Main Menu

টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে জয় পেলো বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক: আকাঙ্ক্ষার জয়ই পেয়েছে বাংলাদেশ। জয় এনে দিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। কার্যকর ভূমিকা ছিল শামীম হোসেনেরও।

তবে জয়ের তীরে নোঙ্গর ফেলার শেষটা সহজ ছিল না; বরঞ্চ ছিল নাটকীয়তায় ভরা। ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করে সেই নাটকীয়তার জন্ম দেন করিম জানাত। তবে শেষাবধি পা হড়কায়নি টাইগার-বাহিনীর।

সিলেটে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ২ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা ৭ উইকেটে তুলেছিল ১৫৪ রান। জয় তুলে নিতে বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছে শেষ ওভারের পঞ্চম বল পর্যন্ত।

এ ম্যাচের আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড হতাশার অন্য নাম ছিল। ৯ ম্যাচে মাত্র ৩ জয়! তবে অতীতের রেকর্ডে আজ খানিকটা প্রলেপ দিয়েছেন তাসকিনরা।

ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত, শেষটা খানিকটা ছন্নছাড়া। অন্যদিকে ব্যাটিংয়ের শুরুটা হতাশার হলেও শেষটা দারুণই হয়েছে।

আফগানরা ব্যাটিংয়ে ১৬ ওভারে তুলেছিল ১০১ রান। কিন্তু পরের ৪ ওভারে টাইগারদের আলগা বল আর বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগে তুলে ৫৩ রান! অবশ্য মোহাম্মদ নবির ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ভূমিকাই বা অস্বীকার করা যায় কী করে!

শেষের ওই ঝড় জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল সফরকারীদের। বিপরীতে স্বাগতিকদের জন্য ছিল ধাক্কা খাওয়ার মতো। সেই রেশই যেন দেখা যায় লিটন-রনিদের ব্যাটিংয়ে।

ফজলহক ফারুকির বলে ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হয়ে যান রনি তালুকদার (৪)।

খানিক পরে নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরে যান অদ্ভুতুড়ে এক আউটে। মুজিব উর রহমানের বলে স্লগ সুইপের চেষ্টা করেন শান্ত। তবে বল তার শরীরে লেগে ভেঙে দেয় অফ স্টাম্প। আউটের পর যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না শান্ত! নন-স্ট্রাইকে থাকা লিটনের মুখচ্ছবিও ছিল অবিশ্বাসের।

প্রথম পাওয়ার প্লে শেষে আফগানদের রান ছিল ৩ উইকেটে ৪০। বাংলাদেশ করে ২ উইকেটে ৩৭।

তবে পাওয়ার প্লের পরের ওভারেই আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে বেরিয়ে এসে পুল করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান লিটন দাস। মিড অফে রশিদ খান নেন সহজ ক্যাচ। ১৯ বলে দুই চারে ১৮ রান করে বিদায় হন লিটন।

ফরিদ আহমদের আগের ওভারে দুটি চার মেরেছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে এবার সেই ফরিদের বলেই ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক (১৭ বলে তিন চারে ১৯)।

১২ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড ছিল ৪ উইকেটে ৭৯। আরেকটি ওভার শেষ হতেই একলাফে স্কোরবোর্ড দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১০০ রানে! আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা ইনিংসের ১৩তম ওভারে রান আসে ২১! তাওহিদ হৃদয় দুটি আর শামীম হোসেনের ব্যাট থেকে আসে আরেকটি চার।

বাংলাদেশের স্কোরে গতি আসে মূলত এ দুজনের ব্যাটের সুবাদে। তাদের জুটিতে ৫০ রান আসে ৩১ বলে।

এ জুটি ভাঙার সহজ সুযোগ পেয়েছিল আফগানরা। মুজিবের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে শামীমের ক্যাচ ছেড়ে দেন নজিবউল্লাহ জাদরান! শামীম তখন ২২ রানে।

পরে শামীম যখন রশিদ খানের বলে ১৮তম ওভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন, তার নামের পাশে যুক্ত হয় আরও ১১ রান।

শামীম ফিরলেও তাওহিদ হৃদয় ছিলেন অবিচল।

শেষ ওভারে টাইগারদের জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬ রানের। করিম জানাতের করা ওভারের প্রথম বলেই দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে লক্ষ্যটা দুইয়ে নামিয়ে আনেন মিরাজ। এরপরই নাটকীয়তা। পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মিরাজ। শঙ্কা বাড়িয়ে পরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তাসকিন! ক্রিজে আসেন নাসুম। এবং ‘উইনিং শট’ খেলতে গিয়ে তিনিও তুলে দেন ক্যাচ!

করিম জানাতের হ্যাটট্রিক!

২ বলে চাই ২!
তীরে এসে ডুববে বাংলাদেশের তরী?
না!
করিমের পরের বলকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে জয়োল্লাসে মাতান শরিফুল।
হতাশায় পিচে নুইয়ে পড়েন করিম জানাত।

তাওহিদ হৃদয় অপরাজিত থাকেন ৪৭ রানে। তার ৩২ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও দুটি ছয়।

করিম জানাতের ঝুলিতে ওই হ্যাটট্রিকের তিন উইকেট জমা হয়। মুজিব, ফারুকি, রশিদ, আজমতউল্লাহ ও ফরিদ প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট।

এর আগে বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। নাসুম, তাসকিনদের আঘাতে একের পর এক প্যাভিলিয়নের পথ ধরছিলেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। তবে মোহাম্মদ নবি ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে বদলাতে থাকে আবহ। তার সঙ্গে আজমতউল্লাহ ও নজিবুল্লাহের দারুণ সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পেয়ে যায় আফগানরা। লড়াকু ফিফটি তুলে নেন নবি।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তাসকিনের বলে ফিরতে পারতেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে কঠিন ক্যাচ শেষপর্যন্ত তালুবন্দি রাখতে পারেননি রনি তালুকদার। জীবন পাওয়া গুরবাজ ওই ওভারের শেষ বলে তাসকিনকে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কায় উড়ান।

পরের ওভারের প্রথম বলেই নাসমুকে স্লগ সুইপে কাউ কর্নার দিয়ে ছক্কা হাঁকান হজরতউল্লাহ জাজাই। কিন্তু পরের বলেই স্কয়ার লেগে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে (১০ বলে ৮)।

ইনিংসের চতুর্থ আর নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে গুরবাজের কাছে বাউন্ডারি হজম করেন তাসকিন। আগের ওভারে ছক্কা, এই ওভারে চার খেয়ে যেন তেতে ওঠেন এই পেসার। তাসকিনের আগুনে ওই ওভারের পঞ্চম বলে বিদায় নেন গুরবাজ। তাসকিনের একটু অ্যাঙ্গেলে করা স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হন গুরবাজ। পুল করতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ তুলে দেন মিরাজের হাতে। ফেরার আগে ১১ বলে দুই চার, এক ছয়ে ১৬ রান করে যান গুরবাজ।

পরের ওভারে শরিফুল ইসলাম এসে তৃতীয় বলে ছক্কা হজম করেন ইবরাহিম জাদরানের কাছে। তবে পরের ব্যাক অব লেন্থের বলে অতিরিক্ত বাউন্সে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন জাদরান (৬ বলে ৮)। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেও ইবরাহিম জাদরানকে আউট করেছিলেন শরিফুল!

অষ্টম ওভারে সাকিবকে ছক্কায় উড়াতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন করিম জানাত। মিড অফে দারুণ ক্যাচ নেন শান্ত।

মোহাম্মদ নবির সঙ্গে নজিবুল্লাহ জাদরানের জুটি জমে ওঠেছিল। সেই জুটি ভাঙেন মিরাজ। চতুর্দশ ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজকে বাউন্ডারিতে পাঠান নজিবুল্লাহ জাদরান। তবে পরের বলেই পাল্টা আঘাত হানেন মিরাজ। স্কুপ করতে গিয়ে সিদ্ধান্ত বদলে ড্যাব করতে যান নজিবুল্লাহ। গড়বড় হয়ে যাওয়ায় ইনসাইড-এজে বল প্যাডে লেগে ক্যাচ ওঠে। উইকেটের পেছনে থাকা লিটন ক্ষিপ্রতায় ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন। তিন চারে ২৩ বলে ২৩ রান করেন নজিবুল্লাহ। তার বিদায়ে নবির সঙ্গে ৩৭ বলে ৩৫ রানের জুটিও ভাঙে।

ইনিংসের ৮৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে আফগানরা। প্রত্যয়ী মোহাম্মদ নবির সঙ্গে যোগ দিয়ে আজমতউল্লাহ ওমরজাই হয়ে ওঠেন আগ্রাসী। নবি তাসকিনের একই ওভারে দুবার বল পাঠান গ্যালারিতে। আজমতউল্লাহ মোস্তাফিজকে ছক্কা হাঁকান লং অফ দিয়ে।

উনিশতম ওভারে সাকিবের প্রথম দুই বলকেই উড়িয়ে দেন আজমতউল্লাহ। তৃতীয় বলে ডাবলের পরের দুই বল ডট। শেষ বলে ফের উড়াতে যান আজমতউল্লাহ। তবে এবার গড়বড় হয়ে যায় টাইমিংয়ে। অনেকটা দৌড়ে এসে শর্ট থার্ডে দারুণ ক্যাচ নেন তাসকিন। ১৮ বলে চার ছয়ে ৩৩ রানে থামেন আজমতউল্লাহ।

মোহাম্মদ নবির সঙ্গে আজমতউল্লাহর জুটিতে ৩৭ বলে আসে ৫৬ রান। দুর্দান্ত খেলা নবি শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মোস্তাফিজকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে তুলে নেন ৩৯ বলে ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটা তার পঞ্চম ফিফটি।

শেষ ওভারের পঞ্চম বলে রশিদ খান ফিরে যান লং অনে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৭ উইকেট ১৫৪ রানে থামে আফগানিস্তান। নবি ৪০ বলে ছয়টি চার ও একটি ছয়ে ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

নাসুম ৩ ওভারে ২০ রানে ১টি, তাসকিন ৪ ওভারে ২৯ রানে ১টি, সাকিব ৪ ওভারে ২৭ রানে ২টি, মিরাজ ২ ওভারে ১৩ রানে ১টি, শরিফুল ৩ ওভারে ৩০ রানে ১টি এবং মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩১ রানে ১টি উইকেট নেন।

 






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *