Main Menu

সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আতঙ্কে নির্ঘুম সময় কেটেছে উপকূলের লাখ লাখ মানুষের। ইয়াসের প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, মঠবাড়ীয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর।

উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

পটুয়াখালী:

এ জেলায় পাউবো’র ২৩.৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪৫ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ২ হাজার ৬৩২টি পুকুর ও ৫৯০টি মাছের ঘের। প্রাথমিকভাবে মৎস্য খাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার পানিবন্দি মানুষের ঘরে গতকাল থেকে চুলা জ্বলেনি। এরপরও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল নগণ্য। তবে বুধবার সকাল থেকে উপকূলে চলছে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি, থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতসহ ঝড়ো হাওয়া বইছে।

এদিকে নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলের অর্ধশত চর। জেলার সব ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাউবো কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্র জানায়, কলাপাড়ার ৫১৫ কি.মি. বেড়িবাঁধের ২৩.৮০০ কি.মি. সিডর ও আইলয় ক্ষতিগ্রস্ত। বেড়িবাঁধ নেই ১৪.৩৫০ কি.মি. এলাকার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, কোমরপুর ৪৭/১ পোল্ডার, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলা এলাকার ৫০ মিটার করে দু’টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লালুয়া ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ এমনিতেই নেই, তারমধ্যে নতুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৮ কি.মি. বাঁধ।

ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলের মানুষ:

এছাড়া ধানখালী ইউনিয়নের ৫৪/এ পোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত, চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, ধূলাসার ইউনিয়নের ৪৭/৪ পোল্ডারের ১০০ মিটারসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা এবং চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা, চরমন্ডল ও নয়ারচরসহ ৫.৫ কি.মি. বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ২ হাজার ৬৩২টি পুকুর ও ৫৯০টি মাছের ঘের। এতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার।

কলাপাড়ার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কলাপাড়ার ১ হাজার ৬০০টি মাছের পুকুর এবং ৬১৬ একর জমিতে চাষকৃত ২৮২টি ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, বনবিভাগের গঙ্গামতি, কুয়াকাটা ও খাঁজুরা বনাঞ্চলের অন্তত ২০০ গাছ উপড়ে গেছে ইয়াসের তাণ্ডবে।

ভেসে গেছে ২ হাজার ৬৩২টি পুকুর ও ৫৯০টি মাছের ঘের:

জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, জেলার কলাপাড়া উপজেলার বাইনবুনিয়া, পশরবুনিয়া, চারিপাড়া, নয়াকাটা, নাওয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মুন্সীপাড়া, মঞ্জুপাড়া, চান্দুপাড়া, পূর্ব গৈয়াতলা, জালালপুর, সুধিরপুর, কোমরপুর, নিজামপুর, দক্ষিণ দেবপুর, খাঁজুরা, নাইওরীপাড়া, চর ধূলাসার, গঙ্গামতি ও বালিয়াতলি এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া, চরলতা, চরমোন্তাজ, চর আন্ডা, চরমন্ডল ও নয়ারচর গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪৫ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। এসব এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে।

কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া এলাকার পানিবন্দি মানুষের মাঝে দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

পাউবো’র ২৩.৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪৫ গ্রাম পানিবন্দি:

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী জানান, বুধবার দুপুর ১২টায় বিপদ সীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে আর মঙ্গলবার যা ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার। তবে পানি আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে দুর্দশাগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজ। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শনসহ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান মুহিব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ:

পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। পায়রা বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বলবৎ রয়েছে। সকাল ৬টা দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

বাগেরহাট:

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানির প্রভাবে বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় চারটি উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ২ হাজার ৯১টি চিংড়ি ঘের। জোয়ারের পানিতে জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি এসব উপজেলার কাঁচা-পাকা রাস্তা ও বেড়িভাঁধ উপচে পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও জোয়ারের পানিতে জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরবর্তী মোড়েলগঞ্জ পৌর সদর, বারইখালী, খাউলিয়া, বহরবুনিয়া, পুটিখালী, বলইবুনিয়া ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা, সাউথখালি ও রায়েন্দা ইউনিয়নের বগি, চালতাখালী, আশারকোল, গাবতলা, কদমতলা, রাজেশ্বর ও খুড়িয়াখালী গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১১শ’ পরিবার। মোংলা উপজেলা চিলা, চাঁদপাই ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৮শ’ পরিববার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এছাড়া রামপাল উপজেলা হুকরা, বাঁসতলি ও পেড়িখালী ইউনিয়নের তালবুনিয়া, লাজনগর ও শ্রফলতলা গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পানিবন্দি এসব পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাবার বিতারণ করা হয়েছে।

বাগেরহাটে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ২ হাজার ৯১টি চিংড়ি ঘের:

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও জোয়ারের পানির প্রভাবে জেলার ২ জাহার ৯১টি চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এর মধ্যে জেলার রামপালে ৯১৭টি, মোংলাং ৬৮৫টি, মোরেলগঞ্জে ৩৪৫টি ও শরণখোলায় ১৪৪টি ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, জোয়ারের পানি নেমে যাচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু গ্রামের মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে নিম্নাঞ্চলগুলোর পানিও দ্রুত নেমে যাবে।

চট্রগ্রাম:

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্রের উপকূলে জোয়ারের উচ্চতা। সাগরের বড় বড় ঢেউ সমুদ্রতীরে আছড়ে পড়ছে। সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পতেঙ্গার লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁ এলাকায়। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতেও উঠেছে জোয়ারের পানি। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সেইসঙ্গে বুধবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাতে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতিবেগ বাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ইয়াসের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় ও বৃষ্টির কারণে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কেউ কেউ বন্ধ রেখেছেন। বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সমুদ্র বন্দরে আবহাওয়া সঙ্কেত বাড়লে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭/৮ ফুট উপরে উঠে গেছে। এতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় বেঁড়িবাধ ভেঙে পূর্ণিমার উত্তাল জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ছনুয়ার হাবাখালী, ছনুয়ার টেক ও শেলবন, শেখেরখীলের গুইল্যাখালী, শীলকূপের মনকিচর, পশ্চিম সাধনপুর, গন্ডামারা আলেকদিয়া ও খানখানাবাদের প্রেমাশিয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছনুয়া ইউনিয়নের হাবাখালী, খরুঘাট, ছনুয়ার টেক ও শেলবন, শেখেরখীল ইউনিয়নের গুইল্যাখালী ও নোয়া পাড়া, শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর, সাধনপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সাধনপুর রাতারকুল, গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা ও আলেকদিয়া এবং খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়ায় ৩০ চেইন বেঁড়িবাধ অরক্ষিত থাকায় ইয়াসের প্রভাবে পূর্ণিমার জোয়ারে পানি লোকালয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সকলে মাঠে রয়েছেন। ছনুয়া, খানখানাবাদ, গন্ডামারা ও শেখেরখীল ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ভোলা:

ইয়াসের প্রভাবে ভোলায় বুধবার দুপুর ৩টা নাগাদ নদীর পানি বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রভাবিত হয়। এতে মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর পা‌নি স্বাভা‌বি‌কের চে‌য়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃ‌দ্ধি পেয়ে নিন্মাঞ্চ‌লের ৩৫টি গ্রাম প্লা‌বিত হ‌য়। এর ফলে এ সব এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পা‌নিব‌ন্দী হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়িসহ তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানিবন্দী মানুষকে তাৎক্ষণিক শুকনো খাবার বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বাবুল আক্তার জানান, জেলায় ৩২৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার বাঁধ সিসি ও জিও ব্যাগে মোড়ানো থাকলেও ২৫০ কিলোমিটার মাটির বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ৫টি পয়েন্টে ৭৭০ মিটার, মনপুরায় ৩টি পয়েন্টে ২৬০ মিটার, বোরহানউদ্দিনে ৪টি পয়েন্টে ৪০মিটার, লালমোহনে ২টি পয়েন্টে ৪৫০ মিটার, তজুমদ্দিনে ১টি পয়েন্টে ৩০০ মিটার ও দৌলতখানে ১টি পয়েন্টে ২০ মিটার এবং ভোলা সদরে ২টি পয়েন্টে ১০০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তার দেয়া তথ্যে অনুসারে বেশকিছু জেলার তথ্য তুলে ধরা হলো:

সাতক্ষীরা:

জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি রয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। জেলায় এক হাজার ২৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। গত রাতে শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২৮০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন।

বরগুনা:

জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধের কয়েক জায়গায় কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫২০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন, পরে তারা নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। সামান্য ঝোড়ো বৃষ্টি হচ্ছে। ইয়াসের প্রভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ঝালকাঠি:

জেলায় মোট ৪৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। ৪৯৭ জন লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। জোয়ারের পানির উচ্চতা বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

পিরোজপুর:

মঠবাড়ীয়া উপজেলার মাঝের চর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ১০/১২টি মাছের ঘের এবং কয়েক একর সবজি বাগান পানির নিচে চলে গেছে। মাঝের চর আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা থেকে শুকনা খাবার সরবাহ করা হয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ৩ ফুট উপরে উঠেছে। ২৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

চাঁদপুর:

আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিছু ছিন্নমূল মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যে উপজেলাওয়ারী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক। সামান্য ঝোড়ো হাওয়া বইছে।

লক্ষ্মীপুর:

জেলার রামগতি, কমলগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় সামান্য জোয়ারের পানি উঠেছে। কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো লোক আশ্রয় নেননি। সামান্য ঝড়/বৃষ্টি রয়েছে।

খুলনা:

জেলায় মোট এক হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে কোনো লোক আশ্রয় নেননি। ঝোড়ো হাওয়া আছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক।

ফেনী:

জোয়ারের পানি স্বাভাবিক। ঝোড়ো হাওয়া নেই। মঙ্গলবার ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবে একজন মারা গেছেন। ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, কিন্তু কোনো লোক আশ্রয় নেননি।

নোয়াখালী:

জেলায় মোট ৩৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এ সব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৩০০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট উপরে উঠেছিল। নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ জার্নাল






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *