Main Menu

ভারতে সমাবেশ করে মুসলিমদের হত্যার হুমকি কট্টরপন্থী হিন্দু নেতার

ভারতের হরিয়ানাতে গত মাসে একজন মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের খালাস করিয়ে আনার দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ‘মহাপঞ্চায়েত’ বা জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অন্তত ১০ দিন আগে এরকমই একটি সমাবেশ থেকে মুসলিমদের হত্যা করার ডাক পর্যন্ত দেয়া হয়। এমন ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ার পর হরিয়ানা পুলিশ এখন কিছুটা নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। যিনি এই মুসলিম গত্যার ডাক দিয়েছেন তিনি রাজপুতদের সংগঠন কার্নি সেনার শীর্ষ নেতা। নিজেই তিনি ভিডিওটি নিজস্ব ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। কিন্তু পুলিশ কাউকে এ ঘটনায় এখনো গ্রেফতার পর্যন্ত করেনি।

ওই কট্টরপন্থী হিন্দু নেতা সুরজ পাল আমুর ফেসবুক পেজের দাবি অনুসারে তিনি ক্ষমতাসীন বিজেপিরও বিভিন্ন পদে আছেন। ওদিকে মহাপঞ্চায়েতগুলো থেকে ক্রমাগত হুমকি আসতে থাকায় রাজ্যের মুসলিম সমাজ আতঙ্কে আছেন।

গত ১৬ মে হরিয়ানার খলিলপুর খেডা গ্রামের বাসিন্দা আসিফ খান তার বাড়ি থেকে একটু দূরে সোহনা শহরে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন, তখন তার গ্রামেরই কয়েকজন হিন্দু তাকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পেশায় জিম ট্রেনার আসিফ খানের হত্যাকে পুলিশ অবশ্য সাম্প্রদায়িক হামলা বলে মানতে চায়নি। তারা এটিকে ব্যক্তিগত শত্রুতার পরিণাম বলেই বর্ণনা করছে।

মামলার এফআইআরে মোট ১৪ জনের নাম করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। তাদের মুক্তির দাবিতে লকাডাউনের মধ্যেই রাজ্যে একের পর এক জনসমাবেশ ডাকা হতে থাকে। এর মধ্যে ৩০ মে নূহ-র কাছে মেওয়াট জেলার ইন্দ্রি গ্রামে এমনই একটি সমাবেশে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকেও কট্টরপন্থী হিন্দু বহু লোক এসেছিলেন, কারফিউর মধ্যেও প্রায় ৫০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল সেখানে।

পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কার্নি সেনা সংগঠনের প্রধান সুরজ পাল আমু সেখানে বলছেন, ‘নিহত আসিফ খান আমাদের মেয়েদের, মা-বোনদের অশ্লীল ভিডিও বানাত। তো কেন ওকে মার্ডার করা হবে না? ও ওর কর্মের সাজা পেয়েছে। ওদেরকে ১০০ বার মারব, মায়ের দুধ খেয়ে থাকলে আমাদের আটকাক দেখি!’

এই ধরনের চরম বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করতে থাকে।
হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ভারতমাতা বাহিনীর সদস্যরা ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা এসব ভিডিও ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট করতে থাকেন।

কার্নি সেনার প্রধানের নিজের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মহাপঞ্চায়েতে ভাষণই শুরু করছেন, ‘আপনারা কি সত্যিকারের হিন্দু না কি পাকিস্তানের বাচ্চা’ বলে। এই ধরনের বিদ্বেষ ও আতঙ্ক ছড়ানোর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে হরিয়ানার মুসলিম রক্ষায় প্রতিবাদে সরব হন হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি।

নিহত আসিফ খানের পরিবারের পক্ষ থেকেও মামলার জন্য অভিযোগপত্র দালিখ বা এফআইআর করা হয়েছে। নিহত আসিফের মা আইমান নিশো বলেছেন, ‘আমার ছেলের কী দোষ ছিল? ওষুধ আনতে গিয়েছিল শুধু। ওকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলল। এখন যারা ওকে মারল, তাদেরই ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে!’

দিল্লিতে সুপরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট ফারাহ নাকভি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘এখানে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি হিংসায় উসকানি দেয়া হয়েছে। এই বক্তাদের গ্রেফতার করার মতো আইনের কিন্তু অভাব নেই। তারপরও ভারতীয় পুলিশ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এগুলো কিন্তু হেইট স্পিচের চেয়েও মারাত্মক। কারণ এই মহাপঞ্চায়েতগুলো বা এই ভিডিওগুলোতে হত্যার অধিকারের ডাক দেয়া হয়েছে, যা যুক্তি-বুদ্ধির অতীত।’

ফারাহ নাকভি মনে করেন, ভারত ক্রমশ এমন একটা পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইন আর সমান নয়। তার সাথে একমত হয়েছেন মেওয়াটের মুসলিম নেতা ইশা মিও। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘গরু নিয়ে যাওয়ার অপরাধে আগে যেমন রাকবর খান বা পহেলু খানকে পিটিয়ে মারা হয়েছে কিংবা জুনেইদ খানকে মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে, ওই তালিকাতেই আর একটি নাম আসিফ। অথচ তার হত্যার বিচারের জায়গায় আমরা দেখছি পরিষ্কার বার্তা দেয়া হচ্ছে, এদেশ শুধু একটি শ্রেণীরই থাকার, বলার অধিকার আছে- অন্যদের কিছু নেই।’

মেওয়াটের পুলিশ প্রধান রাজ্যজুড়ে এই সব বিতর্কিত মহাপঞ্চায়েত নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, আসিফ খানের হত্যার তদন্ত নিজস্ব গতিতেই এগোচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *