Main Menu

লালন সাঁইয়ের বারামখানায় বসেছে সাধুর হাট

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বসছে সাধুর হাট। তিন দিনের আয়োজন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সোমবার সন্ধ্যায়।

তবে এর আগেই মনের টানে চলে এসেছেন সাধু-বাউল ও ভক্তরা। লালনের গানে গানে প্রচার করছেন তার মানবদর্শনের। গুরু-শিষ্যের মিলনের এই ক্ষণ যতটা দীর্ঘ করা যায় সেই লক্ষ্যে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই চলে আসেন তারা।

সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। তিরোধান দিবসের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় থাকছে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা ও সংগীত অনুষ্ঠান। লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও কলকাতার লালন শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠান ঘিরে তিন দিনের গ্রামীণ মেলা বসবে।

ইতোমধ্যে লালন আখড়াবাড়ির ভেতরে-বাইরে কালীগঙ্গা নদীপাড়ের বিশাল মাঠে আসন গেড়ে বসেছেন সাধু-ফকির ও ভক্তরা। চলছে গানে গানে লালনের জাতপাতহীন, মানবতাবাদী ও অহিংস দর্শনের প্রচার।

স্থানীয় লালন শিল্পী কুদ্দুস ফকির বলেন, ‘লালনকে ধারণ করলে দেশে দেশে যুদ্ধ, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ কমে আসবে।’

সোহেলী ফকির বলেন, ‘অন্য সময় পাগল পাগল ঘুরি। সাঁইজির এখানে আসলে মন শান্ত হয়ে যায়। শীতল লাগে। এজন্য আগেভাগে চলে এসেছি।’

হৃদয় শাহ বলেন, ‘পাশে বাড়ি হওয়ায় প্রতিদিনই এখানে আসি। তিরোধান হিসেবে আজ বিছানা করলাম। সব সাধু-ফকিরের সঙ্গে মন খুলে কথা হবে। ভাবের আদান-প্রদান হবে-এটাই চাওয়া।’

লালন মাজারের ভারপ্রাপ্ত খাদেম রিপন শাহ বলেন, ‘এবার পয়লা কার্তিক সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হবে। এ সময় সাধু-ফকিরদের খাবার দেওয়া হবে। পরদিন দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।’

রিপন শাহ আরও বলেন, ‘এবার লোকসমাগম বেশি হবে বলে মনে করছি। এই ভবের হাটে বসেছে লালন মেলাও। একতারাসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আসছেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থী। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে আলোচনা ও লালন সংগীতের আয়োজন থাকছে।’

লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম হক বলেন, ‘বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় সাধু-ফকিরদের একত্রিত করে উৎসব করতেন। দিনরাত গান আর গুরু-শিষ্যের পরম্পরা চলতো। প্রায় ২০০ বছরের সেই রেওয়াজ এখনও আছে। এর সঙ্গে ১৩২ বছর ধরে তিরোধান দিবস পালন করা হচ্ছে। এটিও একই আদলে।’

লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফকির লালন সাঁইজি তার জীবদ্দশায় প্রতি বছরই দোল পূর্ণিমা তিথিতে গুরু-শিষ্যের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানের জন্য সাধু-বাউল ফকিরদের সঙ্গে নিয়ে উৎসবের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রায় ২০০ বছর ধরে এই রেওয়াজ চালু আছে। একইভাবে প্রায় ১৩২ বছর ধরে তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান পালন হচ্ছে। কোনও দাওয়াত-পত্র ছাড়াই বাউলভক্ত ও সাধুরা মনের টানে দুটি দিবসকে ঘিরে সাঁইজির আখড়া বাড়িতে ছুটে আসেন।’

কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক মঞ্জু বলেন, ‘এবার তিরোধান দিবস উপলক্ষে আখড়া বাড়িতে রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থী ও লালনভক্ত এবং বাউলদের আগমন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মূল মাজার প্রাঙ্গণ ও সামনের মরা কালী নদী; যেখানে মঞ্চ রয়েছে সেসব স্থানে অসংখ্য বাউল ভক্তরা আসন পেতেছেন।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম বলেন, লালন অনুসারী ও পর্যটকদের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়েছে।

লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘অনুষ্ঠানকে ঘিরে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি দেশের বাইরে থেকেও বহু লালনভক্ত ও সাধু এসে জড়ো হয়েছেন সাঁইজির আখড়ায়।’






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *