সুন্নী জোটের সমাবেশ: শাহপরান (রহ)’র মাজারে হামলার বিচার,স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ, ভূমিদস্যুদের দখল থেকে সিলেটের পর্যটন এলাকা সুরক্ষা প্রদান এবং পর্যটন খাতে জাতীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করাসহ ১৩ দফা দাবি পেশ
সিলেট—ঢাকা ছয় লেন সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, ভূমিদস্যুদের দখল থেকে সিলেটের পর্যটন এলাকা সুরক্ষা প্রদান এবং পর্যটন খাতে জাতীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা,সিলেটের পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলনকৃত গ্যাস সিলেট বিভাগের সব জেলায় সমভাবে বণ্টন করে ঘরে ঘরে নতুন গ্যাস সংযোগ চালু করা,আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় সংলাপে এবং জুলাই সনদে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ দেয়া, দুর্নীতিবাজ কালোর টাকার মালিক ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, মাজার মসজিদ খানকায় হামলায় জড়িতদের বিচার,ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন, জুলাই বিপ্লব ও পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করা এবং মবসন্ত্রাস থামানো,সিলেটকে দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী ঘোষণার দাবিসহ ১৩দফা দাবিতে গতকাল ১০ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর বারোটায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে বিশাল জনসভার আয়োজন করে বৃহত্তর সুন্নীজোট সিলেট জেলা। জনসভায় সুন্নীজোট নেতৃবৃন্দ বলেন, এই মুহূর্তে বড় প্রয়োজন জনস্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। কিন্তু জাতীয় জনস্বার্থ ইস্যুতে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্য—বিভাজনই আজ প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে দেশবাসীর মাঝে যে শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে হবে। বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে কিংবা কোনো মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল হলে জনগণকে আবারো চরম মাশুল দিতে হবে। তখন দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বৃহত্তর সুন্নী জোট নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেন। সরকারি সংলাপে এবং জুলাই জাতীয় সনদে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের মতামত ও সই না নেওয়ায় বৃহত্তর সুন্নীজোট নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। সরকার যেন কোনো দলের দিকে ঝুঁকে পড়ে পক্ষপাতযুক্ত আচরণ না করে তাই আশা করেন সুন্নীজোট নেতৃবৃন্দ। জনসভায় বৃহত্তর সুন্নী জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো অধরাই থেকে গেল। দেশে কিছুই বদলায়নি। বরং দুর্নীতি—দুর্বৃত্তায়ন খুন সন্ত্রাস আরো বেড়েছে। সরকারের কিছু উপদেষ্টার দলঘেঁষা পক্ষপাতমূলক আচরণ সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকার কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে অগ্রসর না হয়ে জনপ্রত্যাশার আলোকে সকল পদক্ষেপ নেবে এটাই দেশবাসী দেখতে চায়।তিনি শাহপরানের মাজারে নৃশংসহামলার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিপ্রদানসহ প্রতিটি মাজার দরবার খানকাহ ধর্মীয় ব্যক্তি ও স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান । জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদি বলেন, দেশে কোটি তরুণ যুবক আজ বেকার। দিন দিন বাড়ছে দারিদ্র্য। এই সোয়া এক বছরে সারাদেশে শত শত মিল কারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেও সরকারের এদিকে দৃষ্টি নাই। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কবরের লাশও নিরাপদ নয়। কবর থেকে লাশ তুলে উল্লাস করে পুড়িয়ে ফেলার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত অতীতেও কখনো দেখা যায়নি। দেশে যেন নব্য জাহিলিয়াত ফিরে এসেছে। বৃহত্তর সুন্নীজোটের অন্যতম শীর্ষনেতা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি—বিএসপির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান পীরে ত্বরিকত মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, মানুষ আজ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। ৫ আগস্টের পর হতে হসারাদেশে মব সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হেনস্তা, মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ বহু ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে মসজিদে হামলা, জোর করে ইমাম খতিবদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া, কবর থেকে লাশ উঠিয়ে জ্বালিয়ে ফেলা এবং কবরস্থানে অগ্নিসংযোগের মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি বিচারালয়ের বিচারকরাও আজ নিরাপদ নয়। সরকার ও সেনাবাহিনী ‘মব ভায়োলেন্স বরদাশত না করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে উদাসীনতা স্পষ্ট। তিনি বলেন সুন্নী ছাত্র জনতা কারো প্রতিপক্ষ নয়। এদেশে সুফীবাদী জনতাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধালে আমরা আর চুপ থাকব না। প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দীন আল কাদেরির সভাপতিত্বে এবং মুহাম্মদ নূরুল হক চিশতী, শেখ মাসুক আহমদ এবং শাহ আবুল ফজল এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নাল আবেদীন জুবাইর,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব জননেতা অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ, সুপ্রিম পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব জননেতা আসলাম হোসাইন। মাওলানা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন , এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ১৫ মাসে দেশে বড় কোনো পরিবর্তন আসে নি।
দেশে এখন গ্রেফতার বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্যসহ ঘুষ দুর্নীতির মচ্ছব চলছে।সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি ব্যর্থতা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বৃহত্তর সুন্নীজোটের এই ঐক্য ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দেওয়ার এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে দেশবিরোধী অপশক্তি। আগামী ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন কারো কারণে বানচাল হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে আমরা আশংকা করছি। তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সুন্নি আলেম ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে হেনস্তা, চাপ প্রয়োগ এবং মিথ্যা মামলা হয়রানি ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপগ্রহণ এবং স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপগ্রহণের কথা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পীরে তরিকত আল্লামা শাহ জালাল, আহমদ আখুঞ্জি অধ্যক্ষ আল্লামা আলী মোহাম্মদ চৌধুরি, অধ্যাপক মাওলানা শহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সোলাইমান খান রব্বানী, মাওলানা নুরুল্লাহ রায়হান খান, এইচ এম মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, মাওঃ আহমদ আলী হেলালি, অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার, যুবসেনার সভাপতি ডা.এস এম সরওয়ার, মাওলানা আঃ মুহিত হাসানী, শেখ মাওলানা মোঃ খাইরুল আমিন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন জালালি, ইসলামিক ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জননেতা স ম হামেদ হোসাইন, আল্লামা রফিকুল ইসলাম জাফরী, মুফতি মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মুরাদ চৌধুরী,মুহাম্মদ শাহ আলম,শেখ মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান মাহমুদী,মুহাম্মদ ওলিউর রহমান,জাকির হেসেন মুন্সি,শেখ মাসুক আহমেদ, মুফতি এম এ মুমিন, মাওলানা শেখ সফিকুল ইসলাম রেজবী। সুপ্রিম পার্টি নেতৃবৃন্দর মধ্যে বক্তব্য রাখেন পীরজাদা কাজী আশিকুর রহমান হাশেমি, মাওলানা রুহুল আমিন ভূইয়া চাঁদপুরী, মোঃ আসলাম হোসাইন, মো: ইব্রাহিম মিয়া, মাওলানা হাফেজ কেরামত আলী, মোঃ আব্দুর রহিম, শাহ আবুল ফজল মহালদার মোঃসুহেল আহমেদ ভান্ডারি, মোঃ আলী হোসাইন প্রমূখ। জনসভায় ঘোষিত ১৩ দফার দাবিগুলো হল— *নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। *রাষ্ট্রীয় যেকোনো বৈঠকে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে দল নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা। * নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা * দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, অর্থ পাচারকারী ও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। * সিলেটকে রাষ্ট্রীয়ভাবে “আধ্যাত্মিক রাজধানী” হিসেবে ঘোষণা করা। * সিলেট—ঢাকা ছয় লেন সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং সিলেট—ঢাকা রুটে ডাবল রেললাইন চালু করা। * ভূমিদস্যুদের দখল থেকে সিলেটের পর্যটন এলাকা সুরক্ষা প্রদান এবং পর্যটন খাতে জাতীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা। * সিলেটের পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলনকৃত গ্যাস সিলেট বিভাগের সব জেলায় সমভাবে বণ্টন করে ঘরে ঘরে নতুন গ্যাস সংযোগ চালু করা। * জুলাই ২৪ ও জুলাই পরবর্তী সময়ে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা। *পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। * চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা ও জাতীয় স্বার্থে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে কোনো প্রকার করিডোর না দেওয়া। * মাজার, খানকা, দরবার শরীফ, ধর্মীয় নেতাদের ও গণ—মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। * মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ নিশ্চিত করা
Related News
সুন্নী জোটের সমাবেশ: শাহপরান (রহ)’র মাজারে হামলার বিচার,স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ, ভূমিদস্যুদের দখল থেকে সিলেটের পর্যটন এলাকা সুরক্ষা প্রদান এবং পর্যটন খাতে জাতীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করাসহ ১৩ দফা দাবি পেশ
সিলেট—ঢাকা ছয় লেন সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, ভূমিদস্যুদের দখল থেকে সিলেটের পর্যটন এলাকা সুরক্ষাRead More
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সিলেটে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ–এর উদ্যোগে সিলেটে র্যালি ওRead More

