Main Menu

সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাখ্যা দিয়েছে মিয়ানমার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সেনা অভ্যুত্থানের কারণ ব্যাখ্যা করে ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

চিঠিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানায়, গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে প্রায় ১০.৪ মিলিয়ন জাল ভোট পড়েছিল।

শনিবার ( ৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। তারা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে এই চিঠি দিয়েছে।’

রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সাথে ‘যোগাযোগ’ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টিকে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের মাঝে আস্থা তৈরি করতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর আকাঙ্ক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এগুলো ভালো সংবাদ। এটি একটি ভালো সূচনা।’

ইউএনবিকে এক কূটনৈতিক সূত্র বলেন, ‘রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সেনাবাহিনীর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যেমনই হোক না কেন, সেটি একটি কাঠামোতে আসতে সময় লাগবে।’

ড. মোমেন বলেন, রাখাইনের এ সংবাদে কুতুপালং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তারা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের মাঝে আস্থা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির পতনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার শিবিরের রোহিঙ্গারা।

এর আগে বাংলাদেশের সাথে ২০১৭ সালে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যাচাই বাছাইয়ের জন্য ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।

‘কিন্তু মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে,’ বলেন তিনি।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না।

তবে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : ‘আস্থার অভাব’
প্রায় তিন বছর আগে মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছিল এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতিসঙ্ঘ, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনাইটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এবং আরো অনেকেই এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে।

সেসময় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সহিংস গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল এবং বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিদো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।

মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে আরো অধিকতর চাপ প্রয়োগ এবং বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ প্রত্যাবাসন শুরু করতে ‘সতর্কতার সাথে আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

আলজাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশি কিছু ভদ্রলোক আছেন যারা সবসময় জাতিসঙ্ঘে এ জাতীয় প্রশ্ন করেন।

তিনি বলেন, আলজাজিরা মিথ্যা প্রতিবেদন প্রচারের মাধ্যমে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষ এটি বুঝতে পেরেছে।

ড. মোমেন বলেন, কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ থাকলে আমরা তদন্ত করব, কিন্তু ভুয়া কোনো অভিযোগ থাকলে বাদ দেব।

সূত্র : ইউএনবি






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *