সিলেটে প্রশাসন-চা শ্রমিক ফের বৈঠক
নেতাদের আহ্বান উপেক্ষা করে সারা দেশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে তারা টানা কর্মবিরতি পালন করছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতে শ্রম অধিপপ্তরের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দফায় বৈঠক হলেও সমাধান হচ্ছে না। সর্বশেষ শনিবার (২০ আগস্ট) শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১২০ থেকে ১৪৫ টাকায় মজুরি নির্ধারিত হলে নেতারা ধর্মঘট প্রত্যহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু বেঁকে বসেন সাধারণ শ্রমিকরা। ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
শনিবার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আহ্বানে চা শ্রমিক নেতারা ফের আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানালেও সাধারণ শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। ফলে রোববার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে তারা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
এ পরিস্থিতেতে আজ (রোববার) রাতে ফের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক বসেছে। রাত ৮টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ উদ্দীন আহমদ ও জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নীতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর ১৩ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।
আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। চলমান জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ গত শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দফতর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন। তিনপক্ষীয় এই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা।
বৈঠক শেষে রাজু গোয়ালা গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের মজুরি মাত্র ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে আমরা কেউই সন্তুষ্ট না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত থেকে ফিরে আগামী মাসে আমাদের সাথে বসবেন, আমাদের দাবি দাওয়া শুনবেন- তাই আমরা তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্র্রী আমাদের দাবিগুলো শুনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।
রাজু এসময় আরও বলেন, সারাদেশের কথা জানি না। তবে আমাদের সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। রোববার থেকে তারা কাজে যোগ দেবেন।
বৈঠক সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে রোববার থেকে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।
কিন্তু রোববার সকাল থেকে সিলেটের বাগানগুলোতে দেখা যায় আগের মতোই সুনসান নিরবতা। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের আহ্বানকে উপেক্ষা করে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রবিবার দুপুর ১২টায় মহানগরীর লাক্কাতুড়া ও মালনিছড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা মিছিলসহকারে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হন। এরপর তারা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় চা শ্রমিকরা বুকে ও পিঠে ‘৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে’ লিখে বিক্ষোভ করেন।
অবরোধের কারণে এসময় সিলেট-বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধের কবলে পড়েন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। এসময় আন্দোলনকারীরা শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার কথা তার কাছে তুলে ধরেন। জবাবে শফিকুর রহমান চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে দুইদিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। তবে তারা দু’দিনের জন্য সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে, চলমান আন্দোলনে বাইরে থেকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। রোববার দুপুরে সিলেট মহানগরীর লাক্কাতুরা চা বাগানের সামনে শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন- ‘চা শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে জড়িত থাকার কারণে শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তকেও সম্মান জানাতে হয়। তাই শোকের মাসকে সম্মান জানিয়ে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলাম। মনে হচ্ছে- আমাদের আন্দোলনে বাহির থেকে বিভিন্ন সংগঠন ঢুকে পড়েছে। আমাদের চা শ্রমিকদের বাহির থেকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। যদি কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, ভাঙচুর বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় তবে তার দায়ভার চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে হিসেবে আমি নিবো না।’
Related News
স্থানীয় স্কাউট নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা: জুলাই- আগস্টে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদেরকে কাজ করতে হবে, আমিনুল ইসলাম
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সদস্য (১) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই- আগস্টে যারা জীবনRead More
কোম্পানীগঞ্জে ব্যবসায়ীর জমি দখল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ব্যবসায়ীর জমি দখল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সিলেটRead More