পর্যটন খাতের বিকাশে যৌক্তিক পর্যায়ে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ চায় সংসদীয় কমিটি। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (২৪ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের ডেকে কথা বলেছে। পরে কমিটি তাদেরকে আন্তঃসভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে পর্যটন খাতের ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে কমিটির সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটন শিল্প বিকাশে প্রচলিত ভ্যাট-ট্যাক্স অন্তরায়। এ বিষয়ে বৈঠকে বহুবার আলোচনা হলেও কোনও সুরাহা করা যাচ্ছে না। ওই বৈঠকে তিনি বিষয়টি নিয়ে ঢাকার দুই মেয়র, অর্থসচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে ডাকার বিষয়ে মতামত দেন। পরে তা সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যটন সারা বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। খাদ্য, পরিবহন, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, বাসস্থান, ট্রাভেল এজেন্সি, উৎসব এবং অনুষ্ঠান, খেলাধুলা প্রভৃতি পর্যটন খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইনস, পরিবহন (ট্যুরিস্ট কোচ/বাস, ট্যুরিস্ট কার, ইত্যাদি), ট্যুরিস্ট শিপ এজেন্সি, ক্রুজ শিপ পরিচালনা, ট্যুরিস্ট গাইডিং এজেন্সি, স্ট্রিট ফুড, হোমস্টে, কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন ইত্যাদি। বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত সেবামূলক উপখাতগুলোসহ (যেমন হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ-বিনোদন পার্ক, ইত্যাদি) বিভিন্ন পর্যায়ে অধিকহারে ভ্যাট ও ট্যাক্স ধার্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একই সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহীতাদের ডবল ট্যাক্সেশনের বিষয়টি দেখা যায়। এজন্য পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সেবামূলক উপখাতসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রায় ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপের বিষয়ে যৌক্তিক সমাধানের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
ভ্যাট-ট্যাক্স বিষয়ে পর্যটন করপোরেশন তার প্রতিবেদনে বলেছে, পর্যযটন করপোরেশনের সেবামূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ, সেবার মালামাল ক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ রাজস্ব প্রাপ্তির ওপর ৫ শতাংশ আয়কর দিতে হয়। সংস্থাটি সার্বিক আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব রক্ষা দূরহ হয়ে উঠেছে।
প্যাকেটজাত চাল, ডাল, তৈল, ঘি, আটা, ময়দাসহ পানীয় ও জুসসহ বিভিন্ন পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে একাধিকবার ভ্যাট প্রদান করা হয় উল্লেখ করে তারা পণ্যের মোট দামের ওপর ভ্যাট নির্ধারণের পরিবর্তে বর্ধিত মূল্যের ওপর যৌক্তিকহারে করারোপের কথা বলে। পর্যটন করপোরেশন ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত করপোরেট ট্যাক্স ৪৩ কোটি ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, লভ্যাংশ বাবদ ৮ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার টাকা, ভ্যাট বাবদ ৩৪ কোটি ৭৩ লাখ ১৬ হাজার পরিশোধ করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে পর্যটন শিল্প বিকাশে দেশে প্রচলিত ভ্যাট ও ট্যাক্স অন্তরায় হিসেবে কাজ করার বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বয়ে আন্তঃসভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
কমিটি কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকার ভাঙনপ্রবণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে তা রক্ষায় জেলা প্রশাসন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে।
কমিটির সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার অংশগ্রহণ করেন।