Main Menu

ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকা উদাও পথে বসেছেন বড়লেখার পারফিউম ব্যবসায়ী

বড়লেখার সুজানগরের এক পারফিউম ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়েছে ইসলামী ব্যাংক, বড়লেখা শাখা। একটি অসাধু চক্র ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতায় জালিয়াতির মাধ্যমে তার জমা রাখা ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী, বড়লেখার তন্নি আগর এন্ড আতর ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারি কামরুল ইসলাম।

শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে বড়লেখায় আগর আতরের ফ্যাক্টরি দিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যবসা করে আসছি। কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে নতুনভাবে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় কিছুদিন আগে ধার দেনা করে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এনে নতুন একাউন্ট খুলে ব্যাংকে জমা রাখি। কিন্তু টাকা জমা রাখার ২২ দিন পর ব্যাংকে গিয়ে নতুন বিনিয়োগের আলাপ শুরু করলে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ কর্তা ব্যক্তিরা জানান আমার টাকা ব্যাংক উঠিয়ে নিয়েছে।’

এ বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা গোঁজামিলের আশ্রয় নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘চেক জালিয়াতি করে সম্পূর্ণপ্রতারণা করে ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে একটি চক্র আমার এই টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকের বড়লেখা শাখা ও সিলেটের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার আলোচনায় বসলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’ এর আগে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে একই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে নির্মম ও অমানবিক আচরণ করে কর্তৃপক্ষ।

তিনি জানান, ব্যবসার জন্য ইসলামী ব্যাংক বড়লেখা শাখা থেকে তিন দফায় ৭০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে মন্দা ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তখন ইসলামী ব্যাংকের মামলায় তাকে দফায় দফায় কারাগারে যেতে হয়। কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে ইসলামী ব্যাংক আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ব্যাংকের দায় দেনা শোধ করতে গিয়ে আমি আমার ঘরবাড়ি, ফ্যাক্টরি বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি।

পরবর্তীতে আমার আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় ব্যাংকের সমূদয় পাওনা এক কোটি ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি।’ ব্যবসায়ী কামরুল জানান, কোম্পানির নামে তিনি ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর ইসলামী ব্যাংক বড়লেখা শাখা থেকে ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ গ্রহণ করেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পরে ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট আরও ২৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ নেন। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে তার ব্যবসা ভালোভাবে চলতে থাকে এবং ব্যাংকের সাথে লেনদেনও সন্তোষজনকভাবে চলতে থাকে।

এ কারণে ব্যবসার উন্নতি অগ্রগতি দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে তার বিনিয়োগটি ৪৮ লক্ষ থেকে ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত করেন। তবে, ২০১৮ সালে পারফিউম বা আগর-আতরের মূল বাজার মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ বিস্তার ছড়িয়ে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে ব্যাংকের সাথে তিনি লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে ব্যর্থ হন। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের জন্য শতকরা ২% জমা দিয়ে রিসিডিউলের সার্কুলার জারি করলেতিনি নিয়ম অনুযায়ী তিনি ৭০ লাখ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে ২ লাখ টাকা জমা দেন। কিন্তু ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার তাকে বাড়তি আরও এক লাখ টাকা দিতে বলেন।

ব্যাংকের এই অনিয়ম আমি মানতে অস্বীকৃতি জানালে বিনিয়োগটি আর রিসিডিউল করা হয়নি। কামরুল ইসলাম বলেন,‘বিনিয়োগ গ্রহণের সময় আমার কাছ থেকে প্রায় ১৪৩টি চেকের সাদা পাতা তারা জমা নেওয়া হয়। আমার বিনিয়োগটি রিসিডিউল না করার কারণে এটি একপর্যায়ে ক্লাসিফাইড হয়ে যায়।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন,‘এরপর তারা একে একে ৮টি চেক ডিজনার মামলা করেন। এসব মামলায় ওরায়েন্ট করিয়ে আমাকে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়। আমাকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় যাযাবরের মতো। এতকিছুর পরও তারা ক্ষান্ত হয়নি। আমি এবং আমার স্ত্রীর উপর তারা অর্থঋণ মামলা করে চরম বিপদগ্রস্ত ও হয়রানি করতে ওঠেপড়ে লাগে।

এ সময় পুলিশের তাড়া, মামলার খরচাপাতি মেটানো এবং ব্যাংকের অব্যাহত হয়রানির মুখে আমি আমার পারফিউম ফ্যাক্টরি ও নিজের বাড়িঘরের একটি অংশ বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায় আত্মীয় স্বজনদের বাসাবাড়িতে জীবনযাপনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হই।’ ৮টি মামলার গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি হওয়ার পর দুই দফায় কামরুলকে কারাবরণ করতে হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। তিনি জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন অমানবিক বর্বর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল তিনি অবশিষ্ট ঘরবাড়ি, সহায় সম্বল ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে ব্যাংকের সমুদয় পাওনা এক কোটি ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

এই টাকাগুলো ইউসিবিএলের বড়লেখা শাখার ০৭১৩২০১৬৩-৮২৯ নং একাউন্ড থেকে ১৭ এপ্রিল ৩৬ লাখ ৫০ হাজার, এনআরবি ব্যাংক বড়লেখা শাখার ৩০৮১০১০০০০১৬২ নং একাউন্ট থেকে একই তারিখে আরও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার এবং কোর্টের আদেশে সোনালী ব্যাংক মৌলভীবাজার প্রধান শাখায় কোড নং ৬২১৪১০০০০৮৩৫১-এ ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং বাকী টাকা নগদ পরিশোধ করি। এই সমূদয় পাওনা পরিশোধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার যে জমি বিনিয়োগের বিপরীতে মর্গেজ নিয়েছিল তা আমাকে ফিরিয়ে দেয় এবং যে পাওয়ার অব এটর্নিসহ জমির যাবতীয় দলিলপত্রও ফিরিয়ে দেয়। পরে ৭ মে আদালত থেকে আমার ও আমার স্ত্রীর উপর যে অর্থঋণ মামলা ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, সবকিছু ঠিক থাকলেও দুঃজনক বিষয় হলো- ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নুরুজ্জামান, সহকারী ব্যবস্থাপক রহমত উল্লাহ, বিনিয়োগ অফিসার কামাল, এসবিআইএস অফিসার আব্দুল জলিল, আব্দুল আজিজসহ একটি চক্র মিলে আমার বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতির ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

আদালত থেকে আমার চেক ডিজনার মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র ব্যাংকের কাছে পৌঁছালেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও ম্যানেজারসহ সবাই মিলে বৈঠক করে যাবতীয় পাওনা পরিশোধের পূর্বে তারা আমাকে বলেছিল সমূদয় পাওনা পরিশোধ করে দেওয়ার পর আমার উপর থেকে সকল মামলা নিজ দায়িত্বে আদালত থেকে প্রত্যাহার করিয়ে নেবে এবং ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ব্যাংক থেকে আমাকে আবারও বিনিয়োগ সুবিধা করে দেবে।

তিনি আরও বলেন,‘পাওনা পরিশোধের পর তাদের আচরণ বদলে যায় এবং তারা একের পর এক অমানবিক ও অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে থাকে। ব্যাংকের সমূদয় পাওনা পরিশোধের পরও অর্থঋণ মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলো তারা প্রত্যাহার করেনি। মামলাগুলো প্রত্যাহার দূরের কথা উল্টো পুরোনো অনেক মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করানো হয়। পুলিশ আমাকে আবারও গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। আমার আত্মীয় স্বজন পরিবারের লোকজন আদালতের পাওনা পরিশোধ করে আমাকে জেল থেকে মুক্ত করেন।’ তিনি জানান, এখনো এনআই এ্যাক্টের ৪টি মামলা কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কঠোর ভাষায় জানায় যে, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করণীয় নেই। কামরুল বলেন, একপর্যায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে ব্যাংকে ডেকে নিয়ে আমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে নতুন করে বিনিয়োগ গ্রহণের জন্য আরেকটি নতুন একাউন্ট খোলার পরামর্শ দেয়। তারা জানান ব্যাংকের সমূদয় পাওনা মেটানোর পর আমাকে নতুন করে বিনিয়োগ প্রদান করবেন। তাদের এই পরামর্শ ও আশ্বাসে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল একাউন্ট খোলার পর তারা নতুনভাবে বিনিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নতুন একাউন্টের চেক বইয়ের বেশ কিছু স্বাক্ষরবিহীন পাতা তাদের কাছে রেখে দেন।

তিনি জানান, ব্যাংকের সমূদয় পাওনা পরিশোধের পর চলতি বছরের ৭ মে আদালত ব্যাংকে যাবতীয় লেনদেনের নিষ্পত্তিপত্র পাঠায়। ব্যাংকের সমূদয় পাওনা পরিশোধের পর নতুন বিনিয়োগের আশায় আমার নতুন একাউন্টে (এমএসএ রেগুলার নম্বর ২৮৪০১০১৯০২৮১৬) ২৭ এপ্রিল ৫০ লাখ ৪৮০ টাকা জমা করি। নতুন বিনিয়োগের আশায় আমি আমার আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে অনেক কষ্ট করে এ টাকাগুলো ব্যাংকে জমা দেই।

ব্যবসায়ী কামরুল অভিযোগ করেন, ‘কয়েকদিন পর নতুন বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করতে ব্যাংকে গেলে ম্যানেজারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান আমার একাউন্টে কোনো টাকা নাই। তাদের এ কথা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।’ নতুন একাউন্টের চেকের যে সব পাতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিয়েছে তাতে তার কোনো স্বাক্ষর ছিলনা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে নেয়া ব্যাংকের স্বাক্ষরবিহীন চেকের পাতা (নম্বর এমএসভি ৮২৮৪৫৩১) দিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার জমা রাখা ৫০ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। যা সুস্পষ্ট জালিয়াতি ও প্রতারণা।

ম্যানেজার নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ব্যাংকের ৪ থেকে ৫ জন কর্মকর্তার একটি চক্র এই জঘন্য প্রতারণা ও আত্মসাতের সাথে জড়িত। এ বিষয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’ সবকিছু হারিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়া পারফিউম ব্যবসায়ী কামরুল এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও টাকা ফেরত পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য একটি ব্যাংক। কতিপয় অসাধু ও লোভী কর্মকর্তার কারণে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের দুর্নাম হচ্ছে। আমার মতো অনেকেই এরকম কতিপয় কর্মকর্তার কারণে নিঃস্ব হচ্ছেন, প্রতারিত হচ্ছেন। ব্যাংকের সুনাম ও গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে এই অসাধু ও লোভী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *