ভারতে এবার চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত না খেতে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ
ভারতের বিজেপিশাসিত রাজ্য আসামে চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত না খেতে দেয়ার দাবিতে ধর্না-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন হিন্দুত্ববাদীরা।
সোমবার উগ্রহিন্দুত্ববাদী বজরং দল ও অন্য সংগঠনের সদস্যরা ওই ইস্যুতে গুয়াহাটিতে রাজ্য চিড়িয়াখানার বাইরে প্রতিবাদে সোচ্চার হন।
মঙ্গলবার এনডিটিভি হিন্দি ওয়েবসাইটে প্রকাশ, বিজেপি’র বিতর্কিত নেতা সত্যরঞ্জন বরার নেতৃত্বে এদিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। হিন্দুত্ববাদীরা এসময়ে বাঘ-সিংহকে খাওয়ানোর জন্যে আনা গরুর গোশত বহনকারী গাড়ি আটকে গরুর গোশত খেতে দেয়া বন্ধ করার দাবিতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
তাদের দাবি, গরুর গোশতের পরিবর্তে অন্য গোশত দেয়া হোক বাঘ-সিংহকে! তাদের পরামর্শ সম্বর হরিণের গোশত দেয়া যেতে পারে বাঘ-সিংহকে।
আসামের গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় থাকা মাংসাশী প্রাণীদের গরুর গোশত খেতে দেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র বিতর্কিত নেতা সত্যরঞ্জন বরা। রাজ্য বিজেপি’র কিষাণ মোর্চার সাবেক সহ-সভাপতি সত্যরঞ্জন বরা বলেন, চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা এবং আসাম সরকার যদি গরুর গোশত দেয়া বন্ধ না করে, তবে তাদের এর পরিণতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিজেপি নেতা সত্যরঞ্জন বরা গত রোববার দিসপুরের প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গরুর গোশত বিক্রি করার একটি কারণ হচ্ছে চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তুকে গরুর গোশত দেয়ার ব্যবস্থা করা। চিড়িয়াখানার জীব-জন্তুকে পদ্ধতিগতভাবে কারো পৃষ্ঠপোষকতায় গরুর গোশত খাওয়ানো যাবে না। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকের উদ্দেশ্যে সত্যরঞ্জন বরা বলেন, ‘আপনারা অন্তত চিড়িয়াখানায় থাকা পশুগুলোকে গরুর গোশত খাওয়ানো বন্ধ করুন।’
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার আসামের অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটসের (এপিসিআর) রাজ্য কমিটির সদস্য ও রাজ্য লিগ্যাল সেলের কনভেনর আহমদ আলী বড়ভুঁইয়া রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এটার কোনো যুক্তি নেই। খুবই হাস্যকর ব্যাপার। আসলে আগামী নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদীরা (বিজেপি) ধরাশায়ী হবে। সেজন্য যেদিকে যা পাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরই প্রেক্ষিতেই সত্যরঞ্জন বরাকে দিয়ে এটা করানো হচ্ছে। কারণ আসামে গরুর গোশত নিষিদ্ধ নয়। বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত দেয়া যাবে না বলে দাবি তোলা হয়েছে। বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেছেন, তাহলে কী বাঘ সিংহকে আমরা কেক খাওয়াবো? স্বাভাবিকভাবে যারা সমজদার মানুষ তারা এটা নিয়ে হাসাহাসি করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরণের সাম্প্রদায়িক ভিন্ন ষড়যন্ত্র করার জন্য এরা এসব প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, ওই ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার ডিএফও তেজস মরিস্বামী অবাক হয়েছেন ঘটনায়। তিনি বলেন, গোশত বহনকারী একটি গাড়িকে আটকে দেন হিন্দুত্ববাদীরা। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
চিড়িয়াখানার রেঞ্জ অফিসার বলেন, কোনো জন্তুকে কী ধরণের খাবার দেয়া হবে সেজন্য কমিটি রয়েছে। আচমকা কেউ প্রতিবাদ জানালে বাঘ-সিংহের খাবার পাল্টে দেয়া যায় না।
আন্দোলনকারী হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, সরকার যখন বলছে দেশজুড়ে গরু জবাই বন্ধ করতে হবে, তখন চিড়িয়াখানায় কীভাবে গরুর গোশতের জোগান দেয়া হয়? বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্যরা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেন, বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত খাইয়ে ‘হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত’ দেয়া হচ্ছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেছেন, বাঘ-সিংহ তো আর কেক-বিস্কুট খায় না। ওই বন্য জন্তুদের চিড়িয়াখানায় রাখতে গেলে তাদের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাবার দিতেই হবে। গরুর পরিবর্তে মোষের গোশত দেয়া যায়। কিন্তু মোষ তো পর্যাপ্ত নয়। সাধারণত দেখা যায় বাঘ জনপদে এলে গরু মেরে খায়। এটা ওই জন্তুর স্বাভাবিক খাদ্য। বাঘ-সিংহের পরিবর্তে হরিণের গোশত দেয়া হলে আইনের জাল জড়িয়ে যেতে হবে বলেও বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য মন্তব্য করেন।
সূত্র : পার্সটুডে
Related News
নিজেকে বিজয়ী দাবি ট্রাম্পের
ম্যাজিক ফিগারের একদম কাছাকাছি রয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেজন্যRead More
সিলেটে সাবেক আইনমন্ত্রী, মেয়র ও এমপিসহ ২৫৮ জনের নামে মামলা
সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ আবু তুরাব জামে মসজিদের সামনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওRead More