Main Menu

১০ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জুবের আহমদ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের সাতজমি এলাকার একটি টিলার পাদদেশে পরিবার নিয়ে বাস করতেন জুবের আহমদ। নিজের জমিতেই ছিল কাঁচা ঘরটি। ঘরের লাগোয়া উঁচু টিলা। সোমবার ভোরে সেই টিলা ধসে পড়ে জুবেরের ঘরের উপর।

বটেশ্বর বাজারের একজন মুদি দোকানী জুবের আহমদ। ১০ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি।

প্রতিদিনের মতো রোবাবার রাতেও দোকান বন্ধ করে ঘরে এসে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন জুবের। সেই ঘুম থেকে আর জাগা হয়নি তার। সোমবার সকালে নিজের ঘর থেকেই স্ত্রী-সন্তান ও ভাবিসহ জুবেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

চারদিন ধরে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। ভারি বৃষ্টির কারণে ধস নামে টিলাটিতে। টিলার উপরের গাছপালাও ধসে পড়ে ঘরের উপর। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৪ জন। ওই পরিবারের আরও ৫ সদস্য আহত হন। তবে আহতরা আশংকামুক্ত আছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে সাতজমি এলাকায় দেখা যায়, টিলা ধসে পড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে জুবেরদের ঘর। টিলার মাটি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে জমেছে কাঁদা।

টিলা ধসে আহত হয়েছেন জুবের আহমদের বাবা আব্দুল করিমও। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘ঘুমের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারলাম না।’

আব্দুল করিম বলেন, ‘ভোরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি সব ভেঙে পড়েছে। আমি মাটিতে পড়ে আছি। আমার ছেলে, নাতি, ছেলের বউরা তো ঘুম থেকে আর উঠলোই না।

দুর্ঘটনায় জুবের আহমদ ছাড়াও তার স্ত্রী সুমি বেগম, ৫ বছর বয়সী ছেলে সাফি আহমদ ও ভাবি শামীমারা বেগম মারা যান।

জুবেরদের প্রতিবেশী সাবুল আহমদ। টিলা ধসের খবর পেয়ে ভোরেই তিনি ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।

সাবুল বলেন, ‘ভোরে এসে আমরা দেখি ঘরসহ টিলা ভেঙে পড়েছে। তিনটি মরদেহ আমরাই উদ্ধার করি। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসলে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করি।’

জুবের আহমদরা দীর্ঘদিন ধরেই টিলার পাদদেশে ঘর করে বসবাস করছেন বলে জানান সাবুল।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এই ইউনিয়নে অনেক পরিবারই টিলার উপরে বা পাদদেশে বসবাস করেন। তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

এ দিকে নিহতদের দাফনে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের চিকিৎসায় ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম। এছাড়া তাদের শুকনো খাবারও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইউএনও বলেন, ‘পরিবারটি এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের অন্যত্র পুণর্বাসন করা হবে।’

 






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *