Main Menu

নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন!

ইসরাইল বাহিনী গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রাখলেও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বাড়ছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ স্থানীয় সময় ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়) তার সিকিউরিটি ক্যাবিনেটের সভা ডেকেছেন। সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায়ই এই বৈঠকের উদ্দেশ্য বলে ইসরাইলি মিডিয়া জানিয়েছে।

নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত এই সভা সম্পর্কে কিছু বলেননি। তবে বুধবার তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি গাজাকে শান্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন না।
অন্য দিকে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস কর্মকর্তারা বুধবার সিএনএনকে বলন, তারা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি আসন্ন, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হতে পারে।
এদিকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এখন বলছে যে তারা গাজায় যেসব টার্গেটে আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিল, তা প্রায় সবই সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

গাজার বড় বড় ভবন কেন ধ্বংস করল ইসরাইল?

গত ২০ বছর ধরে যে ভবনটিতে কাজ করছিলেন, সেটিই যখন ধসে পড়ছিল, অবিশ্বাস ভরে সে দিকে তাকিয়েছিলেন রামি আলদ্রেইমলি। মঙ্গলবার বিকেলে ক্ষেপণাস্ত্র ‘হুঁশিয়ারি’ দেয়ার পরপরই আল আওকাফ ভবনটিতে বোমা হামলা চালানো হয়। গাজা উপত্যকায় গত কয়েক দিন ধরে বিরামহীন হামলায় যেসব ভবন ধ্বংস করা হয়েছে, এটি তার একটি।

গাজা সিটির পশ্চিম প্রান্তের পাঁচ তলা ভবনটিতে গাজার সর্বপ্রাচীন ও সবচেয়ে বিখ্যাত মিডিয়া প্রডাকশন প্রতিষ্ঠান মাশরেকসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল এখানে।

মাশরেকের ৪৩ বছর বয়স্ক নির্বাহী পরিচালক আলদ্রেইমলি বলেন, ‘এটা স্রেফ একটি কোম্পানি নয়। এটা একটা স্বপ্ন। আমি স্বপ্নের জন্য কাজ করছিলাম। আমাদের কর্মী ছিল ৬০ জন।’

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি বিজ্ঞাপন ও ফটোগ্রাফি, ফিল্ম প্রডাকশন ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করত।

তিনি বলেন, এখানে কাজ করা ছিল অনেকের কাছে স্বপ্ন। আমরা ছিলাম একটি পরিবারের মতো।

তিনি মনে করেন, ভবন ধ্বংস করার প্রভাব কেবল বস্তুগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অবশ্য, অফিসের ভেতর যেসব মূল্যবান সামগ্রী থাকে, সেগুলো বিবেচনা করলে বস্তুগত ক্ষতিও কম নয়।

তিনি বলেন, বিষয়টা কেবল টাকার নয়। এটা ছিল আমাদের কাজ করার জায়গা, বিকশিত হওয়ার জায়গা, স্মৃতি নির্মাণের জায়গা। আমরা নিজেদের জন্য এই স্পেস তৈরী করেছিলাম। টাকার ক্ষতি পূরণ করা যায়, কিন্তু আমরা যেখানে দশকের পর দশক কাজ করেছি, যার সাথে আমাদের ব্যক্তিগত স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তা জঞ্জালের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে না।

গাজা সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ১০ মে বোমা বর্ষণের পর থেকে গাজার ছয়টি হাই রাইজ ভবনের সবগুলোই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। হামলায় অন্তত ১৮৪টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। আর মিডিয়ার ৩৩টি অফিস গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ইসরাইলি বিমান হামলায় আল জাজিরা ও এপির অফিস-সংবলিত ভবন আল-জালা টাওয়ারও ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল সাফাই হিসেবে বলছে, এখান থেকে হামাসের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মোহসেন আবু রামাদান বলেন, বেসামরিক এলাকা ও অবকাঠামো ধ্বংস করা ইসরাইলের নতুন কোনো কৌশল নয়। আগের হামলাগুলোতেও তারা কাজটি করেছে।

তিনি বলেন, তবে এবার করা হয়েছে অনেক বেশি।

আবু রামাদান বলেন, এসব টার্গেট সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ প্রভাব সৃষ্টি করে। ইসরাইল মনে করছে, এই ক্ষতির ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা হামাসকে ইসরাইলে রকেট হামলা বন্ধ করতে চাপ দেবে, হামাসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে। আর তাতেই লাভবান হবে ইসরাইল।

কিন্তু তা হচ্ছে না। গাজা সিটির মেয়র ইয়াহিয়া আল-সারাজ বলেন, গাজার ভয়াবহ ক্ষতি করে ইসরাইল চাচ্ছে আমাদের জনগণের মনোবল, দৃঢ়প্রত্যয় গুঁড়িয়ে দিতে।

তিনি বলেন, কিন্তু আমি যত লোকের সাথে মিশেছি, বিশেষ করে যারা বাড়িঘর ও স্বজন হারিয়েছে, তারা সবাই আমার সামনে দৃঢ়প্রত্যয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা জানে, এই আক্রমণ কেবল গাজা যুদ্ধের কারণেই হয়নি। বরং তা পশ্চিম তীর ও জেরুসালেমে ইসরাইলি দখলদারিত্বের সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশবিশেষ।

আর কেবল ভবন নয়, টেলিকমিউনিকেশন লাইন, ইলেকট্রিসিটি গ্রিড, স্যুয়ারেজ সিস্টেম, পানি সরবরাহ লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিচ এলাকার ক্যাফে, কারখান, বাণিজ্যিক দোকানপাট, দাতব্যকেন্দ্র, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রেহাই পায়নি। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩২২.৩ মিলিয়ন ডলার।

মেয়র সারাজ বলেন, তারা আমাদের অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিতে চায়। আমাদের তরুণরা যাতে আরো হতাশায় ডুবে যায়, আরো আশাহীন হয়ে পড়ে, সেজন্যই এ কাজ করা হচ্ছে।

ফটোজেনিক বোমা হামলাঃ
ইসরাইলি দৈনিক হারেজের কলামিস্ট গিডেন লেভি বলেন, হাই রাইজ ভবনগুলোতে বোমা হামলার বিষয়টি টেলিভিশনে দারুণ দর্শনীয় ব্যাপার। ইসরাইলি জনসাধারণও বেশ উল্লাসে এসব দৃশ্য দেখেছে।
লেভি আল জাজিরাকে বলেন, গাজার টাওয়ারগুলোতে বোমা হামলা একটি বিরাট প্রদর্শনী। একমাত্র এসব দৃশ্যই ইসরাইলি টিভিতে বারবার দেখানো হয়।

তিনি বলেন, টাওয়ারগুলোর ধ্বংস একেবারেই ফটোজেনিক। এর মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়, ইসরাইল কত শক্তিশালী। ইসরাইলি পাইলটরা কত স্মার্ট যে তারা একটি বা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই পুরো টাওয়ারটি ধসিয়ে দিতে পারছে।

তবে লেভি বলেন, এসব প্রদর্শনী আসলে দুর্বলতার চিহ্ন। ইসরাইল কাজটি করছে এটা দেখাতে যে কেউ তাদের থামাতে পারবে না।
তিনি বলেন, ইসরাইলি টেলিভিশনে কিন্তু এসব ভবন বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, তা দেখানো হয় না।

ধ্বংসস্তুপ থেকে জেগে ওঠাঃ
আর গাজায় আল-সারাজ বলেন, ফিলিস্তিনিদের মনোবল আগের মতোই জোরালো রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, তরুণরা সবসময়ই এসব সঙ্কট থেকে উত্তরণে সৃষ্টিশীল উপায়ে নিয়োজিত হয়। তিনি গাজা সিটিকে ফিনিক্স পাখির সাথে তুলনা করেন। এই কল্পকথার পাখিটি ছাই থেকে প্রতিবারই আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে আসে।

তিনি বলেন, গাজা ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তুপ থেকে আত্মপ্রকাশ করছে, জীবনে ফিরে আসছে।

আলদ্রেইমলি বলেন, প্রতিটি ইসরাইলি হামলা ফিলিস্তিনিদেরদ আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ করে।

তিনি বলেন, গত ১২ মে আমার ৭৬ বছর বয়স্ক বাবাকে হত্যা করা হয়। তিনি তখন নামাজ পড়ছিলেন। আমি এখন আমার সঙ্গী হারিয়েছি। এগুলো বিরাট ক্ষতি। কিন্তু আমার প্রত্যয় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।

তিনি আবারো কাজে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

তিনি বলেন, যে দিন আমাদের ভবনটি ধ্বংস করা হয়, ওই দিন থেকেই অসংখ্য লোক ও কোম্পানি তাদের নিজেদের অফিসকে আমাদের জন্য ছেড়ে দিতে চেয়েছে, যাতে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখতে পারি।
তিনি বলেন, বিষয়টি হৃদয়বিদারক। আর তা এটাই প্রমাণ করে যে ইসরাইল আমাদের স্মৃতিকে মুছে ফেলতে পারবে না।

সূত্র : আল জাজিরা






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *