Main Menu

ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে পরীক্ষা করা হবে সিলেটের সবগুলো ভবন

সিলেটে দফায় দফায় ভূমিকম্পের পর সিলেটের সবগুলো বহুতল ভবন পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে এ কাজ শুরু করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কী না এবং ভূমিকম্পসহনীয় করে নির্মাণ করা হয়েছে কী না তা পরীক্ষা করে দেখবেন।

এদিকে, ভুমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গত ২৯ মে সিলেটের ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার এই বিপান বিতানগুলো খোলা হয়নি।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্মকর্তারা বলছেন, এখনই এই ভবনগুলো খোলা যাবে না। বিশেষজ্ঞ টিম পরীক্ষা নীরিক্ষা করে প্রাতিবেদন জমা দেবেন। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই ভবনগুলো খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

গত ৭ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটে দুই দফা ভ’মিকম্প হয়। মাত্র ৩.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পেই ফাটল দেখা দেয় নগরের বন্দরবাজার এলাকার রাজা জিসি স্কুলের একটি ভবনে। পরদিন মঙ্গলবার প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, এই স্কুলভবনটি ভ’মিকম্প সহনীয় ভাবে নির্মাণ করা হয়নি।

এরআগে গত ২৯ মে সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটার মধ্যে সিলেটে অন্তত পাঁচটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। পরদিন ভোরে আবার ভ’মিকম্প হয়। যার সবগুলোর কেন্দ্রস্থল সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায়।

২৯ ও ৩০ মে’র ভূমিকম্পের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ৩০ মে নগরের ২৫ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এরমধ্যে ওইদিনই ৭টি ভবনকে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর বুধবার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সাথে সিসিক কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে নগরের সবগুলো ভবন পরীক্ষা নীরিক্ষার সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সিদ্ধান্তের আলোকে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিক্ষা নিরীক্ষায় নামেন বিশেষজ্ঞরা। দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দুটি বিশেষজ্ঞ দল নগরীর মধুবন সুপার মার্কেট, মিতালি ম্যানশন, সমবায় ভবন, সিটি সুপার মার্কেটসহ চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি ভবন পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্প হলে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ রেখেই কাজ শুরু করেছেন।

পর্যবেক্ষণের পর বিশেষজ্ঞরা জানান, বন্ধ থাকা ৬টি মার্কেটের গুরুত্ব বিবেচনায় এগুলো দিয়েই তারা ভবনগুলোর সক্ষমতার বিষয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। আরও বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ভবনগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

দুই বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম ও স্কুল অব এপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোশতাক আহমদ।

প্রথমদিনের পর্যবেক্ষণ শেষে অধ্যাপক মোশতাক আহমদ বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে নগরীর সবগুলো ভবন সার্ভে করে ঝুঁকি নির্ণয় করবো। এরপর এই ভবনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিটি করপোরেশন।

অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভিতর যতগুলো ভবন আছে সবগুলো পরীক্ষা করা হবে। এটা আমাদের পক্ষে একা করা সম্ভব না। তাই সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্রদেরকেও নেওয়া হবে। সকলে মিলে কাজটি করব। এ ক্ষেত্রে সকল ভবন পরীক্ষা শেষ করতে হয়ত ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের হিসেবে, সিলেটে প্রায় ৭০ হাজার হোল্ডিং আছে। এরমধ্যে সাততলার উপরে ভবন আছে অন্তত ৪শ’ টি।

বন্ধ থাকা মার্কেটগুলো এখই খুলছে না জানিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তাদের দেয়া প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা এই ভবনগুলোর ব্যাপপারে সিদ্ধান্ত নেবো।

জানা যায়, গত ২৯ মে কয়েকদফা ভূমিকম্প পরবর্তী সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে নগরের ৬ টি মার্কেটসহ ৭টি ভবন বন্ধ করে দেয় সিসিক। গত সোমবার (৩১ মে) সকাল থেকে বন্ধ ঘোষিত হয় এসব মার্কেট। মার্কেটগুলো হলো- মিতালি ম্যানশন, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, রাজা ম্যানশন, সমবায় ভবন ও সুরমা মার্কেট। এই ৬টি ভবন (মার্কেট) আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ছিল বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া অতিঝুঁকিতে থাকা জিন্দাবাজারের একটি দোকান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নগরীর পনিটুলা এলাকায় সামান্য হেলে থাকা ভবন বন্ধ ঘোষণা করে ভবনের বাসিন্দাদেরর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *