Main Menu

ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না মধ্যবিত্ত : বিপাকে ব্যাংকাররা

দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময়জুড়ে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে। এতে নতুন শিল্প কারখানা তো হচ্ছেই না, বরং বিদ্যমান অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পণ্যের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। চাকরি হারিয়ে জীবনের তাগিদে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছেন। সংসারের অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে উচ্চ সুদে ঋণ নেয়া ভোক্তা ঋণের কিস্তি অনেকেই পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে বিপাকে পড়ে গেছেন ব্যাংকার ও সাধারণ ঋণগ্রহীতা। ব্যাংকগুলো নিরুপায় হয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার ভোক্তা ঋণ রয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি ব্যক্তিপর্যায়ের ঋণ। এসব ঋণে কোনো জামানত নেয়া হয় না। এসব ঋণ দেয়া হয় ছোট ব্যবসায়ী ও বেতনভুক্ত বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। করোনার কারণে অনেক ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অনেকেই। এতে বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ। অনেকের বেতনভাতা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি আছে বেতন নেই। এমনি পরিস্থিতিতে এসব ঋণের গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

ব্যাংকগুলো শিল্প ঋণের পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য ভোক্তা ঋণও বিতরণ করে থাকে। প্রধানত চারটি খাতে ভোক্তা ঋণ দেয়া হয়। ক্রেডিট কার্ড, ভোক্তাপর্যায়ে অটো কার, ফ্ল্যাট বা বাড়ি করার ঋণ ও ব্যক্তিপর্যায়ের ঋণ। এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিপর্যায়ের ঋণ শতভাগই জামানতবিহীন। চালু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনভাতার বিপরীতে এসব ঋণ দেয়া হয়।

ভোক্তাপর্যায়ের সব ঋণই প্রায় জামানতবিহীন। এ জন্য এ ঋণের সুদহার বেশি। যেমন- ক্রেডিট কার্ডের সুদ ২৫ শতাংশের নিচে নেই। ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। অন্য ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রেও সুদ ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। যেখানে শিল্প ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ রয়েছে। আর এ ভোক্তা ঋণের বেশির ভাগ গ্রাহকই অতি সাধারণ শ্রেণীর। ব্যাংকগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য মুনাফা আসে এ অপ্রচলিত খাত থেকে। প্রতিটি ব্যাংকেরই এ খাতে ঋণ আদায়ের জন্য আলাদা একটি শক্তিশালী টিম রয়েছে। এ খাতের কেউ কিস্তি পরিশোধে দেরি করলে গ্রাহককে ফোন, চিঠিসহ নানা উপায়ে পেরেশান করে তোলেন ব্যাংকাররা। এ কারণে ভোক্তা ঋণে খেলাপি ব্যাংকিং খাতের অন্য যেকোনো ঋণের চেয়ে কম।

ব্যাংকাররা জানান, গত বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ভোক্তা ঋণ আদায়ে ভাটা পড়ে। প্রায় ১৫ মাস হতে চলল করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগেরই আয় কমে গেছে। কারো ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। কারো অফিস বন্ধ। কোনো কোনো গ্রাহক চাকরি হারিয়েছেন। যাদের চাকরি আছে তাদের বেশির ভাগেরই বেতনভাতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কারো আবার চাকরি আছে বেতন নেই। এসব কারণে গ্রাহকের আয় কমে যাওয়ায় ভোক্তা ঋণ আদায়ে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ রাজধানীতে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। কেউবা চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কারো আবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলেই ভোক্তা ঋণ গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না। এমনি পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে গেছেন ব্যাংকার ও গ্রাহক। আয় না থাকায় ব্যাংকের ঋণ যেমন পরিশোধ করতে পারছেন না গ্রাহক, তেমনি ব্যাংকেরও অন্যতম আয়ের খাত বন্ধ হয়ে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। সবমিলে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় পাচ্ছেন না অনেকেই।

ব্যাংকাররা জানান, গত মার্চ মাস পর্যন্ত সবশ্রেণীর ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতা ছিল। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ না করলেও কাউকে খেলাপি করা যেত না। কিন্তু মার্চ মাসের পর থেকে ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি করতে হচ্ছে। এতেই ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *