Main Menu

আমিরাতের ‘অস্ত্রবাহী’ জাহাজ দখল করলো হাউছিরা

লোহিত সাগরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকাবাহী একটি জাহাজ দখল করে নিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র হাউছি যোদ্ধারা। তাদের দাবি, এই জাহাজে করে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করা হচ্ছিলো।

সোমবার এক টুইটবার্তায় হাউছি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সামরিক মুখপাত্র ইয়াহইয়া সারি এই তথ্য জানান।

টুইটবার্তায় ইয়াহইয়া সারি বলেন, জাহাজটি ইয়েমেনের হোদাইদা বন্দরের উপকূলে ‘ইয়েমেনের সমুদ্রসীমায় অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করে’ এবং শত্রুতামূলক আচরণ করে।

রাওয়াবি নামের এই জাহাজটি দখল করে নেয়ার ঘটনা আমিরাতের জাহাজে হাউছিদের আক্রমণের নতুন এক ঘটনা।

এর আগে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর অধীন ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস এই জাহাজ দখলের কথা জানায়। তবে তাদের বার্তায় অজ্ঞাত এক জাহাজের ওপর মধ্যরাতে হামলার কথা জানানো হয়।

জাহাজ চলাচল নজরদারি করা ওয়েবসাইট মেরিনট্রাফ্রিক ডট কম জানিয়েছে, রাওয়াবি নামের জাহাজটি কয়েক ঘণ্টা স্যাটেলাইটে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো ডাটা দিচ্ছিলো না।

এর কয়েক ঘণ্টা পর, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে রাওয়াবি নামের এই জাহাজটিতে হামলার খবর জানানো হয়। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়, জাহাজটিতে হাউছিরা ‘সশস্ত্র দস্যুতামূলক’ কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।

সৌদি সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, জাহাজটিতে ইয়েমেনের দ্বীপ সোকোতরা থেকে সৌদি এক অস্থায়ী জাহাজ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।

সৌদি জোটের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুর্কি আল-মালকির বিবৃতির বরাত দিয়ে ওই খবরে বলা হয়, ‘হাউছি যোদ্ধাদের অবশ্যই উচিত অবিলম্বে জাহাজটি ছেড়ে দেয়া, না হয় জোট বাহিনী শক্তির ব্যবহারসহ এই সহিংসতা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এর আগে ২০১৬ সালে আমিরাতের জাহাজ সুইফট-১ ইরিত্রিয়া-ইয়েমেনে দেশটির দুই সামরিক ঘাঁটিতে চলাচলের সময় লোহিত সাগরে হাউছি যোদ্ধাদের হাতে আক্রান্ত হয়।

২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।

বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।

ছয় বছরের বেশি সময় চলমান এই গৃহযুদ্ধে হাউছি নিয়ন্ত্রিত সানাকেন্দ্রীক উত্তর ইয়েমেন ও বন্দর নগরী এডেনকেন্দ্রীক দক্ষিণাঞ্চলীয় সরকারের অধীন দক্ষিণ ইয়েমেনে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

২০২০ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সৌদি মধ্যস্থতায় দক্ষিণের সব শক্তিকে একত্রিত করে নতুন এক ঐক্য সরকার গঠন করা হয়। সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি ও আমিরাতের সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এসটিসিকে একত্রিত করে এই সরকার গঠিত হয়।

ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ-সংঘাতে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বেসামরিক লোকজন। এছাড়া যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ।

ছয় বছরের টানা যুদ্ধ ও অবরোধে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ইয়েমেন। ইতোমধ্যে ক্ষুধায় ৫০ হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। ইয়েমেনের চলমান পরিস্থিতিকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম মানবসৃষ্ট মানবিক সংকট হিসেবে হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসঙ্ঘ।

সূত্র : আলজাজিরা






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *