Main Menu

ছাতক ও দোয়ারাবাজা সুরমা নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী খননে মেগা প্রকল্প শুরু

ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ ও নদী খনন মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পরিকল্পিত এই মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- সুরমা নদীর ডান তীর ছাতকের লক্ষীবাউর থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলার পরিষদের কমপ্লেক্স পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার জায়গায় সিসি ব্লক স্থাপন এবং ১৮ কিলোমিটার নদী খনন। আধুনিক সিসি ব্লক তৈরী করে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হওয়ায় সুরমার আগ্রাসন থেকে মুক্তির নতুন স্বপ্ন দেখছেন ভাঙন কবলিত লাখো মানুষ।

সরেজমিন গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুরমা নদীর ডান তীরের ভাঙনে ইতোমধ্যে ছাতকের লক্ষীবাউর থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলার অনেক গ্রাম, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। নৈনগাঁও, বেতুরা, বাউসা, লক্ষ্মীবাউর, ছাতক-দোয়ারা সড়কসহ পাশের কয়েকটি গ্রাম একের পর এক ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সুরমার করাল গ্রাসে হুমকিতে রয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের কয়েকটি ভবন।
স্থানীয়রা জানান, অতীতে ভাঙন রোধে যেসব কাজ হয়েছে, তা নদী ভাঙন রোধ করতে পারেনি। ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বহু বসতঘর, বাজারের দোকানপাট, পাকা সড়ক, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভিটাবাড়ি হারিয়ে পথে বসেছেন গ্রামগুলোর অনেক পরিবার।

নদী ভাঙ্গনের শিকার নৈনগাঁও এর আসিক মিয়া জানান, দোয়ারা উপজেলা পরিষদের সামনের অংশে ১০০ মিটারের মতো পাকা সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙন থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের দূরত্ব ১০০ থেকে ১৫০ হাত হবে। এর পাশেই রয়েছে পরিষদের প্রশাসনিক ও কয়েকটি আবাসিক ভবন, মসজিদ, পাঠাগার, উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়। খেয়াঘাট এলাকায় তার দোকানসহ গত কয়েক বছরে এখানে অন্ততঃ ৩০টি দোকানঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। বছরের পর বছর এই ভাঙন হচ্ছে। ভাঙন রোধে কয়েকবার কাজ হয়েছে। কিন্তু নদীর তীব্র ভাঙনের তুলনায় সেসব কাজ ছিলো দুর্বল, তাই ভাঙন রোধ করতে পারেনি। বর্তমানে যেভাবে সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে আমরা নদী ভাঙনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো।

মাঝের গাঁও এর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম জানান, প্রথম দফা তার বাড়িতে নদী ভাঙন দেখা দিলে তিনি এখান থেকে সরে এসে অন্য জায়গায় ঘর করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা তার পুরো ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন তিনি রাস্তায় ঘর বানিয়ে পরিবার নিয়ে আছেন। নুরুল ইসালাম বলেন, শুনেছি প্রায় ২শ’ কোটি টাকার প্রকল্প এসেছে। ভাঙন এলাকায় বসানোর জন্য খুব মজবুদ করে প্রচুর ব্লক তৈরী করা হয়েছে। এগুলো বসানো হলে আর নদীর বাম তীর ড্রেজিং হলে মানুষ আর ঘরবাড়িহারা হবেনা।

পুর্ব মাছিমপুর গ্রামের রাজু দাশ বলেন, নদী ভাঙন তাদের জন্য অভিশাপ। প্রতি বছরই ঘরবাড়ি, দোকান, স্থাপনা নদী কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি তাদের থাকার দুইটা ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সুরমা নদীর ছাতক-দোয়ারা অংশটা তুলনামূলকভাবে গভীর। এখানে নদীর বাঁক বামদিক ছেড়ে ডানদিক নিয়েছে। ফলে বাম দিকে ভরাট হচ্ছে এবং ডানদিকে তীব্র ভাঙন হচ্ছে। এখানে নদী শাসন এবং ভাঙ্গণ সংরক্ষণ পরিকল্পিত ব্যয়বহুল একটি কাজ। চলমান টেকসই প্রকল্পটি ১৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে। সিসি ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণ ও নদীর ভরাট অংশ খনন কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৩ সাল নাগাদ এই কাজ সম্পন্ন হবে। এ কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষ নদী ভাঙন সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।

দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক জানান, সুরমার ডান তীরের ভাঙন রোধে পরিকল্পিত উন্নত মানের একটা মেগা প্রকল্পের দরকার ছিলো। এর জন্য ২০০১ সাল থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকবার সংসদে দাঁিড়য়ে ভাঙন কবলিত মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা বলেছেন। অনেকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবদের সরেজমিন এনে বিহীত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু, এই কয়েক বছরে ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ হয়েছে। এসব কাজ নদী ভাঙ্গন রোধ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যে পরিমাণ বরাদ্দ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকভাবে কাজ করেন, তাহলে সুরমার ডান তীরের মানুষের নদী ভাঙন সমস্যা চিরতরে দূর হবে।

এ বিষয়ে ছাতক-দোয়ারা নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ছাতক-থেকে দোয়ারা সুরমা নদীর ডান তীরের ভাঙ্গন প্রকট আকার ধারণ করেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে বর্তমান সরকার বিভিন্ন সময়ে সুরমা নদী ড্রেজিংসহ অনেক কাজ করেছে। কিন্তু, নদী ভাঙ্গন রোধ করা যায়নি। ফলে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক, লক্ষীবাউর বাজার, দোয়ারা উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ বিভিন্ন গ্রাম ও স্থাপনা হুমকীর মুখে পড়ে। তিনি বলেন, ২০০০-০০০১ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে ৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করিয়ে এনে কাজ করা হয়। এর পর ২০০৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় কাজ হয়েছে। তবে, সুরমার ডান তীরের ভাঙন রোধে পরিকল্পিত ও উন্নত কাজ করতে একটি বড় আকারের প্রকল্প বরাদ্দের প্রয়োজন ছিলো। এর জন্য কয়েক বছর থেকে চেষ্টার ফলে বর্তমান প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের কাজ ছাড়াও নদী ভাঙন নিয়ে আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে। সবগুলো কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলে নদী ভাঙন থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।
২৮ জানুয়ারী ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার আওতাধীন সুরমা নদীর ডান তীরে অবস্থিত দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লক্ষীবাউর ও বেতুরা এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। নদীর তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের জন্য ১৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন একনেকের চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ৫ জানুয়ারী নদী তীর সংরক্ষণে ব্লক বসানো কাজের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) এসএম শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সরকারের সকল দপ্তরের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সুনাম রয়েছে। বর্তমান প্রকল্পটি গুরুত্বসহকারে স্বচ্ছতার সাথে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা হবে। সরকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এই এলাকার মানুষ নদী ভাঙ্গনে আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

দৈনিক সিলেটের ডাক






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *