Main Menu

রেকর্ড পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার মিলল পাগলা মসজিদের দান বাক্সে

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান বাক্সে এবার দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গেছে। যা ওই মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। শনিবার সকাল ১০টার দিকে দানবাক্স খোলার পর গণনা শেষে বিকেলে টাকার এই হিসাব পাওয়া যায়।

বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও অন্যবারের চেয়ে পরিমাণে বেশি পাওয়া গেছে। বাজার মূল্য অনুযায়ী এগুলোর দাম অর্ধ কোটি টাকার মতো হবে।

এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২২ আগস্ট দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ এক কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭১ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়।

কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবার পাঁচ মাস চার দিন পর মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। করোনাকালে এর আগে গত বছরের ২২ আগস্ট ছয় মাস সাত দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়।

এবার সবচেয়ে বেশি ১৪ বস্তা টাকা হয়েছে। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ মাদরাসার ৬০ জন ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম টাকা গণনার কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, পাগলা মসজিদকে একটি অন্যতম আধুনিক ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশিষ্টজনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এ সময় পাগলা মসজিদের সদস্য জেলার সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলুসহ জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদের তত্ত্বাবধানে টাকা গণনার কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, মো: উবায়দুর রহমান সাহেল, মো: জুলহাস হোসেন সৌরভ, মো: ইব্রাহীম, পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী খলিলুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো: শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যংকের এজিএম অনুফ কুমার ভদ্র প্রমুখ।

এ সময় দানবাক্স খোলা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও মসজিদের সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

টাকা গণনার এই এলাহীকাণ্ড নিজ চোখে দেখতে শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ এসে পাগলা মসজিদে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।

মানুষের ধারণা, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। ওই জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে মানতের টাকা-স্বর্ণালংকার দান করে থাকেন। অন্য ধর্মের মানুষেরাও এখানে দান করেন।

গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনের সময়ে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয় এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই পরিস্থিতিতেও মসজিদটিতে মানুষ দান অব্যাহত রাখেন।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদ জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে জমা পড়েছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।

সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। অনেক বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে মসজিদটি গায়েবিভাবে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন।

দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়েই কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে আরো ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *