সিলেটে রায়হান হত্যা: আকবর ৭ দিনের রিমান্ডে আদালতে উৎসুক জনতার ভীড়
এসএমপির কোতোয়ালী থানার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ রায়হান আহমদ নিহতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিষ্কৃত উপ পরিদর্শক আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিজ্ঞবিচারক মো. আবুল কাশেম এ রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে এসআই আকবরকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তা। পরে শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন।
এর আগে ঘটনার ২৮ দিন পর গত সোমবার সকালে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ। সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তায় তাকে কানাইঘাট থেকে সিলেট পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার। এদিন রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ রায়হান আহমদ নিহতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিষ্কৃত উপ পরিদর্শক আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, এমন খবর জানতে পেরে সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করে ছিলেন উৎসুক জনতা। পরে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের আদালত চত্বরে আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে হাজির করার পর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত জনতা। এ সময় কয়েক শতাধিক মানুষ আকবরের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেয়। তারা আকবরকে দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই, আকবরের ফাঁসি চাই’ বলে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। তবে পুলিশ তৎপর থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
গত সোমবার সকালে আকবরকে আটকের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়- আটককারীদের একজন প্রশ্নের জবাবে আকবর বলছেন- ‘আমাকে সিনিয়র অফিসার বলছিলো তুমি আপাতত পালাইয় যাও। পরে আইসো। দুই মাস পরে মোটামুটি সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। এরপর থেকে প্রশ্ন ওঠেছে, কে সেই সিনিয়র অফিসার যিনি আকবরকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কানাইঘাট থেকে আকবরকে সিলেটে নিয়ে আসার পর গত সোমবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। এসময় ‘সিনিয়র অফিসারের’ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান পুলিশ সুপারের কাছে। জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, আকবর যেসব জায়গায় পালিয়ে ছিলো বলে জানা গেছে সেখানেই যারাই তাদের সহযোগিতা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের কেউ যদি সহযোগিতা করে থাকে তবে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, এটা হবে দুই প্রক্রিয়ায়। একটি হচ্ছে মামলার তদন্তের মাধ্যমে। পিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে। তদন্তে তারা কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাকে আইনের আওতায় আনবে। এছাড়া পুলিশের ইসন্সেপ্টকর জেনারেল (আইজিপি) তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। এই তদন্ত কমিটি যদি রায়হানের পালানোর সাথে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পায় তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শেষে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ওইদিনই পালিয়ে যান আকবর। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যায় আকবর। নোমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও স্থানীয় এক দালাল তাকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেন বলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তরা জানান। তবে প্রথম থেকেই আকবরের পালানোর সাথে সিলেট মহানগর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। রায়হানের পরিবার থেকেও এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পলায়নের ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কেউ জড়িত কি না সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ক্রাইম অ্যানালিসিস) মো. আয়ুবকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটি গত ২৬ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আকবরের পালানোর জন্য মহানগর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়। এদিকে, এই তদন্ত কমিটি সিলেটে এসে তদন্ত কাজ শুরু করার পর গত ২১ অক্টোবর আকবরকে পালানোতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির আরেক এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ২২ অক্টোবর সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়। সিলেটের নতুন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ দায়িত্ব গ্রহণের পর জানিয়েছেন, আকবরের পালানোর সাথে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত নিজেদের ওই ‘সিনিয়র অফিসার’কে খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।
আকবর ছাড়াও এই ঘটনায় পিবিআই এ পর্যন্ত আরও ৩ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন উর রশিদকে দুই দফায় আটদিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে তারা কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হননি। এছাড়া রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১০ অক্টোবর শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে নগরীর কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান। ১১ অক্টোবর রাতেই রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। এর পর থেকেই পুলিশের বহিষ্কৃত উপ পরিদর্শক আকবর হোসেন ভূঁইয়া পলাতক ছিলেন।
Related News
চার মামলায় খালাস পেলেন ‘শিশুবক্তা’ মাদানী
তেজগাঁও, মতিঝিল, পল্টন ও গাজীপুরের গাছা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা পৃথক চার মামলায়Read More
সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় চোরা”ই পণ্যের চালান জব্দ
সিলেট সীমান্ত এলাকা থেকে এযাবৎকালে সবচেয়ে বড় চোরাই পণ্যের চালান জব্দ করেছে টাস্কফোর্স। সোমবার (৫Read More