Main Menu

রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজ টাইগারদের

‘তামিমময়’ ম্যাচের সব আলোই কেড়ে নিলেন ‘খর্ব শক্তির’ জিম্বাবুয়ে দলের ‘আগন্তুকরা’। অনভিজ্ঞ তিরিপানো-মুতুমবদজি-মাধেভেরে-কামুনুকামের অর্ধশতকের সাথে অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজার দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, ৩২৩ রানের টার্গেট অল্পের জন্য ছুঁতে পারেনি তারা। সফরকারীরা হেরেছে ৪ রানে। ম্যাচে ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হয়েই থাকতে হলো ডোনাল্ড তিরিপানোদের। আর রুদ্ধশ্বাস এই জয়ে স্বাগতিকরা ৩ ম্যাচের সিরিজ জিতে নেয় ২-০ তে।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩২২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৫২ রানে মুখ থুবড়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা গেছে তার ঠিক উল্টো চিত্র। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া জিম্বাবুয়ে দলটি এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে তাদের অতীত ফিরিয়ে আনার আভাস দিয়ে রাখলো।
অপরদিকে, এই ম্যাচে টাইগারদের জন্য প্রাপ্তির সংখ্যা ঢের। বলা যায় ‘তামিময়’ রেকর্ডের ম্যাচ। ১৩৬ বল মোকাবেলায় ২০ বাউন্ডারি ও ৩ ওভার বাউন্ডারি হাকিয়ে ১৫৮ রানের ক্যারিয়ার সেরা একটি রোমঞ্চকর ইনিংস খেলেছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম। এটি ছিল বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় বারের মত ১৫০ বা ততোধিক রানের ইনিংস। দুটি সংগ্রহই এসেছে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। এর আগে ২০০৯ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের গড়া ৩১২ রানের টার্গেট টপকে বাংলাদেশ দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১২তম শতক হাকিয়ে ৫০ ওভার ফর্মেটে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া ছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সাত হাজার রান পূর্ণ করেন তামিম। দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ সেঞ্চুরিসহ ৬৩২৩ রানের মালিক বর্তমানে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাকিব আল হাসান।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল মঙ্গলবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামে সফরকারী জিম্বাবুয়ে ও স্বাগতিক দল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। তামিমের অনবদ্য ১৫৮ ও মুশফিকের অর্ধশতকে ভর করে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৩২২ রান সংগ্রহ করে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪র্থ ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ৫ বলে ২ রান করা রেজিস চাকাভাকে লিটনের তালুবন্দি বানিয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন শফিউল। চাকাভার বিদায়ে ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর। অপর ওপেনার কামুনুকামে আর টেইলর মিলে রানের গতি বাড়াতে থাকেন। কিন্তু এ জুটিকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই থামিয়ে দেন মিরাজ। ইনিংসের ১০ম ওভারে দলীয় ৪৪ রানে অসাধারণ এক ফিল্ডিংয়ে টেইলরকে আউট করেন মিরাজ। ১৬তম ওভারে আবারো আঘাত হানেন মিরাজ। এবার বল হাতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে প্যাভিলিয়নে পাঠান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিন উইলিয়ামসকে। ওপর প্রান্তে কামুনুকামে ছিলেন ধীর তবে অবিচল। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে নিজের খেলা খেলছিলেন ঠিকই। ৬৪ বলে তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। কিন্তু বেশী দূর নিয়ে যেতে পারেননি তার ইনিংস। ৭০ বলে ৫১ রান করে তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
১০২ রানে ৪র্থ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ের গল্পটা শুরু হয় তখনই। ক্রিজে তখন অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজার সঙ্গে কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মাধেভেরে। দুজন মিলে রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি দলকে এগিয়ে নেন শক্ত ভিত্তির দিকে। এক পর্যায়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন সিকান্দার রাজা। ৪৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। সেই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান তাইজুল। ৫৭ বলে ৫২ রান করা মাধেভেরেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ড্রেসিং রুমের পথ ধরান বা হতি এই স্পিনার। ক্রিজে নতুন আসা মুতুমবামিকে নিয়ে আবারো রান গড়াপেটার কাজ চালান রাজা। কিন্তু এ জুটি বেশী দূর যেতে পারেনি। আবারো তাইজুলের আঘাতে ভাঙ্গে ৩০ রানের জুটি। লেগ বিফোরে মুতুমবামি ফেরেন ১৭ বলে ১৯ রান করে। বিপদের শঙ্কা জাগানো রাজাকেও ফিরিয়ে টাইগার শিবিরে স্বস্তি এনে দেন অধিরনায়ক মাশরাফি। মাহমুদুল্লাহর তালুবন্দি হওয়া সিকান্দার রাজা ৫৭ বলে করেন ৬৬ রান।
দলীয় ২২৫ রানে রাজার বিদায়ের পর ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন ‘ছোট অথচ রোমাঞ্চকর খন্ড গল্পের লেখক’ হয়ে ওঠা ডোনাল্ড তিরিপানো। তার সাথে ক্রিজে তখন আরেক আগন্তুক উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান রিচমন্ড মুতুমবদজি। জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ৪৮ বলে ৯৮ রান। এর পর শুরু হয় রোমাঞ্চকর ছোটগল্পের। একে একে শফিউল-আল আমীন-মাশরাফিদের ওভারে ঝড় তুলেন এ দুজন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আক্রমনাত্মক ছিলেন তিরিপানো। এই জুটি মাত্র ২৮ বলে ৫৩ রান তুলেন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ২০ রান। আল আমীনের করা ওভারের প্রথম বলে তিরিপানো নেন এক রান। দ্বিতীয় বলটি ওয়াইডের কারনে অতিরিক্ত রান পায় জিম্বাবুয়ে। পরের বলে সীমানায় লিটনের হাতে ধরা পড়েন ২১ বলে ৩৪ রান করা মুতুমবদজি। জয়ের জন্য ৪ বলে ১৮ রানের সমীকরণে দাঁড়ানো তখন জিম্বাবুয়ে। পর পর ২ বলে ২ ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করার পাশপাশি জয়েল সমীকরণকে নিয়ে আসেন খুব কাছে। ২ বলে তখন প্রয়োজন ছিল রান। আল আমীনের চৌকসতায় বাউন্সার বলটি ব্যাটে স্পর্শ করাতে পারেননি তিরিপানো। ফলে সমীকরন ‘ডু অর ডাই’, এক বলে ছয় রান। কিন্তু শেষ বলে মাত্র এক রানের বেশী নিতে পারেননি ‘ট্র্যাজিক হিরো’ তিরিপানো। ৮ উইকেটে ৩১৮ রানে থামে তাদের ইনিংস। ফলে ৪ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। টাইগারদের হয়ে তাইজুল ৩টি এবং মাশরাফি-শফিউল-মিরাজ-আল আমীন একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে বেলা ১ টায় শুরু হওয়া ম্যাচে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক খেলতে থাকেন তামিম। তবে ৭ম ওভারে দলীয় ৩৮ রানে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন রান আউট হয়ে ফিরে যান ব্যক্তিগত ৯ রানে। কার্ল মুম্বার করা সপ্তাম ওভারের তৃতীয় বলটি সোজা ব্যাটে খেলেন তামিম। ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল মুম্বার হাতে লেগে নন স্ট্রাইকের স্ট্যাম্পে লাগে। ভাগ্যের অসহায়ত্বে ফিরে যান লিটন দাস। দলীয় ৬৫ রানে রান আউটে কাটা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত (৬)। একাদশতম ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরের করা দ্বিতীয় বলটি শান্তর প্যাডে লেগে শর্ট ফাইন লেগে চলে যায়। শান্ত-তামিমের ভুল বোঝাবুঝিতে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় শান্তকে। ২ উইকেট পতনের পরও রানের চাকা ঠিকই সচল রেখেছিলেন তামিম। ৪২ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। ‘হাফ ল্যান্ডমার্ক’ পার হওয়ার পর কিছুটা মন্থর হয়ে পড়েন তামিম। ক্রিজে থাকা অপর ব্যাটসম্যান মুশফিক নেন দায়িত্ব। ওয়েসলি মাধেভেরের বলে মুতুমবদজির তালুবন্দি হওয়ার আগে মুশফিক খেলেন ৫০ বলে ৫৫ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। এরপর তামিম ও রিয়াদ মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১০৬ রান যোগ করেন। দলীয় ২৫৮ রানে রিয়াদ ৫৭ বলে ৪১ রান করে বিদায় নেন। তামিম তখনও ব্যাট চালাচ্ছিলেন নিজের মতো করে। এক সময়ে ‘ডাবল সেঞ্চুরি’র আশা জাগান দেশসেরা এই ওপেনার। কিন্তু ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৮ রানেই থামতে হয় তাকে। মুম্বার বলে প্যাভিলিয়নে ফিরলে ভাঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন। শেষ দিকে মিথুন ১৮ বলে ৩২ রান করলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ৩২২। জিম্বাবুয়ের কার্ল মুম্বা, ও ডোনাল্ড তিরিপানো দুটি করে এবং অভিষিক্ত চার্লটন তিসুমা ও ওয়েসলি মাধেভেরে একটি করে উইকেট লাভ করেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *