বড়ি তৈরির পথে মার্কিন গবেষকেরা

অনলাইন ডেস্কঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে নানা ওষুধ ও ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে মার্কিন গবেষকেরা একটি সুখবর দিচ্ছেন। তাঁরা দাবি করছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারে, মুখে খাওয়ার এমন ওষুধ বা বড়ি নিয়ে পরীক্ষাগারে সফল পরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা।

এই বড়ি টেস্টটিউবে মানুষের ফুসফুসের কোষের প্রতিলিপিতে করোনাভাইরাস বিস্তারে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ইঁদুরের ওপরও এ ওষুধ নিয়ে তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন। এ ক্ষেত্রে ইঁদুরের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত করোনাভাইরাসকে পুনরুৎপাদনে বেশ কিছুদিন বাধা দেওয়ার এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা।
ওষুধটিকে গবেষকেরা বলছেন, ‘ইআইডিডি-২৮০১’। এটি মূলত সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের উচ্চ সংখ্যায় পুনরুত্পাদন এবং সংক্রমণে বাধা সৃষ্টি করে। গবেষণা–সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’ সাময়িকীতে।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের তৈরি ওষুধটি এখনো মানুষের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। তবে এর প্রভাব যদি মানুষের ক্ষেত্রেও একই রকম হয়, তবে কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষেত্রে এটাই হবে প্রথম বড়ি।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৭ ছাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮২ হাজার ৭৪ জন। এর মধ্য ইতালিতে ১৭ হাজার ১২৭ জন মারা গেছেন, যা এখন পর্যন্ত কোনো দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখে খাওয়ার ওষুধ বা বড়ি হিসেবে করোনার ওষুধ পেলে তা আশীর্বাদ হবে। কারণ, শিরায় ইনজেকশন দেওয়ার চেয়ে বেশি লোককে ওষুধ দেওয়া সহজ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের একদল গবেষক নতুন ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইতিমধ্যে রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই ওষুধের লাইসেন্স নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওষুধ পরীক্ষার জন্য অনুমতিও দিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ১০ জন রোগীকে ভাইরাস প্রতিরোধী ওই ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যৌথ গবেষক দলটি খুঁজে দেখেছিল যে গিলিয়াড সায়েন্সের পরীক্ষামূলক রেমডেসিভির নামের ওষুধ করোনাভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি বন্ধ করতে কার্যকর ছিল। গিলিয়াড সায়েন্স নামে একটি আমেরিকান বায়োটেকনোলজি কোম্পানির একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখন ছোট আকারে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এটার নাম রেমডেসিভির এবং এদের বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় নিওক্লিওটাইড অ্যানালগ। এটা ডিএনএ যে মূল যৌগ দিয়ে তৈরি, তার মতো একটি যৌগ। এই ধরনের কিছু ওষুধ বর্তমানে এইচআইভি ভাইরাসের প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেমডেসিভির তৈরি করা হয়েছিল আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য। এটা একটা ব্রড স্পেকট্রাম ভাইরাস প্রতিরোধক। তার মানে এটা বেশ কিছু ভাইরাস, যেমন: নিপা, মার্স, সার্স, ইবোলা এবং আরও কিছু ভাইরাসের প্রতিরোধে কাজ করে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে এই ওষুধ ওয়াশিংটন স্টেটের একজন একজন রোগীর ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে প্রয়োগ করা হয়েছে।

বর্তমানে রেমডেসিভির আলোচনায় আসার কারণ এটি দিয়ে গত মার্চ মাসে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ এর ফল জানা যেতে পারে।

গবেষকেরা দাবি করছেন, গিলিয়াডের ওষুধের চেয়ে সফলভাবে করোনাভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ঠেকাতে পারবে ইআইডিডি-২৮০১।

ইমোরি ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগ ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও রসায়নের অধ্যাপক জর্জ পেইন্টার বলেন, বর্তমান কোভিড-১৯ সমস্যা বিবেচনায় গবেষণার ফলাফল জানানো গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৮ সালে পেইন্টার ও তাঁর ল্যাবের গবেষকেরা ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ খোঁজ করার সময় ইআইডিডি-২৮০১ এর কার্যক্রম শনাক্ত করেন। গত অক্টোবরে করোনা মহামারি আসার আগে ইমোরি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের কাছ থেকে এক কোটি ৫৯ লাখ ডলার অর্থসাহায্য পায়। ফ্লু ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের ওপর ওষুধ পরীক্ষার জন্য ওই অর্থ পায় ইমোরি ইউনিভার্সিটি। তবে যখন করোনাভাইরাস আঘাত হানে তখন পেইন্টারের গবেষক দল তাদের লক্ষ্য বদলে ফেলে।

ইআইডিডি-২৮০১ করোনাভাইরাসের স্ব-অনুলিপি কার্যক্রমকে এমনভাবে বাধা দেয়, যা রেমডেসিভির থেকে পৃথক। রেমডেসিভির মূলত অনুলিপি তৈরির প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। ইআইডিডি-২৮০১ ভাইরাসের আরএনএতে মিউটেশনের ক্ষতি করে, যাতে আরএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কোষের ক্ষতি করতে পারে না। এর বাইরে অন্যান্য আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও এটি কাজ করতে সক্ষম। তাই এটি একাধিক ভাইরাস রোধী ওষুধ হিসেবে কাজে লাগবে। কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন একাধিক ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে ইআইডিডি-২৮০১ তেমন কাজ করতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়েন হোলম্যান বলেন, তাঁদের তৈরি যৌগটি প্রাথমিকভাবে প্রফিল্যাক্সিস বা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহার হচ্ছে নার্সিং হোমের বাসিন্দা ও কর্মীদের প্রাদুর্ভাব থেকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে এর বিস্তৃত লক্ষ্য হচ্ছে, মুখে খাওয়ার বড়ি তৈরি, যা রোগ সংক্রমণের শুরুর দিকেই দিনে দুবার রোগীকে দেওয়া যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষা শুরুর পাশাপাশি রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যেও এটি পরীক্ষা করার আবেদন করা হয়েছে। হোলম্যান বলেছেন, নতুন করোনা মহামারির ঠেকাতে আমরা তিন থেকে চার বছরের কাজ তিন থেকে চার সপ্তাহে করেছি। তথ্যসূত্র: ইসায়েন্স নিউজ, সায়েন্টিফিক আমেরিকান






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *