স্বাগত ১৪৩২ বাংলা

কঠিন এক অসুখ আঁকড়ে ধরেছে পৃথিবীকে। সময়গুলো ক্রমশ রক্তপাতের দিকে এগুচ্ছে। আবার সেই পৃথিবীর একদল মানুষ শান্তির পক্ষে মসজিদে, মন্দিরে প্রার্থনায় চোখ ভিজিয়ে যাচ্ছে। রাজা যায়, রাজা আসে, তবু যেন আসে না শান্তি। শান্তি কবে আসবে কেউ জানে না। সেই প্রতীক্ষার বছর যায়, বছর আসে। মানুষও আশায় বাঁচে। সেই আশার বনে আজ ফুল ফুটেছে, পয়লা বৈশাখের, নতুন বছরের। স্বাগত ১৪৩২ বাংলা। বিদায় ১৪৩১।
নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা, গাছে গাছে রঙ ছড়ানো আবির মাখা দিন। নতুন এক সকাল পাখা মেলেছে আজ বাংলার উঠোনে। প্রিয় সেই রোদ ঝলমল সকাল আমাদের স্বপ্ন দেখাবে। আমাদের খরায় প্লাবিত অবারিত বৃক্ষের বাগানে বৃষ্টির সুরভী ঢেলে দেবে। আমাদের পথ দেখাবে, নিয়ে যাবে দূর থেকে আরো দূরে। আমরা পুরনোকে ভুলে নতুন করে লিখবো জীবনের নাম।
আমাদের সব-ই আছে, আবার অনেক কিছু নেই। কিছুদিন আগেও আমাদের জন্মভূমির উপর দিয়ে বয়ে গেছে বৃহৎ এক প্রলয়। সেই প্রলয়ে পুরনো রাজা রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছেন। ঝড় থামার পর দেশের মানুষ খুব সুন্দর একটি সকাল যে উপহার পেয়েছেন, সেটিও বলা যাচ্ছে না। অথচ মানুষ তেমনটি চেয়েছিলো। মানুষ চেয়েছিলো নতুন একটা গল্প।
গাজার সর্বনাশ হচ্ছে, মানুষ কাঁদছে। বাংলাদেশের মানুষও দেখিয়ে দিয়েছে, মানবতার পতাকা উড়িয়েছে। আমরা সংকটে এক কাতারে দাঁড়াই, আমরা বিরানভূমিতে জেগে উঠার গান গাই, আমরা কবিতা লিখি নতুন বাংলাদেশের।
আমরা জানি, অন্ধকার দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রাত শেষে আলো আসবেই। আমরা সংকট পাড়ি দিবো, সম্ভাবনার সবগুলো দুয়ার খুলে দিবো। আমরা অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছি। ইতিহাসও আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। সেই শিক্ষাকে অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে যাবো। নইলে অন্ধকার থেকেই যাবে, পথ ফুরাবে না।
পহেলা বৈশাখ বাঙালির একমাত্র সার্বজনীন উৎসব। যে উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ গেয়ে উঠেÑ এসো, এসো হে বৈশাখ…।
আজ চিরায়ত নিয়মে হালখাতা খুলবেন ব্যবসায়ীরা। মিষ্টি মুখ করানোরও রেওয়াজ আছে। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানবসমাজে নানান রূপে এই বৈশাখ উদযাপিত হয়ে আসছে। আর সময়ের বিবর্তনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তি রচনা এবং ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির বিকাশে বৈশাখ রাখছে বড় ভূমিকা।
বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো আচার অনুষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন আয়োজন। তবে কালের আবর্তে অনেক কিছু সমাজজীবন থেকে হারিয়ে গেলেও হারায়নি কিছু আদি ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় গ্রামে বৈশাখকে বরণ করতে বাড়িঘর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করবেন গৃহিণীরা। শহরেও ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন সবাই। অনেকে নতুন পোশাকে সাজবেন। দিনটিকে ঘিরে গ্রাম-গঞ্জে থাকে মেলা, নৌকাবাইচ, লাঠিখেলাসহ ঐতিহ্যবাহী আয়োজন।
ষাটের দশকে রমনার বটমূলে শুরু হয় বৈশাখ উদযাপন। এর মাধ্যমে বাঙালি আপন পরিচয়ে সামনে আসার সুযোগ পায়। পরবর্তী সময়ে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে পয়লা বৈশাখের। এক সময় পয়লা বৈশাখ মূলত উদযাপিত হতো ব্যবসায়ীদের হালখাতা, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রামীণ মেলা- এ সবের মাধ্যমে। এখন উৎসবের বৈচিত্র্য ও ব্যাপ্তি বেড়েছে। এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখ বাঙালির চেতনাকে শাণিত করুক, বাঙালির অগ্রযাত্রা কে করুক বৈচিত্র্যময়।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারো সিলেটে বড় আয়োজন রেখেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি। সংগঠনের উদ্যোগে আজ সকাল সাতটায় শতকন্ঠে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হবে। তবে এবার ব্লু-বার্ড স্কুলে নয়, অনুষ্ঠান হবে সারদা হল প্রাঙ্গণে। সকাল ৮টায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সিলেটের জেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সিলেট সার্কিট হাউজ থেকে বের হয়ে ব্লু-বার্ড স্কুলে এসে সাংকৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। সকাল দশটায় কুমারপাড়াস্থ সিলেট আর্ট এন্ড অটিস্টিক স্কুলে থাকছে বিশেষ শিশুদের আনন্দ উৎসব।
একইভাবে উৎসবের আয়োজন করেছে আনন্দলোক। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত কেওয়াপাড়াস্থ শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণে তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।
Related News

সিলেটের সড়কে ঝরলো শিক্ষিকার প্রাণ, গুরুতর আহত বিজিবি সদস্য ভাই
সিলেটের জকিগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন মোটরসাইকেল আরোহী এক স্কুল শিক্ষিকা। এ ঘটনায় গুরুতর আহতRead More

সিলেট নগরের ৬ থানায় অনলাইন জিডি সেবা চালু
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে আর ঝামেলায় পড়তে হবে না সিলেট মহানগর এলাকার ছয়টি থানার বাসিন্দাদের।Read More