Main Menu

আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে মিথ্যা নিউজ ও অপ্রপ্রচার : ডা. রুলী

গোলাপগঞ্জের মিছবাহ উদ্দিন হত্যার ঘটনায় তাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা নিউজ ও অপপ্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক স্ত্রী ডা. রুলী বেগম বিনতে রহিম।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার পৌর শহরের মার্ভেলাস টাওয়ারে তাকে নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. রুলী বেগম বিনতে রহিম এমন অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. রুলী বেগম বিনতে রহিম সাংবাদিকদের বলেন- ‘আমি উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের রায়গড় উকড়কান্দি গ্রামের মরহুম আব্দুর রহিমের মেয়ে। গত কয়েকদিন থেকে আমার সাবেক স্বামী মিছবাহ উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে একটি মহল আমাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আসছে। এই মহলটি মূলত তাদের অপরাধ ঢাকতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই অপ্রপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। আমার সাবেক স্বামী মিছবাহ উদ্দিনের সৎ মা রিনা বেগম ও তার ছেলে জাবেদ আহমদ, মেয়ে শাপলা বেগম, ঝিনুক বেগম এবং জাবেদের স্ত্রী ফরিদা বেগম সবাই মিলে মিছবাহ’র পিতা আপ্তাব উদ্দিনকে প্ররোচনা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে সামাজিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে এবং আমার ছেলে ও মেয়েকে মানসিকভাবে বিপর্যস্থ করে মিছবাহ’র মত মেরে ফেলতে চাইছে। আমি আজ উপস্থিত হয়েছি এসবের প্রতিবাদ করার জন্য এবং সত্য কি তা জানানোর জন্য।’

রুলী বেগম বলেন, মিছবাহ ছোট বেলায় তার পিতা তার মাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতেন। এজন্য শেষ পর্যন্ত মিছবাহ’র পিতা আপ্তাব উদ্দিন তার মাকে তালাক দেন। এর পর তিনি নতুন বিয়ে করে সৎ মাকে ঘরে তুলে আনেন। ছোট থেকেই মিছবাহকে সৎ মা কারণে অকারণে নির্যাতন করতেন। মিছবাহ’র সৎ মায়ের ঘরে এক ভাই ও তিন বোন জন্ম গ্রহণ করে। তাদের কাছে মিছবাহ বোঝা ছিল। পরবর্তীতে মিছবাহ’র সাথে আমার বিবাহ হয়। সৎ মা ও ভাই-বোনদের নির্যাতনে আর পিতার শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এক সময় মিছবাহ উদ্দিন মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। এই মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী ছেলেকে দিয়ে তাহারা টাকার জন্য আমাকেও আমার ছেলে মেয়েকে মারধর করাতো। এত নির্যাতন সহ্য করেও আমি তাকে সুস্থ করার জন্য অনেক মানসিক রোগের ডাক্তারকে দেখিয়েছি। যার প্রেসক্রিপশন আমার কাছে আছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে সুস্থ না করতে পেরে এবং তার নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমার ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই তার সাথে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

তিনি আরো বলেন- আমার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবার পর মিছবাহ সৎ মা, ভাই-বোনেরা তাহার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করলে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে অনেক বার আত্মহত্যার চেষ্ঠা করে। যার প্রমাণ আল হারমাইন হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন সময় ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর তারিখে ছাড়পত্রে বিস্তারিত লেখা আছে। মিছবাহ যে মানসিক রোগী তার বিভিন্ন মেডিকেলের কাগজপত্র আপনাদেরকে দিব। এগুলোর কপি অলরেডী আমি কোর্ট, থানা সব জায়গায় দিয়েছি।

ডা. রুলী বেগম আরো বলেন, ‘মিসবাহ ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আসে আর ঠিক পরের দিন মিছবাহ’র পিতা সৎ মায়ের পরামর্শে ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর মিছবাহকে অস্ত্র দিয়ে তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। এবং জেল হাজতে প্রেরণ করেন্ন। যার জিআর মামলা নং ২০৩/২০১৮ ইংরেজি। বর্তমানে মামলাটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নং-২২/২০১৯ যা বর্তমানে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই মামলায় তার বাবা আপ্তাব উদ্দিন সৎ মায়ের ভাইয়ের ছেলেরা জাহাঙ্গীর আলম, শিপু আহমদ ও তাহার চাচা মুক্তার আলি ১৬১ ধারায় মিছবাহ’র বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেন। যার কপি আমি আপনাদেরকে দিব।’

তিনি বলেন, মিছবাহ অসুস্থ থাকায় জেল হাজতে যাবার পর তাকে ওসমানী হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই মামলা থেকে আমিও তার নিজ বোন হাইকোর্ট থেকে জামিন করে নিয়ে আসি। মিছবাহ মারা যাবার দুই মাস আগে আমি জানতে পারি তার সকল বিষয় সম্পত্তি তাহার ছেলে মেয়েদের নামে দিতে চায়। যার জন্য তাহার বাবা, ভাই-বোনদের সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এসব বিষয় নিয়ে তারা মিছবাহ উদ্দিনকে আবারো মারধর করে। এতে সে আরো অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর তার নিজ বোন লিপি তাকে বুঝিয়ে পিতা আপ্তাব আলীর মাধ্যমে ০২ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে সিলেটে মনরোগ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর ১২ জুলাই ২০২২ইং তারিখে পুরোপুরি সুস্থ না করে সৎ মায়ের পরামর্শে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে যে বিভ্রান্তমূলক ভিডিও ছাড়া হয়েছিল সেখানে তার সৎ মা বলেছিলো গত ১৪ জুলাই বাহিরে পাঠিয়েছিল। এই অসুস্থ অবস্থায় উনি কেন মিছবাহকে বাহিরে যেতে দিলেন। এ থেকে প্রশ্ন উঠে মিছবাহকে পরিকল্পিতভাবে বাহিরে পাঠিয়ে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন- আরোও একটি প্রশ্ন রয়ে যায় ১৪ জুলাই বাড়ি থেকে বের হলেও ১৯ জুলাই মিছবাহকে আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। এই পাঁচ দিন মিছবাহ কোথায় ছিল? তিনদিন চিকিৎসাধীন থেকে ২২ জুলাই বিকেলে মিছবাহ মারা গেলেও তার ছেলে মেয়েদেরকে এবং আমাকে তারা কেন খবর দেয়নি? কেন তারা গুরুতর অসুস্থ মিছবাহকে উন্নত চিকিৎসা করায়নি। আর মিছবাহকে কে বা কারা মেরেছে এই স্বীকারোক্তি যদি তার বাবার কাছে দিয়ে থাকে তাহালে উনি কেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ঐ সময় জানাননি ? মিছবাহ’র কথা গুলো কেনই বা কোন মোবইল দিয়ে ভিডিও রেকর্ড করেননি? তাহালে কেন কোন প্রমাণ ছাড়াই তিনি আমাকে দোষী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে আমার মানহানি করছেন।

ডা. রুলী বেগম বলেন- ‘মিছবাহ এর সৎ ভাই জাবেদ আহমদ, লিটন গাজি, আলি রেজা, হোসেন রেজা সংঘবদ্ধভাবে মিছবাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় আমাকে দোষী করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তারা কোন প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের আইডিতে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আসছে। এর মূল হোতা আলি রেজা আমার মেসেঞ্জারে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করেছে। যা দিয়ে দিলে সে আর আমার বিরুদ্ধে এসব প্রচার করবে না। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট আমি বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্পেশাল সাইবার টাইবুন্যালে অপ-প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করি। এছাড়াও আমার মেয়ে আনিকা ফাইজা তার বাবার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যায় জড়িতদের বিচার চেয়ে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করি।’

ডা. রুলী তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তার বিরুদ্ধে অপ-প্রচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মিছবাহ হত্যার জড়িত প্রকৃত খুনীদের বের করে যাতে শাস্তি দেওয়া হয় তিনি প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ডা. রুলীর বড় ভাই শরীফ আহমদ মিন্টু, বড় বোন শিরীন বেগম, ভাই সুবেদ আহমদ রুহেল, মেয়ে আনিকা ফাইজা ও ছেলে মাহাদি আনজুম।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *