Main Menu

সেন্টমার্টিনে মোখার তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : মিয়ানমারে ৩ জনের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে কক্সবাজারের আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। গতকাল রোববার বেলা দুইটা থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার তা-বে দ্বীপটির অন্তত ৯০০ কাঁচা ও টিনের আধা পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ৪২০টি নারকেলগাছসহ অন্তত ৩ হাজার গাছগাছালির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে আহত হয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপটির উত্তর পাড়া, পশ্চিম পাড়া ও পূর্ব দিকের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মঠ, প্যাগোডা ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের ভূখ- থেকে চলে গেছে। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হয়ে মিয়ানমারের সিত্তওয়ে অবস্থান করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের স্থলভাগের আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়টি। গতকাল রোববার রাত ৮টায় আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেছেন, ‘এটা আমাদের দেশ থেকে পুরোপুরি চলে গেছে। আমাদের ভূখ-ে এটার আর কোনো অস্তিত্ব নেই।’ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের ওপর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববারের মোখার টানা তিন ঘণ্টার তা-বকে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে শক্তিশালী দাবি করেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। সন্ধ্যায় তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা যখন সেন্ট মার্টিনে আঘাত হানে, তখন সাগরে ভাটা চলছিল। মরা কাটাল থাকায় জোয়ারের উচ্চতাও কম ছিল। মোখার গতিবেগ ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার। কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ভয়াবহতা নিয়ে শুরু থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানোয় সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা আতঙ্কে ছিলেন। ব্যাপক প্রচারণার কারণে দ্বীপের প্রায় ৬ হাজার বাসিন্দা আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। গত কয়েক দশকে এত মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে দেখেননি। এ কারণে তিন ঘণ্টার তা-বে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সেন্ট মার্টিনে ৭০০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ও ২০০টি টিনের আধা পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০০টি কাঁচা ও ২৫টি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। পুরো দ্বীপে ৪২০টি নারকেলগাছ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া তিন হাজারের মতো বিভিন্ন গাছগাছালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহীন মানুষেরা স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তাঁদের দ্রুত পুনর্বাসন করতে হবে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডবে কক্সবাজারে ২ হাজার ৫২২টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ৭০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সই করা আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি ও জরুরি চাহিদার ফর্ম থেকে এই তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসন জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজারে মোট ৫৭টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে। সেখানে ১০ হাজার ৪৬৯টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০। ঘূর্ণিঝড়ে হতাহত প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, হতাহতের ঘটনা নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে ১৫-২০ জনের মতো হবে। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘরবাড়ির পাশাপাশি মাঠে থাকা গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগেভাগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ায় লবণের মাঠে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের আগেই লবণ সংগ্রহ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাইরে টেকনাফ ও উখিয়ায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টেকনাফে প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মহেশখালীসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ৫০-৬০টি করে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কুতুবদিয়ায় ঝড়ের গতিবেগ কম থাকায় ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়েছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *