অভিনেত্রী আশার মৃত্যু, প্রধান আসামিকে নির্দোষ বললেন নিহতের মা
অভিনেত্রী আশা চৌধুরী হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে নির্দোষ বললেন নিহতের মা পারভীন আক্তার। গত ৪ জানুয়ারি রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় আশা। ঘটনার পরপরই শামীম নামের একজনকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। ঘটনার আটদিন পর মঙ্গলবার নিহতের পরিবার জানিয়েছে, তথ্য বিভ্রাটে শামীমকে আসামি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাভীন আক্তার বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমাদের মনে হয়েছে, শামীমের এখানে দোষ নেই।’
গত ৪ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে টেকনিক্যাল মোড় দিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন আশা চৌধুরী। সে সময় পেছন থেকে একটি ট্রাকের ধাক্কায় মোটরবাইক থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন আশা। এতে তার মাথা থেঁতলে যায়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক শামীম আহমেদকে প্রধান আসামি করে দারুস সালাম থানায় সড়ক পরিবহণ আইনে মামলা করেন আশার বাবা আবু কালাম। ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরো এক-দুজনকে আসামি করা হয়। আশার বরাত দিয়ে পরিবারের অভিযোগ ছিল, নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় ফেরার কথা থাকলেও শামীম ফেরেননি। পরিবার আড়াই ঘণ্টার হিসাব পাচ্ছিলেন না। সেজন্য তাকেই প্রধান আসামি করা হয়। কিন্তু এখন আশার পরিবারের অভিযোগ বদলেছে, বদলেছে অবস্থানও। মামলা থেকে শামীমকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যাপারেও ভাবছে আশার পরিবার।
অভিনেত্রী আশার মা পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে রাতে হত্যা করা হয়েছিল তখন আমাদের মনে হয়েছিল এ হত্যাকাণ্ডে শামীম আহমেদ জড়িত। কারণ, সে সময় শামীম আমাদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারছিলেন না। একেক সময় একেক কথা বলছিলেন। ফলে আমাদের সন্দেহ জন্মেছিল। কিন্তু পুলিশের উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এখানে শামীমের কোনো দোষ নেই। ট্রাকটি পেছন থেকে ধাক্কা না দিলে আমার মেয়ের কিছু হতো না। শামীম নির্দোষ। মামলা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছি আমরা। নির্দোষ ছেলেকে ক্ষতি করে আমার কোনো লাভ নেই।’
পারভীন আক্তার বলেন, ‘শামীম আহমেদ আমাদের পুরো পরিবারের সাথে অনেকদিন ধরে জড়িত। সে আমার মেয়েকে কখনো নাম ধরে ডাকত না। ওদের সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনের মতো। নানা কাজে শামীম আশাকে সহযোগিতা করত। আমরা শামীমের সাথে কথা বলেছি। শামীম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। এবং ওই দিনের সব ঘটনা আমাকে খুলে বলেছে। সব মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে শামীম দোষী না।’
ঘটনার পরে আপনি দাবি করে বলেছিলেন, আড়াই ঘণ্টার হিসাব পাচ্ছেন না এবং ওই আড়াই ঘণ্টা তারা কোথায় ছিল, সে তথ্যও দিতে পারেননি শামীম। সেজন্য তাকে প্রধান আসামি করেছিলেন। এখন কী সময়ের হিসাব পেলেন-এমন প্রশ্নে অভিনেত্রী আশার মা বলেন, ‘ঘটনার পরপরই নানা রকম কথা বলেছিল আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা। এ ছাড়া শামীমের কথা-বার্তায় নানা অসঙ্গতি দেখে আমাদেরও মনে হয়েছিল সেই দোষী। সেজন্য তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আমার মেয়ের হয়তো কোনো কাজ ছিল, সেজন্য তাদের বাসায় ফিরতে দেরী হয়েছিল। শামীম যদি দোষী না হয়ে থাকে, তাহলে তার ক্ষতি করে আমাদের লাভ নেই।’
পারভীন আক্তার বলেন, ‘আরো সাত-আট বছর আগে আমার ছেলে মারা যায়। সেখান থেকে শামীম আমাদের অনেক কাজে সহযোগিতা করে। তারপরও যদি সে দোষী হয়, তাহলে তা তদন্তে প্রমাণিত হবে।’
এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়ের আহমেদ বলেন, ‘অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, আসামিপক্ষের সঙ্গে বাদীপক্ষের সমঝোতা হয়। সেক্ষেত্রে তো পুলিশের কিছু করার থাকে না। তবে মামলা তুলে নেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অনাপত্তিপত্র দেয়ার সুযোগ রয়েছে। আর মামলা তুলে নেয়ার ব্যাপারে ওই পরিবারের সাথে আমার কথা হয়নি। আমরা ট্রাকচালককে ধরার চেষ্টা করছি।’
এদিকে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহান আহম্মেদের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি এই ব্যাপারে কথা বলতে চাননি।
তবে গত ৬ জানুয়ারি সোহান আহম্মেদ বলেছিলেন, ‘টানা চার ঘণ্টা ধরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলাম। ফুটেজে দেখা গেছে, একটি ট্রাক পেছন থেকে শামীমের মোটরসাইকেলকে মেরে দেয়। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পরে আশা ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় প্রধান আসামি শামীমকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তারপর তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে পাঠানোর আগে শামীম আমাদের বলেছেন, তিনি নির্দোষ। তারা দুজন রাতে একসাথে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। তারপর বাসায় ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মামলায় ট্রাকচালককে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে। এখনো ট্রাকের খোঁজ মেলেনি।’
এদিকে অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর মৃত্যুতে তার পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত রোববার হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিরুপণে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেও রুল চাওয়া হয়েছে।
আশার মা পারভীন আক্তার হাইকোর্টে এ রিট আবেদনটি করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী আনিচুর রহমান।
রিটে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
প্রায় চার বছর আগে টেলিভিশন নাটকে আশার অভিনয়ে আসা। অভিনয়কেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। শিল্পী হিসেবে বিটিভির তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। চার বোনের মধ্যে আশা ছিলেন সবার বড়।
রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলোজিতে (বিইউবিটি) আইন বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারে পড়াশুনা করতেন আশা। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলায়।
Related News
শর্তসাপেক্ষে ‘ফারাজ’ চলচ্চিত্র মুক্তির অনুমতি দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট
ঢাকার হোলি আর্টিজানে ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলিউড মুভি ‘ফারাজ’-এরRead More
শনিবার পর্দা উঠছে ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসবের
আগামী শনিবার পর্দা উঠছে নবম ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসবের (ডিআইএমএফএফ)। দুইদিনব্যাপী এ উৎসবে বিশ্বেরRead More