Main Menu

ক্রিকেট মাঠে মুসলিম জীবনবোধের অনন্য নজির হাশিম আমলা

ডেস্ক রিপোর্ট :

টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে ১৭ হাজারের ওপরে রান করা হাশিম আমলার অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে বেশ ওপরের দিকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। বংশের পূর্বসূরিরা ভারতের গুজরাট থেকে স্থায়ী হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সে অনুযায়ী হাশিম আমলার বাবা মোহামেদ আমলা স্থায়ী হন দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমলার। তার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ওই শহরেই। বড় ভাই আহমেদের সঙ্গে খেলতেন ক্রিকেট। এমনকি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কাওয়াজুলু নাটাল দলে খেলেন আমলা। ভাই আহমেদ বেশিদূর যেতে না পারলেও হাশিম ঠিকই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রেখেছেন। শুধু পা রাখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, হয়ে ওঠেন নিজের সময়ের সেরা ব্যাটারও।
ল্যান্স ক্লুজনার, ব্যারি রিচার্ডসদের মতো হাশিম আমলার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ডারবান হাই স্কুলে। ক্রিকেটার তৈরির ওই কারখানা থেকে ২০০১-০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলে জায়গা পান। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আসতে সময় নেন মাত্র এক বছর। ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকের বছর তিনেক পর জাতীয় দলে তার দরজা খুলে যায়। এর আগে অভিষেক মৌসুমে ৮ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরিতে জানান দেন ছড়ি ঘোরাতে এসেছেন। যদিও ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর দলে পাকাপোক্ত হতে তার সময় লেগেছে প্রায় দুবছর। ২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ১৪৯ রানের ইনিংসের পর পোক্ত হয় তার জায়গা। এরপর থেকে টেস্টে তার শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
টেস্ট অভিষেকের আরো বছর দুয়েক পর সীমিত ওভারে জায়গা পেলেও তার নামের পাশে সেঁটে ছিল টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। তবে এই ফরম্যাটেও তার জায়গা পোক্ত করতে সময় লাগে দুবছর। ২০১০ সালে ভারত সফরে নিজের পারফরম্যান্সে জানান দেন রঙিন পোশাকেও পারফর্ম করতে পারবেন। ভারত সফরেই জানান দেন সব ফরম্যাটে খেলার যোগ্য। ওই বছর ওয়ানডে ও টেস্টে দুই ফরম্যাটে তার ব্যাটে আসে হাজারের ওপর রান। ওয়ানডে দলে জায়গা পোক্ত হওয়ার পর দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে দুই, তিন, চার ও পাঁচ হাজার রানের মালিক হন। ওয়ানডেতে ধারাবাহিক আমলা টেস্টও খেলেছেন সমানতালে। ২০১৩ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন। প্রথম প্রোটিয়া হিসেবে করেন ট্রিপল সেঞ্চুরি।
নিজের ব্যাটিংয়ে বিশ্ব মাতানো আমলা অধিনায়কত্বও করেছেন। ২০১১ সালে ওয়ানডে ও টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন। সেই দফায় ব্যর্থ হয়ে ছেড়ে দেন। পরে ২০১৫ সালে আবারও পান দায়িত্ব। এই দফাতেও ব্যর্থ। অধিনায়কতত্বে ব্যর্থ হলেও ব্যাটিংয়ে মনোযোগ থেকে তার দৃষ্টি একবিন্দুও সরেনি। ততদিনে পুরো বিশ্ব জেনে ফেলেছে তার বীরত্বগাথা।
ক্রিকেট মাঠের আমলা ধর্মীয় বিষয়েও বেশ মনোযোগী। ইসলামে নিষেধ আছে, তাই জার্সিতে কোনোদিন মাদক কিংবা অ্যালকোহল-জাতীয় পানীয়র লোগো নিয়ে খেলেননি। বোর্ডকে এর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। কিন্তু তবুও নিজের বিশ্বাস এবং আমল থেকে একবিন্দুও সরে আসেননি। ম্যাচ জেতার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে শ্যাম্পেইনের বোতল খুলে উল্লাস করার একটা রেওয়াজ রয়েছে। সেই উদযাপন থেকে দূরে থাকতেন হাশিম আমলা। এক ধারাভাষ্যকার অযাচিতভাবে তাকে এক সময় ‘সন্ত্রাসী’ তকমাও দিয়ে বসেন! তবুও নিজের লক্ষ্য থেকে একবিন্দুও সরেননি আমলা। ধর্ম আর ক্রিকেট চালিয়েছেন একসঙ্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারায় গড়ে ওঠা ক্রিকেট দলের সঙ্গে থেকেও ইসলামি জীবন ব্যবস্থা, ধর্মীয় রীতিনীতি তথা একজন প্রকৃত মুসলিমের জীবনবোধের দারুণ এক নজির স্থাপন করে গেছেন হাশিম আমলা। মাঠে ও ড্রেসিরুমে সঙ্গী সতীর্থরাও তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *