২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা
দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১১ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৫৫ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এ পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৯৬ জন।
করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৫২৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৬২০ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৯০৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৬ হাজার ১৪৯ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ২৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ২০১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৪৬৩ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৩ হাজার ৯৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৩৮ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার ৩০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ২০১ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৬৪ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ২৩৭ জনের নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬৯টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৫ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৮৮ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২৫৭ জনের বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৬৫৭ জন; যা শতকরা ৭৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং নারী ৪৩৯ জন; যা শতকরা ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।অঞ্চল বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন, সিলেটে ৩ জন, রংপুরে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৫ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪৯টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৭৫টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৪০১টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৮৫টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ২০৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১০৬টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪৪৯ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২২০ জন এবং ২৪ ঘন্টায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৭১৫ জন, ছাড় পেয়েছেন ৬৪৪ জন।
তিনি বলেন, আইসিইউতে বেড খালি থাকলেও চিকিৎসাগত কারণে এক বিভাগের রোগীকে অন্য বিভাগের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া যায় না, যার কারণে অনেক বিভাগে আইসিইউতে বেড খালি থাকে।
তিনি জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে বেড সংখ্যা প্রত্যেক বিভাগ অনুযায়ী ভাগ করা আছে। যেমন মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনি বিভাগের জন্য এবং অন্যান্য বিভাগের জন্য। অনেক সময় মেডিসিন বিভাগের রোগী বেশি থাকলেও অন্যান্য বিভাগে যেমন সার্জারি ও গাইনি বিভাগের আইসিইউ’র বেড় খালি থাকলেও সেখানে দেয়া যায় না। কারণ সার্জারি ও গাইনি বিভাগের রোগীদের জন্য যে আইসিইউ ব্যবস্থা, সেখানে অনেক সময় অপারেশনের রোগী থাকে। সেজন্য মেডিসিন আইসিইউ বিভাগের চাহিদা থাকলেও গাইনি ও সার্জারি বিভাগের আইসিউ থাকলেও চিকিৎসাগত কারণে রোগী দেয়া যায় না। সেজন্য আইসিইউ’র শয্যা খালি থাকলেও সেখানে রোগী দেয়া যায় না।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৭৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ হাজার ৭৯৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৯৮ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৪ হাজার ৭৫৫ জন। এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশন করা হয়েছে ৩১ হাজার ৫৪৯ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ১৭৮ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৭০ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৮৩৯ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৮০১ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৬শ’টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৪ লাখ ২১ হাজার ৭৬৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৮১টি পিপিই মজুদ রয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস মজুদ আছে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৩টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক মজুদ আছে ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৭০৬টি, পিপিই ১১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৭টি এবং গগলস ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৯১২টি।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬০ হাজার ১৭৮টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ ৭ হাজার ৪৫৪টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪১৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৭১০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৮৫৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ১৮ হাজার ৫৯১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৯৯ জন এবং এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৪৭৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩ হাজার ৮৩৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার ২৪৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ১৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ২৮ হাজার ২০৪ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।
সৌজন্যেঃ বাসস
Related News
আমি নিজেকে রংপুরের সন্তান মনে করি : ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের বীরত্ব এবং আত্মত্যাগ আমাকেRead More
সমন্বয়কদের বৈঠক শেষে হাসনাত: উপদেষ্টা নিয়োগে অবশ্যই ছাত্রদের মতামত নিতে হবে
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফসল হলো অন্তর্বর্তী সরকার। তাইRead More