Main Menu

স্বপ্নবাজদের পাশে পুলিশ ও মানবিক টিম সিলেট

মানুষের মৌলিক অধিকার হচ্ছে ছয়টি তার মধ্যে একটি হচ্ছে শিক্ষা। কিন্তু আমাদের দেশে দরিদ্রতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখা এগুতে পারে না আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য। কেউ কেউ আবার জীবন সংগ্রাম বাজি রেখে পড়ালেখা করছে। বর্তমান সরকার স্কুলের পড়ালেখার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।কিন্তু তারপরও বছরের শুরুতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের।

শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় হচ্ছে বছরের শেষ আর নতুন বছর শুরু। এ সময় শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশিত হয়। নতুন বছর শুরুর সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তি হয়। নতুন বই ঘ্রাণ নিতে আগ্রহ নিয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা। বছরের প্রথম দিনেই এক উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয় বই বিতরণের মধ্য দিয়ে। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছরে দেশে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পড়া-লেখা বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরেছে। অনেক পরিবার আছে যারা সন্তানকে ইচ্ছা থাকলেও দরিদ্রতার জন্য স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি।

কঠিন এই মূহুর্তে এমনি কিছু শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নেয় (মানবিক টিম সিলেট)। গরীব-অসহায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষা সামগ্রী ( বই,খাতা,কলম,গাইড), মাসিক বেতনের দায়িত্ব নেয় মানবিক টিম সিলেট। শুধু শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে তা কিন্তু নয়। রয়েছে শিক্ষাবৃত্তি, সেলাই মেশিনসহ নগদ অর্থ প্রদান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুল,মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিয়েছে সংগঠনটি। যেখানে শিক্ষার্থীদের গত বছরের বকেয়া বেতন শুরু করে নতুন বছরে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়।

স্বামী হারা তানহা মির্জা। ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার।স্বামী না থাকায় অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় থাকে। সন্তানদের মানুষ করার জন্য পড়ালেখা করাতে হাজার কষ্ট বুকে নিয়ে একটুও পিছপা হননি তিনি। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তানহা মির্জার বেতন থেকে কাটা পড়লো অর্ধেক টাকা।যে টাকা বেতন পেতেন তা থেকে অর্ধেক হওয়া অভাবের মধ্যে দেখা দেয় মারাত্মক অভাব। পরিবারের এক মাত্র আয়ের জোগান দাতার এই অবস্থায় বন্ধ হতে চলছিল ছেলে মেয়েদের পড়া-লেখা। কিন্তু কথা আছে রাখে আল্লাহ মারে কে। ঠিক ওই সময়ে ছেলে-মেয়েদের ভবিষতের চিন্তা করে নিজের লজ্জা ভুলে কথা বলেন মানবিক টিম সিলেটের প্রধান সমন্বয়ক মো.সফি আহমদ পিপিএম এর সাথে। তানহা মির্জার কথা শুনে তাঁর ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ান।

এইতো শুধু গেল তানহা মির্জার কথা। বাবা হারা এতিম সানজিদা। করোনার কারণে তার পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কাজে পারদর্শী থাকায় নিজের আত্মনির্ভশীলতার জন্য মানবিক টিমের পক্ষ থেকে দেয়া হয় সেলাই মেশিন। সানজিদা এ নগরীর ঘাসিটুলা কর্মজীবি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। তাছাড়া তার লেখাপড়ার সম্পূর্ণ খরচ বহন করে মানবিক টিম। কৃষক পবিারের সন্তান বলে কি স্বপ্ন দেখতে পারবে না নবম শ্রেণীর মিনহাজুর? স্বপ্ন তো যে কেউ দেখতে পারে। মিনহাজুর রহমান রিপন স্বপ্ন দেখেছে।কিন্তু বাবা কৃষক হওয়ায় তার স্বপ্ন প্রায় দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলছিল। তার এই স্বপ্ন পূরণে অংশ নেয় মানবিক টিমের সদস্যরা। বিদ্যালয়ে ভর্তি করে শিক্ষা সামগ্রি উপহার দিয়ে পড়া লেখায় উৎসাহিত করা হয়।

সানজিদা বা মিনহাজুরের মধ্যে আটকে থাকেনি মানবিক টিম সিলেট।এভাবে বাদাম বাগিচার বাসিন্দা নবম শ্রেনীর ছাত্রী ডালিয়া আক্তার ডলি, শাহজালাল উপশহর হাইস্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাইশা, সিলেট সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে চান্স প্রাপ্ত কুলসুমা, সিলেট নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছদ্মনাম(আলিফা), দক্ষিণ সুরমার ফিরোজপুরের দশম শ্রেণীর তাসমিয়া তারান্নুম সামিনা, অষ্টম শ্রেণীর অমিত চন্দ, দক্ষিণ সুরমার মোগলা বাজারের চতুর্থ শ্রেণির মুক্তাদির মিয়া, ছোয়াহিল মিয়াসহ তার চার বোনের দায়িত্ব নেয়া, চার এসএসসি পরিক্ষার্থীর বকেয়া বেতন ও ফরম পূরণ ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুশাহিদ মিয়াসহ অনেক শিক্ষার্থী স্বপ্ন পূরণে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

হাফিজ শামসুল ইসলাম। করোনা কালে বাবা মা দুইজনকেই হারিয়ে এতিম। একে তো এতিম তার মধ্যে হতদরিদ্র। দুজনকে হারিয়ে খুবই বিপাকে পড়েন। ঘরে রয়েছে তার বড় বোন। কিন্তু কি করে চলে তার সংসার আর পড়ালেখা।তার এই দুশ্চিন্তায় ঠিক তখন তার পাশে দাঁড়ায় মানবিক টিম সিলেট। গত দুই বছর থেকে তার লেখাপড়া ও বর্তমান মাদ্রাসায় ভর্তি সহসকল খরচ চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

এছাড়াও সিলেট নগরীর ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থীদের করোনাকালে গত বছরে ঈদের পোশাক, শীতবস্ত্র, সুরক্ষা সামগ্রী ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অসহায় শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পুলিশের নায়েক সফি আহমদ পিপিএম (সেবা)। একেক করে ৬ষ্ঠ বারের মতো ইউসেপ ঘাসিটুলা টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায় সফির মানবিক টিম।

কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন,সমাজে আজও ভালো মানুষ রয়েছে তা জানা ছিল না। কিন্তু এই মানুষ(মানবিক টিমের সদস্য) দেখে আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখছে আমাদের সন্তানরা। অভাব অনটনে যখন পড়া-লেখা বন্ধ হতে চলছিল তখন আমরা তাদেরকে পাশে পেয়েছি।এখনও পাশে পাচ্ছি।

মানবিক টিম সিলেট’র প্রধান সমন্বয়ক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত নায়েক মো.সফি আহমদ পিপিএম (সেবা) বলেন, সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে আমাদের দেশটা আরও এগিয়ে যাবে। এই করোনায় আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। যখন আমাদের কাছে খবর আসে আমরা আমাদের সহযোগীদের জানাই, ফেসবুকে পোস্ট করি।সেখানে প্রবাসী-দেশের অনেক জায়গা থেকে বিভিন্ন জন্য আমাদের সহযোগীতা করেন।তাদের দেয়া টাকা-পয়সা আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দেই। তাদের কাছে আমরা সব সময় কৃতজ্ঞ। আমাদের একটাই চাওয়া স্বপ্নবাজদের পাশে দাঁড়ানো।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *