Main Menu

সিলেটে বন্যার্ত প্রায় দেড় লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে

সিলেটে বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি। যতদিন প্রয়োজন সামর্থ্য অনুযায়ী এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন, গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মানবিক কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।
তিনি বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার খবর পেয়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমরা দ্রæত ছুটে আসি। এই সময়ে এক লাখ বিশ হাজার মানুষকে আমরা সহায়তা দিতে সক্ষম হয়েছি। দুর্গত মানুষের মাঝে ঈদের খুশি বিলিয়ে দিতে কোরবানির মাংস ও জামাকাপড় বিতরণ কার্যক্রম চলছে।’
মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ‘এই মানবিক সেবায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে সাড়ে তিন টন চাল এবং নগদ একলাখ টাকা অনুদান দিয়ে গাউসিয়া কমিটির ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ঈদের পূর্ব পর্যন্ত একাধারে উনিশ দিন আমাদের সেবা অব্যাহত ছিল। এই সময়ে আমরা বন্যাদুর্গত বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকায় রান্না করা খাবার, শুকনা খাবার, চাল, ডাল, তেল, চিড়া, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, নতুন-পুরাতন কাপড়সহ নানা প্লয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদুল আজহার পরের সফরে গতকাল আমরা এনেছি ২০টন কোরবানির মাংস, যা অন্তত বিশ হাজার পরিবারে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ঈদুল আজহার খুশি এনে দেবে বলে আশা করি। মৌলভীবাজার, সিলেট এবং সুনামগঞ্জের দুর্গত মানুষের হাতে এই ঈদ উপহার তুলে দেওয়া হচ্ছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। আজও (বুধবার) দেওয়া হচ্ছে সিলেট সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন প্লয়োজন হবে সামর্থ্যের মধ্যে এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সেবা দিতে আমরা সচেষ্ট আছি। এরই মধ্যে, কোম্পানীগঞ্জের শিমুলতলা নোয়াগাঁওতে ঘর হারা দুটি পরিবারকে নতুন করে ঘর নির্মাণে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, এবং আরও দেওয়া হবে।’
সংগঠনের মানবিক কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ বিপর্যয়ের সময়ে গাউসিয়া কমিটির মানবিক স্বেচ্ছাসেবকরা দশ হাজারেরও বেশি মৃতের লাশ গোসল-কাফন এবং দাফন ও সৎকার করেছে। এদের মধ্যে হিন্দু ছিলেন ৬১ জন, বৌদ্ধ ছিলেন ৯ জন, উপজাতি ২ জন, খ্রিষ্টান ছিলেন ১ জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ৬৫ জন এবং অজ্ঞাত লাশ ছিল ৭৮ জন। বিশেষত এই সময়ে আমরা ৪২ হাজার ৫০৯ জনকে দিয়েছি ফ্রি অক্সিজেন সেবা এবং ১২ হাজারের মানুষকে ফ্রি এম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে ফ্রি ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা, ভ্রাম্যমান করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে আড়াই লাখ পরিবারকে আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ।’
নিজেদের অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, মানবিক কর্মকাÐের স্বীকৃতি স্বরূপ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক একুশে পদক-২০২২-এ ভূষিত করা হয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশকে।
মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার আরও বলেন, ‘৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুÐের বিএম ডিপোতে সংঘটিত অগ্নিকাÐ এবং ভয়াবহ কন্টেইনার বিস্ফোরণে দুই শতাধিক আহত এবং অর্ধশতাধিক নিহতদের সবাইকে উদ্ধার করার মতো দুঃসাহসিক কাজটা করেছে গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা। ঘটনায় নিহত-আহত দমকল বাহিনীর কর্মীদের উদ্ধার কাজও করেছি আমরা। দমকল বাহিনীসহ শনাক্তকৃত লাশসমূহের গোসল-কাফন-দাফন সম্পন্ন করেছি আমরা।’
এছাড়াও, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ী সহায়তা বুথ স্থাপন করে আহতদের ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থসহ নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং রক্ত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দশ দিনে গাউসিয়া কমিটির কর্মীরা ২ হাজার ৩৭০ ব্যাগ রক্ত দিয়ে সহায়তা করে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের পোড়া ও অন্যান্য রোগীদের। যা এখনো অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক মৌলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সহসভাপতি মোহাম্মদ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মৌলানা মুনির উদ্দিন সোহেল, কেন্দ্রীয় মানবিক টিম সদস্য আহসান হাবিব চৌধুরী, এরশাদ খতিবী, মৌলানা সালামত উল্লাহ্, সিলেট জেলা প্রতিনিধি কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মৌলানা জালাল উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম সেলিম, অ্যাডভোকেট বিলাল আহমদ, ডা. মোহাম্মদ নুর আলম, শাহ মুহাহা গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *