Main Menu

আফগানিস্তানের রাজধানীতে বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ নিহত ৯

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি গাড়ি বোমা হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছে। একজন পার্লামেন্ট মেম্বারসহ (এমপি) আহত হয়েছেন ১৫ জনের বেশি। রোববারের এই হামলায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান। তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিও রয়েছেন।

সন্ত্রাসীরা কাবুল শহরে এই সন্ত্রাসী হামলা চালায় বলে জানান তারিক আরিয়ান।

এমপি খান মোহাম্মদ ওয়ার্দাকের গাড়িবহর কাবুলের খোশাল খান এলাকার একটি মোড পার হওয়ার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের যানবাহনগুলোতে আগুন ধরে যায় এবং পার্শ্ববর্তী দোকানপাট ও দালানের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, একটি গাড়ি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। ‘এটি ছিল একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ যা আশেপাশের ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে,’ জানায় সূত্রটি।

টেলিভিশন ফুটেজে ঘন কালো ধোয়ার কুণ্ডলীসহ কমপক্ষে দু’টি গাড়িকে পুড়তে দেখা যায়। কোনো গোষ্ঠি এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি।

প্রায় বিশ বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসানের পথ খুঁজতে সম্প্রতি আফগান সরকার ও তালেবান যখন আলোচনা-সংলাপ করছে তখনই দেশটিতে বিশেষ করে বোমা হামলার মতো সহিংসতা আবারো মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে।

রোববার লোগার, নাঙ্গারহার, হেলমান্দ এবং বদাখশান প্রদেশেও পৃথক বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এ সকল হামলায় বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন।

গত শুক্রবার মধ্য গজনি প্রদেশে একটি রিকশা বোমা বিস্ফোরণে ১১ শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিল।

এক বিবৃতি আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশজুড়ে ৩৫ টি আত্মঘাতী হামলা এবং ৫০৭টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গত তিন মাসে তালেবানরা ৪৮৭ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে এবং এক হাজার ৪৯ জনকে আহত করেছে।

আইএসআইআইএল (আইএসআইএস) সশস্ত্র গোষ্ঠি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে কাবুলে একাধিক হামলার দায় স্বীকার করেছে। এগুলোর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাও রয়েছে। এসব হামলায় ৫০ জন মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।

শনিবার আফগানিস্তানে প্রধান মার্কিন ঘাঁটিতে রকেট হামলার দায়ও স্বীকার করেছে আইএসআইএল। ন্যাটো ও প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের মতে এই হামলায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ন্যাটোর একজন কর্মকর্তা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন প্রাথমিক তদন্তে এয়ারফিল্ডের কোন ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়নি।

সরকার-তালেবান শান্তি আলোচনা

কয়েক দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আফগান সরকার এবং তালেবানরা দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও দেশটির নির্মম সংঘাত যেন থামছই না। ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক মার্কিন-তালেবান চুক্তির পর সেপ্টেম্বরে কাতারে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা আপাতত স্থগিত রয়েছে। ৫ জানুয়ারি এই আলোচনা শুরু হবে আবার।

তালেবানদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও কাবুল সরকারের সাথে আলোচনার প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের সকল সৈন্য প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছিল।

তবে আলোচনা সত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আফগানিস্তানের রাজধানীতে ব্যাপকহারে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

এই সপ্তাহের শুরুতে ইউএস জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি গত ফেব্রুয়ারির মার্কিন-তালেবান চুক্তির সামরিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে দোহায় তালেবান নেতাদের সাথে একটি অঘোষিত বৈঠক করেছেন।

তালেবানদের একটি রাজনৈতিক কার্যালয় থাকা কাতারে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি করা হয়েছিল তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনার মঞ্চ তৈরি করার জন্য।

তালেবানদের সাথে আলোচনার পর মার্ক মিলি আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণির সাথে পরামর্শের জন্য কাবুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি জানান, সারাদেশে সহিংসতার মাত্রা দ্রুত হ্রাস করার জন্য তিনি উভয় পক্ষকে জোর দিয়েছেন।

তালেবান বন্দীদের মুক্তিতে প্রেসিডেন্টের শর্তারোপ

এদিকে তালেবান বন্দীদের মুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি। আমেরিকা এবং তালেবান সম্মিলিতভাবে কাবুল সরকারকে বন্দী মুক্তির ব্যাপারে যৌথভাবে যে প্রস্তাব দিয়েছিল আশরাফ গণি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আশরাফ গণি বলেন, তালেবান গোষ্ঠী দেশজুড়ে রক্তপাত ও সহিংসতা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরও তিনি যদি নতুন করে বন্দীদের মুক্তি দেন তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না।

দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশ সফরে গিয়ে তিনি আরো বলেন, গত বছর তালেবান গেরিলারা সহিংসতা চালিয়ে দেশের শতকরা ১৬ ভাগ সম্পদ ধ্বংস করেছে। এ অবস্থায় তালেবান গোষ্ঠী আরো বন্দী মুক্তির বিষয়ে যে দাবি করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

আশরাফ গণি বলেন, যদি তালেবান আফগানিস্তানে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে তারা কান্দাহারে গিয়ে আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসুক। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।

সূত্র : আলজাজিরা ও পার্সটুডে






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *