ভালোবাসার দিনেও ভালোবাসাবঞ্চিত
মোহাম্মদ ছাব্বিরের বয়স ১০ কি ১১। মা-বাবা নেই। বড় হয়েছে কখনো টঙ্গী, কখনো এয়ারপোর্ট, কখনো–বা কমলাপুর রেলস্টেশনে থেকে, খেয়ে না খেয়ে। এই বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, মা-বাবার আদর বা ভালোবাসার ছায়াতলে থেকে খেলে বেড়ানোর কথা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সে এখন রেলস্টেশনের হকার। জীবন চলে পানি বেচে।
একই দশা ১১ বছর বয়সী মো. বিজয়ের। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। চার ভাইবোনের সংসারে সে–ই সবার বড়। বাবা ভ্যানগাড়ির চালক। একা সংসার চালাতে পারেন না। সংসারের হাল ধরতে সাত বছর বয়সেই তাকে পাঠানো হয় রাজধানীতে। এরপর ঠাঁই হয় জয়দেবপুর রেলস্টেশনে। সেখানেই থাকছে গত চার বছর। তারও পরিচয় হকার। আদর-ভালোবাসা বা কোনো শখ-আহ্লাদ এই ছোট্ট জীবনে নেই বললেই চলে।
ছাব্বির, বিজয়ের মতো এমন অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুর দেখা মেলে গাজীপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায়। বিশেষ করে রেলস্টেশন বা বাসস্টেশনগুলোতে এদের দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। যে বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা বা বন্ধুদের সঙ্গে খেলার কথা, সে বয়সে তারা হয়েছে পথশিশু। জীবনের তাগিদে বা ভাগ্যক্রমে ঘুরছে স্টেশনে স্টেশনে, এখান থেকে সেখানে। তাদের প্রতি নেইকোনো ধরনের আদর, মমতা বা ভালোবাসা। জীবন কাটছে তাদের পথে পথে, অবহেলায়।
গতকাল শুক্রবার দিনটি ছিল বসন্তের প্রথম দিন পয়লা ফাল্গুন। এবার একই দিনে পড়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে বাসন্তী রং, আর ভালোবাসা দিবসের লাল রঙে সেজেছিল পুরো নগর। দিনভর তরুণ-তরুণীদের উচ্ছ্বাস দেখা যায় পথে-ঘাটে। শুধু তাই নয়, মা-বাবা, ভাইবোন, বন্ধুদের মধ্যেও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে মানুষজন। কিন্তু এসব রং বা ভালোবাসার কোনো ছোঁয়াই লাগেনি সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর জীবনে। ভালোবাসা দিবসেও তাদের জন্য জানায়নি কেউ ভালোবাসা, আদর-সোহাগ।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। এখানেই কাটে তাদের প্রতিদিনকার জীবন। গতকাল সকালে গাজীপুরের টঙ্গী রেলস্টেশনে। ছবি: প্রথম আলোগতকাল সকালে টঙ্গী রেলস্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দেখা মেলে এমন ১৫–২০টি শিশুর। তাদের কেউ হকার, কেউ দিনমজুর, কেউ–বা করে ভিক্ষা। সবাই দল বেঁধে বসে আছে একটি দোকানের সামনে। কেউ মেঝেতে, কেউবা দাঁড়িয়ে আছে খুঁটিতে হেলান দিয়ে। কথা হয় ছাব্বির ও জীবনের সঙ্গে। ছাব্বির জানায়, সে তার মা-বাবাকে দেখেনি। জন্মের পর কিছুদিন ছিল এক খালার বাসায়। পরে তাকে রেখে যাওয়া হয় টঙ্গী রেলস্টেশনে। পরে সেখানে থেকেই বড় হয় সে। আর জীবন বলে, মা, বাবা বা ভাইবোনের আদর কেমন সে জানে না। স্টেশনেরও কেউ তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। মাঝেমধ্যেই লোকে তাদের তাড়িয়ে দেয় বা গালমন্দ-মারধর করে।
দুপুরে জয়দেবপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা হয় বিজয়ের সঙ্গে। তার মাথা, গাল ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। ছাব্বির জানায়, বিভিন্ন সময় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে বা পুলিশ ও অন্যদের মার খেয়ে এসব ক্ষত হয়েছে। তা ছাড়া স্টেশনে অনেকেই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। সে জানায়, তিন মাস পরপর একদিন বাড়ি গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে। অতটুকুই তার আনন্দ।
রিপোর্ট দৈনিক প্রথম আলো থেকে সংগৃহীতঃ
Related News
জাতীয় অ্যামেচার রেডিও ফিল্ড ডে ২০২৫ সম্পন্ন: আরাব যে কোন দুর্যোগকালীন সময় বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে করে থাকে, ড. মির শাহ আলম
অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ARAB)-এর উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় অ্যামেচার রেডিওRead More
সাংগঠনিক দক্ষতা ও সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আকবর আলীকে সাউথ এশিয়ান এক্সিলেন্স এর অ্যাওয়ার্ড প্রদান
সাংগঠনিক দক্ষতা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃRead More

