Main Menu

প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৭ বছরের পুরনো কিনব্রিজ সংস্কারের উদ্যোগ

দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকার পর অবশেষে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার হবে সুরমা নদীর উপর নির্মিত ৮৭ বছরের পুরনো এই সেতু।

সেতু সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেতুটি সংস্কার করবে রেলওয়ে বিভাগ।

এরআগে বিভিন্ন সময় সুরমা নদীর উপর এই সেতুর সৌন্দর্যবর্ধন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে সেতুটি আরও নড়বড়ে ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে গত বছর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতুটির সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। গত মাসে এই টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সওজ সিলেট অফিস। এ সপ্তাহেই তা রেলপথ বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে।

এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিনব্রিজ যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটির বড়ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এই সেতু সংস্কারের জন্য আমরা প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম। ২ কোটি ৮১ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ পেয়েছি।

তিনি বলেন, এরআগে কিনব্রিজের সংস্কার কাজ রেলওয়ে বিভাগ করেছে। এবারও তারা কাজ করবে। বরাদ্দ পাওয়া টাকা এ সপ্তাহেই রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হবে। তারা দ্রুততম সময়ে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

কিনব্রিজকে ঘিরে এরআগে বিকল্প পরিকল্পনা করেছিলো সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে পড়া এই সেতু দিয়ে সবধরনের যানচলাচল বন্ধ করে পদচারী সেতুতে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো।

সিসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, এটি হবে দেশের দীর্ঘতম পদচারী সেতু। এই উদোগের অংশ হিসেবে সেতুর দুই পাশে লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। তবে স্থানীয়দের আপত্তির মুখে সেই উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়। এসময় সিসিকের পক্ষ থেকে কিনব্রিজ সংস্কারের কথা বলা হলেও কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। দীর্ঘ সংস্কারহীনতায় পুরো সেতুজুড়ে তৈরি হয়েছে খানাখন্দের। এতে যান চলাচলে দেখা দেয় ঝুঁকি। সম্প্রতি পিচ ঢেলে খানাখন্দ ভরাট করলেও জরাজীর্ণ এই সেতুতে যান চলাচলে ঝুঁকি কমেনি।

১৯৩৩ সালে নির্মিত হয় ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৮ ফুট প্রস্থের কিনব্রিজ। এটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৩৬ সালে। ভারতের আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামেই কিনব্রিজ হিসেবে নামকরণ করা হয়।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের আগস্টে ঐতিহ্যের এই সেতুটিকে সংরক্ষণ করতে এই সেতু দিয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে ওই বছরের ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে কিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতুর সামনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিখা সাইনবোর্ড টানানো হয়। শুধুমাত্র পথচারীরা সেতুটি ব্যবহার করার সুযোগ পান।

সিসিক কর্মকর্তারা জানান, সুরমা নদী, কিনব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়িকে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। তাই এই এলাকা আমরা পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিলো। এই অঞ্চলে যান চলাচল কমিয়ে পুরো এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। সিসিকের পরিকল্পনায় সায় দিয়েছিলো সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরও।

তবে কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর সেতুর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের যাতায়াত সুবিধার জন্য এ সেতু দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানান। কিছুদিন পর কিনব্রিজের উভয় প্রবেশপথে লাগানো লোহার বেষ্টনী ভেঙে রিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে প্রায় পুরো বেষ্টনীই গায়েব হয়ে যায়। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষিত এই সেতু দিয়ে এখন চলছে সবধরনের যানবাহনই।

এ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘কিনব্রিজ সড়ক ও জনপথের অধীনে। ফলে আমরা উদ্যোগ নিলেও সংস্কার কাজ সওজকেই করতে হবে। এজন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সমন্বয় সভায় কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। এখন সংস্কারের বিষয়টি সওজই ভালো বলতে পারবে।

ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে অবাধে যান চলাচল প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, লোহার বেষ্টনী লাগিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে কে বা কারা বেষ্টনী ভেঙে দেয়। এতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করতে শুরু করে। কিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করতে দেওয়া হবে কি-না, এ বিষয়ে সংস্কার কাজ শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *