Main Menu

সংকটময় মুহূর্তে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ

ইতিহাসে এমন মুহূর্ত সংকটময় হিসেবে আভির্ভূত হয়। এমন মুহূর্তে পুরো বিশ্ব আতঙ্কে থাকে। এই শতাব্দীতে ২০০১ সালে ৯/১১ হামলা, দুই বছর পর সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন জোটের হামলা, ২০২০ সালে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বে ৬০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং সর্বশেষ ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ফিরিয়ে এনেছে।

শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন অবৈধভাবে দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে নিজ দেশের অংশ বলে ঘোষণা করেন তখন সেটিকে এমন একটি সংকটপূর্ণ মুহূর্ত বলে মনে হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকেও একইভাবে রাশিয়ায় একীভূত করেছিলেন পুতিন।

যুদ্ধ যখন সাত মাসে গড়িয়েছে তখন প্রতিদিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকির কথা শোনা যাচ্ছে। যেকোন উপায়ে নতুন একীভূত ভূখণ্ড রক্ষার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন পুতিন। তাৎক্ষণিকভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের আবেদনের ঘোষণা দিয়েছেন। যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে মুখোমুখি অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

পারমাণবিক হামলার এমন আশঙ্কা ১৯৮০-এর দশকে শেষ সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের সময় শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি সেই আশঙ্কা ফিরিয়ে এনেছে।

ইউক্রেনে রণক্ষেত্রে একাধিক ব্যর্থতার পর পুতিন স্পষ্ট করেছেন, নতুন একীভূত ভূখণ্ডে আক্রমণকে রাশিয়ার ওপর হামলা হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, রাশিয়াকে রক্ষায় তিনি অস্ত্রভাণ্ডারের সবকিছু ব্যবহার করবেন। যার অর্থ দাঁড়ায়, প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন তিনি। পুতিন দাবি করেছেন, তিনি কোনও ধাপ্পা দিচ্ছেন না।

বেলারুশে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত নিগেল গৌল্ড-ডেভিস বলেন, আমরা সংঘাত বৃদ্ধির পর্যায়ে আছি। আগের চেয়ে রাশিয়াকে এখন অনেক চরম বিকল্প বেছে নিতে হবে।

বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর রাশিয়া ও ইউরেশিয়া-বিষয়ক সিনিয়র ফেলো হিসেবে দায়িত্বরত গৌল্ড-ডেভিস বলছেন, প্রচলিত উপায়ে ইউক্রেনের যুদ্ধ জয়ে রাশিয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পুতিনকে সম্ভাব্য পদক্ষেপের ব্যপ্তি ও সীমা বাড়াতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দখলকৃত ভূখণ্ড একীভূতকরণ ও পারমাণবিক হুমকি।

ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়ায় একীভূত করাকে বেশিরভাগ স্বীকৃতি দেবে না। একই সময়ে সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর লাখো রুশ নাগরিক দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

ক্রেমলিনের সাবেক বক্তব্য লেখক থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকে পরিণত হওয়া আব্বাস গালিয়ামভ শুক্রবার রণক্ষেত্রে রাশিয়ার পিছিয়ে পড়ার সঙ্গে ভূখণ্ড একীভূতকরণকে যুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটিকে একভাবে প্রতিক্রিয়া, দৃশ্যত বেদনাদায়ক। ইউক্রেনীয়রা প্রকৃত অর্থে কিছু করছে। আর বিপরীতে ক্রেমলিন বাস্তব বিশ্বে সমর্থ না হওয়ায় ভার্চুয়াল বাস্তবতা তৈরি করছে।

ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে রাশিয়ার পিছিয়ে পড়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পরবর্তী সময়ে পশ্চিমাদের হাতে সবচেয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। অতীতে চেচনিয়া ও সিরিয়াতে রক্তপাতের ঘটনায় গুরুতর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এড়াতে পেরে পুতিন ভেবেছিলেন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়াকে পুনর্গঠন করতে পারবেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আর তা নেই।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মত কোটি ডলারের সামরিক সহেযাগিতায় অনুপ্রাণিত ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ড মুক্ত করছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে, অপ্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করলে মস্কোকে ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হবে।

শুক্রবার ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার যুদ্ধ বারুদের মতো কিংবা এরচেয়ে বেশি বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে: যুদ্ধ বিস্তৃত হওয়ার ফল কি বিশ্বের জন্য ভয়াবহ হবে কিনা, যেমনটি ১৯৩৯-১৯৪৫ সালের পর আর দেখা যায়নি।

সূত্র: এপি






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *