Main Menu

দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল হওয়া ডেমু ট্রেনের যাত্রা শুরু

আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল হওয়া ডেমু ট্রেন। দীর্ঘদিন পরে এই ট্রেন চালু হওয়ায় খুশি যাত্রীরা। সেই সঙ্গে উচ্ছ্বসিত রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। সফলতা আসায় আরও চারটি ডেমু ট্রেন সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রবিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ডেমু ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এই সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বারিউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোমিনুল করিম প্রমুখ।

উদ্বোধন শেষে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়ার মাধ্যমে আর্থিক সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি ডেমু ট্রেন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন হবে। এই যাত্রা সফল হলে এই প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হবে। এই ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। নতুন প্রযুক্তিতে এই ট্রেন ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। ট্রায়ালে ৩০০ যাত্রীর জায়গায় সাড়ে ৭০০ জন পর্যন্ত যাত্রী নিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের লোকবলের কিছু অভাব ছিল, লোকবল নিয়োগ দেওয়া হলে বাকি ট্রেনগুলোও দ্রুত চালু করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে শুধু রেল নয়, দেশের কোনও উন্নয়ন করতে পারেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রেলপথসহ দেশের সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। যেসব জেলা বা এলাকায় রেল যোগাযোগ নেই, সেসব জেলায় রেলপথ স্থাপনের কাজ চলছে। একটি ডেমু ট্রেন চালু হয়েছে, খুব দ্রুত সব ডেমু ট্রেন সচল করা হবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে নতুন ট্রেন সংযোজন করা হবে এবং রেলে কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে। আগামী নির্বাচনে আবারও প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে দেশকে ডিজিটাল করার দীর্ঘ পরিকল্পনগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

সচল হওয়া ডেমু ট্রেনটি প্রতিদিন রংপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করবে। কর্মদক্ষতা ঠিক থাকলে অন্যান্য রুটেও চলবে ট্রেনটি। এতে খুশি রেলের যাত্রীরা।
নীলফামারী থেকে আসা আরতী রায় বলেন, ‘আমি স্টেশনে দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, ট্রেন নেই। এখানে এসে দেখলাম আবার ডেমু ট্রেন চালু হইছে। এটা খুবই সুখবর। এটি অল্প দূরত্বের ট্রেন। এই ট্রেনটি যদি এখন থাকতো তবে বাড়ি যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হতো না। বাড়ি এতক্ষণ চলে যেতাম। সব ডেমু ট্রেন দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

জয়পুরহাট থেকে আসা নূপুর বলেন, ‘এই ট্রেনের ভাড়া অনেক কম। একইসঙ্গে দ্রুত স্বল্প দূরত্বের স্থানগুলোতে যাতায়াত করা যায়। এই ট্রেন বন্ধ হওয়ায় একটু দুর্ভোগ তো ছিল বটেই। আন্তনগর ট্রেনে চাপ পড়ছিল বেশি। এখন আন্তনগর ট্রেনে চাপ কমবে। আরও একটি গর্বের বিষয়, আমাদের দেশের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এই ট্রেন ঠিক হলো। বাকি ট্রেনগুলো দ্রুত ঠিক করলে ভালো হয়।’

ডেমু ট্রেন দেশীয় প্রযুক্তিতে চালু করার প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই ট্রেন চালুর সাফল্যের পর আরও চারটি ট্রেন চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রেলওয়ে থেকে আমাকে ওই চারটি ট্রেন চালুর জন্য বলা হয়েছে। আমি সেসব ট্রেন পরিদর্শন করেছি। আগামী মাস থেকেই এসব ট্রেন মেরামতের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, চীন থেকে ২০১৩ সালে ৬৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি ডেমু ট্রেন কেনা হয়েছিল। সেগুলো পরিচালিত হতো এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এসব ট্রেনের ২০ বছর মেয়াদ ধরা হলেও আমদানির মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যেই বিকল হতে থাকে। ৯ বছরের মধ্যে ২০টি ডেমু ট্রেনই বিকল হয়ে পড়ে। পরে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান গবেষণা করে দেশীয় প্রযুক্তিতে ডেমু ট্রেন চালু করেন। ইতোমধ্যে এসব ট্রেন ২৯ বার ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। ট্রায়ালে সবগুলোই সফল। বর্তমানে দেশে যে ২০টি ট্রেন আছে সেগুলো চালু করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। চীনা প্রযুক্তিতে এসব সচল করতে ব্যয় হতো প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *