Main Menu

আত্মহত্যার একদিন পর প্রকাশিত মার্কিন নারীর যে সুইসাইড নোটে তোলপাড়

নিউইয়র্ক শহরের হাডসন ইয়ার্ড ভেসেল থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন ২৪ বছর বয়সী এক ব্রুকলিন নারী। মৃত্যুর আগে নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি হৃদয়বিদারক সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছিলেন ওই নারী। যা তার আত্মহত্যার পর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

মার্কিন ওই নারীর নাম জোচেভেদ গৌরি। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি যদি এটি পড়ে থাকেন, তবে আমি আর বেঁচে নেই,’ লিখে যান মার্কিন নারি জোচেভেদ গৌরি। পোস্টটি প্রকাশের জন্য তিনি তার মর্মান্তিক আত্মহত্যার পরের দিনটিকে নির্ধারণ (শিডিউল) করে দিয়েছিলেন।

তিনি লিখেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এটা জেনে খুশি হবেন যে আমি এখন বেদনামুক্ত।’

ক্রাউন হাইটসের গৌরি মঙ্গলবার পাতাল রেলে চড়ে ম্যানহাটনে যান এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ভেসেলের জন্য একটি টিকেট কাটেন।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্র দ্য পোস্টকে জানায়, তিনি কোনো সুইসাইড নোট রেখে যাননি, তবে তিনি তার সাথে এমন ‘তথ্য রেখেছিলেন যাতে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তা সহজ হয়েছিল’।

পুলিশ জানায়, ভবনের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গৌরি রেলিংয়ের উপরে উঠেন এবং নিচে লাফিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে অনলাইনে অ্যানোরেক্সিয়া ও হতাশার সাথে তার সংগ্রামের কাহিনী লিখতেন।

৯১১ নম্বরে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গৌরিকে মৃত ঘোষণা করে ইএমএস। তিনি ইনস্টাগ্রামে তার শেষ বার্তাটি প্রকাশের জন্য পরবর্তী দিনকে নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন যা ছিল কৃতজ্ঞতা, হতাশা এবং তির্যক হাস্যরসের মিশ্রণে একটি আধুনিক সুইসাইড নোট।

তিনি লিখেন, ‘আরে…। এখনও যদি আপনি না জানেন তবে আমি মনে করি সম্ভবত আপনার বসা উচিত।’

‘আপনি যদি এটি পড়ে থাকেন তার মানে আমি চলে গেলাম। অথবা হয়ত কোনোভাবে হাসপাতালে অক্ষম হয়ে পড়ে আছি যার ফলে আমি এই শিডিউলড (পূর্ব নির্ধারিত) পোস্টটি মুছতে পারি না। তবে এরকমটি হবে বলে আমি আশা করি না।’

‘কেন চলে গেলাম তার ব্যাখ্যায় যেতে চাই না, তবে সে কারণগুলো অবশ্যই ১৩টির বেশি হবে। মৃত্যুর পরে আমার বাব-মা’র কাছে পাঠানোর জন্য আমি একটি নোট শিডিউল করে রাখলাম… যদিও এই নোটটি প্রকাশ হলে তারা কষ্ট পাবে।’

‘আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই না, আমি শুধু এই পৃথিবীতে আমার শেষ চিহ্নটি রেখে যেতে চাই’।

উপসংহারে তিনি লিখেন, ‘আপনারা সবাই আমার জীবনকে এত বেশি পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও আনন্দময় করে তুলেছেন, যা আপনারা না থাকলে হতো না। আপনাদের সমর্থন, আপনাদের উৎসাহ, আপনাদের আলিঙ্গন, আপনাদের আমন্ত্রণগুলো, আপনাদের হাসিগুলো, আপনাদের এসএমএসগুলো, আমি একটু মজা পাবো ভেবে আপনারা আমাকে বিভিন্ন মেসেজে ট্যাগ করেছেন।

‘আপনারা এটিকে থামাতে কিছুই করতে পারেন নি বা বেশি কিছু করতে পারেন নি। আপনারা সবাই আপনাদের সর্বোচ্চটা করেছেন এবং এর জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ। আমি আশা করি, আমি আর বেদনার মধ্যে নেই জেনে আপনারা কিছুটা হলেও স্বান্তনা পাবেন।’

‘আমি আপনাদেরকে ভালবাসি’।

শনিবার গৌরির ক্রাউন হাইটসের বাড়ির অভ্যন্তরে ধর্মীয় সঙ্গীত শোনা যায়। সেখানে প্রিয়জনেরা তার শেষকৃত্যের জন্য একত্রিত হয়েছিল। তার আত্মহত্যার ব্যাপারে গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি তার পরিবারের সদস্যরা।

তার লিংকেডইন পেজ অনুসারে, গৌরি সিএনইওয়াইয়ের ম্যাকোলে অনার্স কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞান এবং নিউরোসায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তিনি তার গাওয়া ‘মুন রিভার’ গানের একটি হৃদয়বিদারক, স্পষ্ট ও মূল্যবান ক্লিপ পোস্ট করেছিলেন। গানটিতে তার সুরকার এবং সংগীতশিল্পী বাবা আব্রেমি একটি বৈদ্যুতিক পিয়ানো বাজিয়েছিলেন।

তার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে গৌরি তার মানসিক অসুস্থতার সাথে লড়াই-সংগ্রামের বিষয়ে প্রকাশ্যে শেয়ার করেছেন এবং তাকে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

গৌরির এই সুইসাইড নোট তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তবৃন্দসহ সকল মার্কিনিদের মাঝে দাগ কেটেছে। মার্কিন সমাজ ব্যবস্থা কেন তরুন-তরুণীদের আত্মহত্যার এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সকলে।

সূত্র : নিউইয়র্ক পোস্ট






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *