‘আমাকে এখন কেউ ডাকে না, বিনোদনে বুড়োদের জায়গা নেই’
জন্ম ভারতের ওড়িশার কটক শহরে। কিন্তু খ্যাতি পেলেন কলকাতায়, ৪৩ বছর বয়সে। ১৯৯২ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম মৌলিক গানের একক অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’। এরপরের ইতিহাস নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন। বাংলা ভাষার প্রতি সুমনের অগাধ ভালোবাসা, যা তিনি হরহামেশাই বলেন। গানেও সেই ছাপ স্পষ্ট।
তবে বাংলাদেশের প্রতিও এই কিংবদন্তির ভালোবাসার ঘাটতি নেই। লাল-সবুজের এই দেশটির সঙ্গে তার আত্মার সম্পর্ক। তাই তো বারবার গানের কথা-সুরে বহুবার তুলে ধরেছেন এই দেশের কথা, সীমান্তের কথা, মানুষের কথা। জানিয়েছেন বিভেদ ভুলে বাঙালিয়ানায় মিশে যাওয়ার আহ্বান।
শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের জন্য বিনামূল্যে কনসার্ট করে গেছেন কবীর সুমন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ার জন্য তহবিল সংগ্রহে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। গান করেছেন গলায় গিটার ঝুলিয়ে। কিন্তু নেননি একটি পয়সাও। পুরো অর্থ তুলে দেন জাদুঘরের জন্য। সেই মানুষটাকেও ঢাকার মাটিতে বারবার অপমানের শিকার হতে হয়েছিল। অবশেষে ১৩ বছরের অভিমান পর্ব শেষে শনিবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ফের প্রাণখুলে গান শুনিয়েছেন সুমন। অধিকারের সুরেই বাংলাদেশ সরকারকে করেছেন অনুরোধ, শ্রোতাদের কাছে রেখেছেন কিছু আবদার।
এদিন আধুনিক বাংলা গান পরিবেশন করেছেন তিনি। তবে গানের ফাঁকে জানালেন, তার জন্মই হয়েছে বাংলা খেয়ালের জন্য। সুতরাং ১৮ অক্টোবরের খেয়াল অনুষ্ঠানে যেন সবাই আসেন, সেই আহ্বান জানান তিনি। এই সূত্রে বাংলা খেয়ালের অন্যতম পথিকৃৎ আজাদ রহমানকে স্মরণ করেন গানওয়ালা।
একই সূত্রে বাংলাদেশ সরকারের কাছেও একটি অনুরোধ জানান কবীর সুমন। বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়া কিন্তু বাংলা খেয়ালের কোনও উপায় নেই। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এখন একবার আবেদন জানাচ্ছি, সেদিন (১৮ অক্টোবর) আরেকবার জানাবো, যদ্দিন বেঁচে থাকবো, জানাবো; বাংলা খেয়ালের পাশে থাকবেন।’
আরও কিছু গানের পর কবীর সুমন শোনালেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মনখুশি করা এক আবদার। আরেকবার বাংলাদেশের মঞ্চে গাইতে চান তিনি। বললেন, ‘এই কথা বাংলাদেশকে বলছি, যদি আপনাদের মনে হয়; আমি আরেকবার অনুষ্ঠান করতে আসবো। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমি আসবো এবং সেই অনুষ্ঠান করতে আমি একটি পয়সাও নেবো না।’
কিছুটা আক্ষেপের সুর নেমে আসে কবীর সুমনের কণ্ঠে। বলে গেলেন, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে পেনশন পাই। এছাড়া কয়েকজনকে আধুনিক বাংলা গান শেখাই, তারা কিছু দেন। তাতেই আমার সংসার চলে। আমাকে এখন কেউ ডাকে না। বিনোদন শিল্পে বুড়োদের জায়গা নেই। বুড়োদের জায়গা আছে ডাক্তারি ও ওকালতিতে। তাছাড়া অনেকে আমায় পছন্দ করেন না নানা কারণে। আমি কথা দিচ্ছি, এই মঞ্চেই যদি সুযোগ হয়, আমি আবার গাইবো বিনামূল্যে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকায় এসেছেন কবীর সুমন। তার এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে। কিন্তু আয়োজক সংস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে ডিএমপির কাছ থেকে অনুমতি মেলেনি। পরে বাধ্য হয়ে একদিনের মধ্যে নতুন ভেন্যু হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ঠিক করা হয়। এখানেই আগামী ১৮ অক্টোবর বাংলা খেয়াল এবং ২১ অক্টোবর আধুনিক বাংলা গান পরিবেশন করবেন ‘তোমাকে চাই’-এর জনক।
Related News
শর্তসাপেক্ষে ‘ফারাজ’ চলচ্চিত্র মুক্তির অনুমতি দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট
ঢাকার হোলি আর্টিজানে ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলিউড মুভি ‘ফারাজ’-এরRead More
শনিবার পর্দা উঠছে ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসবের
আগামী শনিবার পর্দা উঠছে নবম ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসবের (ডিআইএমএফএফ)। দুইদিনব্যাপী এ উৎসবে বিশ্বেরRead More