Main Menu

অগ্নিকান্ডের কারণে ৩১ ঘণ্টা অন্ধকারে অন্য এক সিলেট

এ যেন অন্য এক সিলেট । সর্বত্র ভূতুড়ে পরিবেশ। বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করছেন নগরবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিদ্যুত নিয়ে নানা রকম তথ্যের আদান প্রদান। বিদ্যুত বিভাগের স্পষ্ট কোন ঘোষণা না থাকায় সবাই ছিলেন চরম উদ্বিগ্ন। কোন এলাকায় কখন আসবে বিদ্যুত এমন হাজারো প্রশ্নের ছড়াছড়ি। এরই মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নগরীর কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে উঠে। তখন অন্য এলাকায় ছিল চাপা উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যুতের দাবীতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন দক্ষিণ সুরমা এলাকার লোকজন। তখনো বিদ্যুত আসেনি সুরমার দক্ষিণ পারে। তবে বিদ্যুত বিভাগের লোকজন প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এদিকে বিদ্যুৎ গ্রিডে অগ্নিকা-ের কারণে দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টা সিলেট ছিল অন্ধকারে। এ সময়ে ছিল না পানিও। অসহনীয় যন্ত্রণা পোহাতে হয় সিলেটের মানুষকে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অবিরাম চেষ্টায় বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে স্বাভাবিক হতে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে। এদিকে, দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে সিলেট। পানির জন্য চলে হাহাকার। টাকা দিয়েও পানি পাননি ভুক্তভোগী মানুষ। গত দু দিন গোটা নগরীতে পানির জন্য মানুষকে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। সিলেটে বিদ্যুৎ বিপর্যয় রোধে আগে থেকে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি হতবাক করেছে সবাইকে। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সিলেটে বিদ্যুৎ নেই। কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ উপকেন্দ্রে আগুন লাগার কারণে সিলেটের প্রায় ৮ লাখ মানুষ ছিলেন বিদ্যুৎ বঞ্চিত। আগুনে দু’টি বড় আকৃতির ট্রান্সমিটার পুড়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- এতে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সিলেট বিভাগের অপর তিন জেলার কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা গেলেও গত দুইদিন ধরে সিলেট ছিল পুরোপুরি অন্ধকারে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে সিলেটে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। কোথায়ও নেই পানি। কেউ কেউ ডোবা, ছড়া এবং পুকুরের পানির সন্ধান করতে থাকেন। আবার সুরমা নদীতেও যান অনেকেই। এই অবস্থায় সকাল হতেই সিলেটে পানি সংকট আরো প্রবল হয়ে ওঠে। সিলেটের পাড়া-মহল্লায় লোকজন কলস, বালতি হাতে ছুটাছুটি করেন। কোথাও কোথাও জেনারেটর ব্যবহার করে মটর দিয়ে পানি তুলতে দেখা যায়। এতে করে বিপুলসংখ্যক মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। দোকানে থাকা খাবার পানি কিনে নিয়েও সংকট দূর করতে পারেননি নগরবাসী। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংকট কাটাতে করপোরেশনের গাড়িযোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি দিতে দেখা গেছে। কাউন্সিলর সহ জনপ্রতিনিধিরাও নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে জেনারেটর দিয়ে উত্তোলিত পানি সরবরাহের চেষ্টা করছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানিয়েছেন- নগরীতে পাম্পগুলোর একটি জেনারেটর চালিত। সেটি থেকে মেয়রের তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সিলেট স্থবির হয়ে পড়ে। সরকারি অফিস-আদালতেও ছিল ছুটির আমেজ। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কাজকর্ম বন্ধ ছিল অফিস-আদালতে। ব্যাংকেও লেনদেন ছিল সীমিত আকারে। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারেন নি। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী মোকাম্মিল হোসেন জানিয়েছেন- বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সর্বাত্বক চেষ্টা করেছি আমরা। গত বুধবার গাজীপুর থেকে একটি ট্রান্সমিটার নিয়ে আসা হয়। সেটি স্থাপনের পর বিদ্যুৎ আসে নগরীর কিছু এলাকায়। তিনি জানান, আমরা মানুষের দুর্ভোগ লাগবে আপাতত সমাধানের চেষ্টায় রয়েছি। সিলেটের কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ উপকেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি (পিজিসিবি) সঞ্চালন-২ এর প্রধান প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সদস্য প্রকৌশলীকে রাখা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হলো, তা খতিয়ে দেখছেন। আগুনে পুড়ে বিকল হয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফরমার দু’টি মেরামতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পিজিসিবি, পিডিবি ও আরইবি’র টিম সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *