Main Menu

সিলেট সিটির নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র নির্বাচিত হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীকে প্রায় দ্বিগুণ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেন তিনি। নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জীবন দিয়ে হলেও সিলেটের মানুষের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করবো। বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার প্রার্থীকে ৬৯ হাজার ১২৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তিনি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নজরুল ইসলাম বাবুল লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। জাপার প্রার্থী ফলাফল প্রত্যাখ্যানের জবাবে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপনারা নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছেন। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। তবে, এজন্য আমাদের কোন নেতা-কর্মী দায়ী না।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র বর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম)-এ সিসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বেলা ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হয় গণনা। রাত পৌনে ১০টায় সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের বেসরকারি ফলাফলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
কে কত ভোট পেলেন:
সিলেট জালালাবাদ গ্যাস অডিটোরিয়ামে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে বুধবার রাতে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ শাহজাহান মিয়া (বাস)। তার প্রাপ্ত ভোট ২৯ হাজার ৬শ ৮৮ ভোট। ভোট বর্জনকারী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) ১২ হাজার ৭শ’ ৯৪ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হানিফ কুটু (ঘোড়া) ৪ হাজার ২৯৬ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশতাক আহমদ রউফ (হরিণ) ২ হাজার ৯৫৯ ভোট ও মোঃ ছালাহ উদ্দিন রিমন (ব্যাট) ২ হাজার ৬ ৪৮। জাকের পার্টির প্রার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম ( গোলাপফুল) ৩ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়েছেন।
ক্লিন সিলেট হবে প্রথম অগ্রাধিকার:
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর রাতে মির্জাজাঙ্গালস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেটকে ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করাই হবে তার প্রথম অগ্রাধিকার। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রেও জোর দেবেন তিনি। সবার প্রচেষ্টায় তিলোত্তমা, স্মার্ট ও ক্লিনসিটি হিসেবে সিলেটকে গড়ে তোলাই হবে তার লক্ষ্য।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছেন- সিলেটের সন্তান হিসেবে আমি আপ্লুত। এই ্ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবো না। জীবন দিয়ে হলেও সিলেটের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। আমি সর্বস্তরের সিলেটের মানুষের স্বপ্ন-প্রত্যাশার সারথি হতে চাই। নগরবাসীর সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। সবার দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারে না বলে তার মন্তব্য। এ বিজয় তিনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, এ বিজয় আওয়ামী লীগের, এ বিজয় সবার।
নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা নিয়ে সিলেটের উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করবো। হান্ড্রেড পার্সেন্ট না হলেও ৯০ পার্সেন্ট প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাবো।
সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-ভূমিখেকোদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মায়ের কোলে শিশু যেমন নিরাপদ তেমনি নগরের মানুষকে সে রকম রাখতে চাই। প্রধানমন্ত্রী দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষকে নিরাপত্তা দিতে না পারলে দেশে বিনিয়োগ হবে না। যুবক ও শিশুদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে চাই। সিলেটের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেসা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
আরিফ-বাবুলের বাসায় যাবেন আজ:
নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, তিনি সিসিকের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার নজরুল ইসলাম বাবুলের বাসায় আজ ফুলের তোড়া নিয়ে যাবেন। সিলেটের উন্নয়নে তিনি তাদের সহযোগিতা চাইবেন।
কামরান থেকে আনোয়ারুজ্জামান:
২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সিসিক নির্বাচনে মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর ২০০৮ সালে কারাবন্দি থাকায় অবস্থায় ফের মেয়র নির্বাচিত হন কামরান। কিন্তু, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন তিনি। কিন্তু, এবার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান আরিফুল হক চৌধুরী। ২০২০ সালের ১৫ জুন অতিমারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কামরানের ইন্তেকালের পর সিসিকের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীতা নিয়ে কিছুটা শূন্যতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় সরকারি দলের ১০ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। এ নিয়ে সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও নির্বাচনী প্রচারণায় শেষ পর্যন্ত দলের নেতারা একজোট হয়ে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণায় নামেন। গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব প্রার্থীকে পেছনে ফেলে বিজয়ী হন তিনি।
জীবন-বৃত্তান্ত:
১৯৭০ সালের ১ জুন সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম তিলাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নৌশা মিয়া চৌধুরী এবং মায়ের নাম মোছা. গহিনুন্নেছা চৌধুরী।
কৈশোরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন তাকে অনুপ্রাণিত করে এবং তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।
ছয় ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সবার ছোট। তিনি পশ্চিম তিলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পড়াশোনা ও রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তিনি দেশে মৌসুমী সমাজকল্যাণ সংঘ ও খেলাঘরের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। বালাগঞ্জ ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে তার রাজনৈতিক সাংগঠনিক দায়িত্বের হাতেখড়ি। ‘সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ’ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্র-মিলনায়তন সম্পাদক পদে বিজয়ী হন। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। প্রবাসে গেলেও দেশ ও মানুষের সাথে সম্পর্কের গভীরতা কমেনি । প্রবাসে রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে তিনি প্রথমে লন্ডন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্যও মনোনীত হন। যুবলীগের রাজনীতি থেকে তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন।

 






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *