ব্র্যাকের ‘রেডিও পল্লীকন্ঠ এফ এম ৯৯.২’ এর দশম বর্ষপূর্তি পালন
ব্র্যাক কমিউনিটি রেডিও “রেডিও পল্লীকন্ঠ” এফ এম ৯৯.২ এর দশম বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের রেডিও পল্লীকন্ঠ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
রেডিও পল্লীকন্ঠ ও পপুলার থিয়েটারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কমিউনিটি রেডিও পল্লীকন্ঠ মৌলভীবাজারের স্থানীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সাবরীনা রহমান।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রেডিও মানব সভ্যতার উন্নয়ন ও ইতিহাস এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং গ্রামীণ ও শহুরে মানুষের বিনোদন ও তথ্য প্রাপ্তির একমাত্র এবং সহজ মাধ্যম। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত নীতিমালার আওতায় ব্র্যাকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় মৌলভীবাজারের চাদনীঘাট ইউনিয়নে রেডিও ষ্টেশন স্থাপনের জন্য শর্তাবলীসহ প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করে। শর্তাবলীসমূহ যথাযথভাবে পূরন করে ব্র্যাক কমিউনিটি রেডিও “রেডিও পল্লীকন্ঠ” এফ এম ৯৯.২, আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ জানুয়ারী ২০১২ সাল থেকে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের ১১টি উপজেলার ৯৩টি ইউনিয়ন এবং ১০ লাখ মানুষ সম্প্রচার কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, কমিউনিটি রেডিও সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত বেতার সম্প্রচারের বাইরে তৃতীয় মডেল হিসেবে পরিচিত। গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত জনসংখ্যার শক্তির সম্ভাবনা, চিন্তাভাবনা, ধারণা, সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলি প্রকাশ এবং ভাগ করার একটি মাধ্যম। রেডিও পল্লীকন্ঠের লক্ষ্য হ’ল স্থানীয় জনগোষ্ঠির জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অ্যাক্সেস-টু ইনফরমেশন মেকানিজম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি তাদের কন্ঠস্বর/আওয়াজ স্থানীয়ভাবে নীতিনির্ধারক ও জনগণের কাছে পৌছাতে পারে।
কমিউনিটি রেডিও’র বা প্রান্তিক মানুষের নিজের গণমাধ্যম থাকার গুরুত্ব কতখানি তা নতুন ভাবে আমাদেরকে অনুধাবন করতে শিখিয়েছে বর্তমানের মহামারী করোনাভাইরাস। কমিউনিটি রেডিও শুধুমাত্র অন- ইয়ার প্রোগ্রামিংই করে না পাশাপাশি অফ -এয়ার প্রোগ্রামও স্থানীয় পর্যায়ে করে থাকে। তার জন্য রেডিও পল্লীকন্ঠ প্রায় ৭০০ এর উপর শ্রোতা ক্লাব গঠন করে। শ্রোতা ক্লাব সদস্যের সাথে প্রোগ্রাম নিয়ে ফোকাস গ্রæপ আলোচনা, কমিউনিটির চাহিদা ও প্রোগ্রাম তৈরিতে অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ইস্যু ভিত্তিক ক্যাম্পেইন প্রচারণা করা হয় এবং ওয়ার্কশপ, আলোচনা সভা,মানব বন্ধন, র্যালি, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকিংসহ বিভিন্ন অফ -এয়ার কর্মকান্ড করে থাকে। ফলশ্রæতিতে রেডিও পল্লীকণ্ঠ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ টি গোল নিয়ে প্রোগ্রাম তৈরি ও প্রচারে সংশ্লিষ্ট থেকে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিগত দশ বছরে মৌলভীবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মানসম্পন্ন প্রোগ্রাম তৈরী ও সম্প্রচার করে এবং সামাজিক পরিবর্তনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, জাতীয় (ইউনিসেফ-মীনা মিডিয়া অ্যাওয়াডর্স), ইউএনএফপিএ অ্যাওয়ার্ডস, এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার (এবিইউ) অ্যাওয়ার্ডস (ABU-Asia Pacific Broadcasting Union) অর্জন করেছে। এছাড়াও দেশ-বিদেশে ফেলোশিপের মাধ্যমে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, তুরষ্ক এবং জার্মানিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
স¤প্রতি, নয়াাদিলিতে ইউনেস্কো অফিস এবং সিইএমসিএ (কমনওয়েলথ এডুকেশন মিডিয়া সেন্টার ফর এশিয়া, ইন্ডিয়া) দ্বারা “কমিউনিটি রেডিও এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সর্বোত্তম অনুশীলন” সংক্রান্ত একটি হ্যান্ডবুক প্রকাশিত হয়েছে, যা ভারত,নেপাল এবং বাংলাদেশের কমিউনিটি রেডিও থেকে সংকলিত হয়েছে। উক্ত হ্যান্ডবুকে রেডিও পল্লিকন্ঠের তিনটি গল্প (এসডিজি লক্ষ্য: ২, ৩ এবং ৫) প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়াও এই বছরে, রেডিও পল্লিকন্ঠের উপর একটি আর্টিক্যাল ২০২০-এর জন্য ইউএন ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়াস (টঘউঊঝঅ) গুড প্র্যাকটিস হিসাবে নথিভুক্ত করেছে, যা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। রেডিও পল্লকিন্ঠ বাংলাদেশ কমিউনিটি রেডিও অ্যাসোসিয়েশন (বিসিআরএ) এবং এশিয়া প্যাসিফিক-এ্যামার্ক (ওয়াার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ কমিউনিটি রেডিও ব্রডকাস্টার) এর সদস্য।
২০২০ সালে বিশ^জুড়ে মানুষের জীবন বদলে দেয়া করোনা মহামারীর কারনে রপ্ত করা নতুন অভ্যাসের অনেকগুলোই যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারায় স্থায়ী হয়ে যাবে সে বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত সমাজবিঞ্জানীরা। কমিউনিটি রেডিও’র বা প্রান্তিক মানুষের নিজের গণমাধ্যম থাকার গুরুত্ব কতখানি তা নতুন ভাবে আমাদেরকে অনুধাবন করতে শিখিয়েছে করোনাভাইরাস। অর্থ্যাৎ করোনাকালে কমিউনিটির মানুষের সাথে রেডিও পল্লীকণ্ঠ’র এক নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়েছে। যা সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে রেডিও পল্লীকণ্ঠ হয়ে উঠে আস্থার প্রতীক। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, রেডিও পল্লীকন্ঠ ন্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও অংশগহনের মাধ্যমে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করবে যা জীবন-জীবিকার পক্ষে সহায়ক হবে। কর্মী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সম্মিলিত শক্তির মাধ্যম স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে রেডিও পল্লীকন্ঠ লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবে।
আলোচনা সভা শেষে দিনব্যাপী এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Related News
স্থানীয় স্কাউট নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা: জুলাই- আগস্টে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদেরকে কাজ করতে হবে, আমিনুল ইসলাম
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সদস্য (১) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই- আগস্টে যারা জীবনRead More
কোম্পানীগঞ্জে ব্যবসায়ীর জমি দখল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ব্যবসায়ীর জমি দখল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সিলেটRead More