Main Menu

সিলেট সরকারী আলিয়া মাঠে পশুর হাট নিয়ে ইসলামি সংগঠনগুলোর জোর আপত্তি!

সিলেটে করোনা সংক্রমণ রোধে উন্মুক্ত স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। জেলা প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে কাজিরবাজারস্থ স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও আরও তিনটি খোলা জায়গায় পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। এই তিনটি স্থান হচ্ছে-সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠ, সিলেট এমসি কলেজ মাঠ, ও দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকস্থ কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল।

তবে অন্য দুইটি স্থান নিয়ে কোনো কথা উঠেনি। সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে আপত্তি। এতে আপত্তি করেছেন কয়েকটি ইসলামি সংগঠনের। তারা তাদের আপত্তির পক্ষে কয়েকটি যুক্তিও তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সিলেট আনজুমানে খেদমতে কুরআন, মহানগর জমিয়ত এবং সিলেট স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদবিজ্ঞপ্তিও প্রদান করেছে।

আলিয়া মাদরাসা মাঠে গরুর হাট বসানো নিয়ে রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেট-এর সভাপতি প্রফেসর সৈয়দ মাওলানা ইকরামুল হক ও সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা মিফতাহুদ্দীন আহমদ বলেন- ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের বাইরে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা ময়দানকে পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদে আমরা বিস্মিত হয়েছি।

বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে যখন সিলেটসহ সারাদেশ আক্রান্ত ঠিক সেই সময় সিলেট একমাত্র সরকারি করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের সামনে গরুর হাট বসানো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের প্রতির অনুরোধ জানিয়েছেন এবং সিলেটের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার করার দাবি জানিয়েছেন জমিয়ত নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিদাতারা হলেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসান, সহ সভাপতি যথাক্রমে মাওলানা হাফিজ খলিলুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন নবীগঞ্জী, মাওলানা জুবায়ের আহমদ, মাওলানা প্রিন্সিপাল ড. সৈয়দ রেদওয়ান আহমদ, মাওলানা আলতাফুর রহমান, মাওলানা ইকরামুল আজিজ, মাওলানা মাশুক আহমদ সালামী, মাওলানা আব্দুস সালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক সরকার প্রমুখ।

অপরদিকে সিলেট মহানগর জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে ধর্মীয় সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক দলের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জনসভা করেন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকেন। সেখানে গরুর হাট বসানো আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।

কারণ- সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠের সাথে আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেটের অনেক ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আলিয়া মাদরাসা মাঠে প্রতিবছর একাধিক দ্বীনি সংগঠনের উদ্যোগে তাফসিরুল কুরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই ময়দানে সিকি শতাব্দীর চেয়েও বেশি সময় ধরে আনজুমানে খেদমতে কুরআনের উদ্যোগে বছরের দুটি ঈদের জামায়াতও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এছাড়াও সিলেটের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের ইন্তেকাল পরবর্তী জানাযার নামাজও এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মাঠে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের বিশাল মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিক থেকে এই মাঠে গরুর হাট বসানো সিলেটের ঐতিহ্য পরিপন্থী।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে- করোনা মহামারী থেকে সিলেটবাসীর সুরক্ষার স্বার্থে আলিয়া মাঠকে পশুর হাট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। অথচ এই মাঠের পাশেই অবস্থিত সিলেটের একমাত্র সরকারী করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এদিক থেকে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এছাড়া এর পাশেই সিলেটের বেশ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের চেম্বারও রয়েছে। শুধু তাই নয়, সিলেট বিভাগের একমাত্র বৃহৎ সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওসমানী মেডিকেল কলেজে যেতে এই রাস্তাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

তারা আরো বলেন, আলিয়া মাদরাসা ময়দানের উত্তরে হযরত শাহজালাল (র.) দরগা মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং আবাসিক এলাকা রয়েছে। ময়দানের পশ্চিমে দুটি ক্লিনিক, ওসমানী হাসপাতালের ছাত্রাবাস ও ডাক্তার কলোনি রয়েছে। এর পূর্বদিকে ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদ্রাসা ক্যাম্পাস এবং হোস্টেল রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে মাদ্রাসার ভিতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত জন্য এসএমপির পুলিশ সদস্যগণ অবস্থান করছেন। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ একটি ময়দানে কোরবানির পশুর হাট বসানো কোনো অবস্থাতেই ঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি।

আলিয়া মাদরাসা ময়দানের ঐতিহ্য ও পারিপার্শিকক পরিবেশের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে এ স্থানে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *